أَلْهَاكُمُ التَّكَاثُرُ
প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা তোমাদেরকে মোহাচ্ছন্ন করে রেখেছে। (১০২-সূরা আত তাকাছুরঃ আয়াত-১)
একবার মোটা অংকের টাকা পাওয়ার পর, যতদূর সম্ভব সব কিতাবের এক কপি করে ক্রয় করার আশায় বইয়ের দোকানে (লাইব্রেরিতে) ছুটলাম, মুহুর্তের উদ্দীপনা আমাকে পরাভূত করে ফেলেছিল। বিভিন্ন জ্ঞান-বিজ্ঞানের বই দিয়ে আমি আমার ঘরের দেয়ালের তাকগুলো ভরে ফেললাম। ইসলামী আইনশাস্ত্র, সমাজ বিজ্ঞান ও সাধারণজ্ঞান বিষয়ক বই-পুস্তক ছিল। আমি পড়া শুরু করতে চাইলাম, কিন্তু, আমি বুঝতে পারলাম না যে, কোথা থেকে শুরু করব। আমি দেখলাম যে, একই জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন পুস্তক একে অপরকে ছাপিয়ে যেতে চায়। কিছু পুস্তক পেলাম যেগুলোর গুরুত্ব কম।
কতিপয় বিখ্যাত আলেমের সাথে আমি পরামর্শ করে তাদেরকে জিজ্ঞেস করলাম কীভাবে আমার পড়াশুনা করা উচিত। তারা আমাকে এমন পথ বাতলিয়ে দিলেন যা সফল প্রমাণিত হয়েছিল। তারা আমাকে পরামর্শ দিলেন যাতে আমি ইসলামী জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখার প্রধান প্রধান রেফারেন্স কিতাবগুলোই গভীরভাবে অধ্যায়ন করি। তারা বললেন, অন্যান্য কিতাবগুলোকে আলাদাভাবে রেখে দিতে। তবে যখন কোন নির্দিষ্ট বিষয়ে গবেষণার জন্য অনেক কিতাবের দরকার হয় তখন সেগুলো পড়তে হবে। এর ফলাফল দেখে আমি ভারি খুশি হয়ে গেলাম। আমি তাদের সরল অথচ যুক্তিযুক্ত উপদেশ অনুসরণ করতে অধিকতর গোছালো ও স্বস্তি অনুভব করলাম।
أَلْهَاكُمُ التَّكَاثُرُ - حَتَّىٰ زُرْتُمُ الْمَقَابِرَ
“প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা তোমাদেরকে মোহাচ্ছন্ন করে রেখেছে, এমনকি তোমরা (এ অবস্থায়) কবর পরিদর্শন করছ।” (১০২-সূরা আত তাকাছুরঃ আয়াত-১-২)
(অর্থাৎ তোমরা আমৃত্যু বা মরণ পর্যন্ত পার্থিব সম্পদের মোহে আচ্ছন্ন হয়ে আছ ও পরকাল থেকে বিমুখ হয়ে আছ বা পরকালকে ভুলে আছ।)
কিছু ছাত্র আছে যারা বিরল পাণ্ডুলিপির জন্য ভীষণ খোজা-খুঁজি করে, তারা সর্বদাই বিরল পুস্তকাদি সংগ্রহ করে, তবুও আপনি তাদের অধিকাংশকেই দেখতে পাবেন যে, ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ রেফারেন্স বইসমূহও তারা পুরাপুরিভাবে পড়েনি। আমি এক লোককে চিনি যিনি মুক্বাতিল ইবনে সুলাইমানের তফসীর সংগ্রহ করতে পারেননি বিধায় অসন্তুষ্ট, অথচ তিনি ইবনে কাছীরের তফসীর পুরাপুরি পড়েননি।
“আর তাদের মