ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
নবী (সা.) এর ছলাত সম্পাদনের পদ্ধতি সালাত বিষয়ে বিস্তারিত মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দিন আলবানী (রহ.)
أذکار السجود সাজদার যিকরসমূহ

নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এই রুকন আদায় করা কালে বিভিন্ন ধরনের যিকর ও দু'আ পাঠ করতেন, যার মধ্যে একেক সময় তিনি একেকটা অবলম্বন করতেন। যথা-

১।

سُبْحَانَ رَبِّيَ الأَعْلَى

অর্থঃ আমি আমার সুউচ্চ প্রতিপালকের পবিত্রতা বর্ণনা করছি।

এ দু'আটি তিনবার পড়তেন।[1] কখনো তিনি এর অধিকবার দু'আটি আওড়াতেন[2] এক পর্যায়ে তিনি রাত্রিকালীন নফল ছালাতে এত বেশী পরিমাণ দুআটি পাঠ করেন যার ফলে তাঁর সাজদা প্রায় দাঁড়ানোর পরিমাণ দীর্ঘায়িত হয়েছিল অথচ ঐ দাঁড়ানোতে তিনি তিনটি দীর্ঘ সূরা পাঠ করেছিলেন সেগুলো হচ্ছে বাকারা', 'নিসা’ ‘আলে-ইমরান’ যার ভিতর দু'আ ও ইসতিগফারাও ছিল। যেমনটি “রাত্রিকালীন ছালাতে” অতিক্রান্ত হয়েছে।

২।

سُبْحَانَ رَبِّيَ الأَعْلَى وَبِحَمْدِهِ

অর্থঃ সর্বাধিক সমুন্নত স্বীয় প্রভুর প্রশংসাসহ পবিত্রতা জ্ঞাপন করছি। এই দুআ তিনি তিনবার পাঠ করতেন।[3]

৩।

سُبُّوحٌ قُدُّوسٌ رَبُّ الْمَلائِكَةِ وَالرُّوحِ

অর্থঃ সকল ফিরিশতা ও জিবরীল (আলাইহিস সালাম) এর প্রভু অতি বরকতময়, পবিত্র।[4]

৪।

سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي

হে আমার উপাস্য আমি তোমার প্রশংসাসহ পর্বত্রতা জ্ঞাপন করছি, হে আমার উপাস্য! তুমি আমাকে ক্ষমা কর।” তিনি কুরআনের উপর আমল করতঃ রুকু ও সাজদাতে এ দু'আটি বেশী বেশী করে পড়তেন।[5]

নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ দু'আটি রুকু ও সাজদাহতে বেশী বেশী পড়তেন (এর দ্বারা) কুরআন এর মর্ম বাস্তবায়ন করতেন।

৫।

اللَّهُمَّ لَكَ سَجَدْتُ ، وَبِكَ آمَنْتُ ، وَلَكَ أَسْلَمْتُ ، سَجَدَ وَجْهِي لِلَّذِي خَلَقَهُ ، وَصَوَّرَهُ فَأَحْسَنَ صُورَتَهُ وَشَقَّ سَمْعَهُ وَبَصَرَهُ ، فَتَبَارَكَ اللَّهُ أَحْسَنُ الْخَالِقِينَ

অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি তোমার উদ্দেশে সাজদা করলাম এবং তোমার উপরে ঈমান আনলাম এবং তোমার বশ্যতা স্বীকার করলাম, তুমি আমার প্রতিপালক। আমার মুখমণ্ডল সেই যাতকে সাজদাহ করল যিনি তাকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে সুন্দর আকৃতি দান করেছেন এবং তিনি তাতে চক্ষু-কর্ণ সৃষ্টি করেছেন। বস্তুতঃ আল্লাহ বরকতময় সর্বোত্তম স্রষ্টা।[6]

৬।

اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ذَنْبِي كُلَّهُ دِقَّهُ وَجِلَّهُ وَأَوَّلَهُ وَآخِرَهُ وَعَلَانِيَتَهُ وَسِرَّهُ

অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমি আমার সব গুনাহ ক্ষমা করে দাও, ক্ষমা করে দাও ছোট, বড়, পূর্বের, পরের, প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সব গুনাহ।[7]


৭।

سَجَدَ لَكَ سَوَادِي ، وَخَيَالِي ، وَآمَنَ بِكَ فُؤَادِي أبوءُ بِنِعْمَتِكَ عليَّ هَذِّى وَمَا جَنَيْتُ عَلٰى نَفْسِي

অর্থঃ হে আল্লাহ! তোমার উদ্দেশে আমার অন্তর ও মস্তিষ্ক সাজদাহ করল, তোমার উপর আমার হৃদয় ঈমান আনয়ন করল, আমি আমার উপরে তোমার প্রদত্ত নিয়ামতের স্বীকারোক্তি জানাচ্ছি, আমার এ দু'হাতের কামাই ও স্বীয় সত্ত্বার উপর কৃত অন্যায় কর্মও স্বীকার করে নিচ্ছি।[8]

৮।

سُبْحَانَ ذِي الجَبَرُوتِ وَالمَلَكُوتِ وَالكِبْرِيَاءِ وَالعَظَمَةِ

অর্থঃ (এই দু'আর অর্থ রুকুতে অতিবাহিত হয়েছে) এটি ও এর পরবর্তী দু'আগুলো তিনি রাত্রিকালীন নফল ছালাতে পাঠ করতেন।[9]

৯।

سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ

অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি তোমার প্রশংসাসহ পবিত্ৰতা জ্ঞাপন করছি, তুমি ব্যতীত প্রকৃত কোন মা’বুদ নেই।[10]

১০।

اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي مَا أَسْرَرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ

অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমি আমার গোপনে ও প্রকাশ্যে কৃত অপরাধ ক্ষমা কর।[11]

১১।

اللَّهُمَّ اجْعَلْ فِي قَلْبِي نُورًا (وَفِي لِسَانِي نُورًا) وَاجْعَلْ فِي سَمْعِي نُورًا وَاجْعَلْ فِي بَصَرِي نُورًا وَاجْعَلْ مِنْ تَحْتِي نُورًا وَاجْعَلْ مِنْ فَوْقِي نُورًا وَعَن يَّمِيْنِى نُوْراً وَعَن يَّسَارِي نُوْراً وَاجْعَلْ أَمَامِي نُورًا وَاجْعَلْ مِنْ خَلْفِي نُورًا وَاجْعَلْ فِى نَفْسِى نُورًا وَأَعْطِمْ لِيْ نُورًا

অর্থঃ হে আল্লাহ তুমি আমার অন্তরে, জিহ্বায়, কানে, চোখে, নীচে-উপরে, ডানে-বামে, সামনে-পিছনে এবং স্বয়ং আমার সত্ত্বায় নূর দান কর। আমাকে এসবে বিপুল পরিমাণ নূর দান কর।[12]

১২।

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِرِضَاكَ مِنْ سَخَطِكَ وَأَعُوذُ بِمُعَافَاتِكَ مِنْ عُقُوبَتِكَ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْكَ لاَ أُحْصِي ثَنَاءً عَلَيْكَ أَنْتَ كَمَا أَثْنَيْتَ عَلَى نَفْسِكَ

অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি তোমার সন্তুষ্টির মাধ্যমে তোমার অসন্তুষ্টি থেকে আশ্রয় চাচ্ছি, তোমার ক্ষমা গুণের মাধ্যমে তোমার শাস্তি থেকে আশ্রয় চাচ্ছি, তোমার অসীলায় তোমার পাকড়াও থেকে আশ্রয় চাচ্ছি, আমি তোমার প্রশংসা করে শেষ করতে পারব না। তুমি ঐরূপ যেমন তুমি নিজে প্রশংসা করেছি।[13]

[1] আহমাদ, আবু দাউদ, ইবনু মাজাহ, দারাকুতনী, ত্বাহাবী, বাযযার, ত্বাবরানী, “আল কাবীর” গ্রন্থে সাতজন ছাহাবী থেকে। রুকুর যিকর (পৃষ্ঠা- ১১৫-১১৬) এর টীকা দ্রষ্টব্য।

[2] প্রাগুক্ত।

[3] ছহীহ, আবু দাউদ, দারাকুতনী, আহমাদ, ত্বাবরানী ও বাইহাকী।

[4] মুসলিম ও আবু উওয়ানাহ।

[5] বুখারী ও মুসলিম, এটি রুকুর যিকরসমূহেরও অন্তর্ভুক্ত, পূর্বেও উল্লেখ করা হয়েছে যে, এতে কুরআনে উল্লেখিত নির্দেশের উপর আমল করতেন।

[6] মুসলিম, আবু উওয়ানাহ, ত্বাহাবী ও দারাকুতনী।

[7] মুসলিম ও আবু উওয়ানাহ।

[8] ইবনু নছর, বাযযার, হাকিম এবং তিনি একে ছহীহ বলেছেন। কিন্তু যাহাবী তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। তবে উক্ত হাদীছের পক্ষে বহু সাক্ষ্য বর্ণনা মূল কিতাবে রয়েছে। (অতএব হাদীছ গ্রহণযোগ্য)।

[9] ছহীহ সনদে আবু দাউদ, নাসাঈ, রুকুর অধ্যায়ে এর ব্যাখ্যা উল্লেখ হয়েছে।

[10] মুসলিম, আবু উওয়ানা, নাসাঈ ও ইবনু নাছর।

[11] ইবনু আবী শাইবাহ (৬২/১১২/১) ও নাসাঈ। হাকিম একে ছহীহ বলেছেন ও যাহাবী এতে ঐকমত্য পোষণ করেছেন।

[12] মুসলিম, আবু উওয়ানাহ, ইবনু আবী শাইবা “আল-মুছান্নাফ' (১২/১০৬/২/ ও ১১২/১)।

[13] মুসলিম, আবু উওয়ানাহ্, ইবনু আবী শাইবা “আল-মুছান্নাফ” (১২/১০৬/২ ও ১১২/১)।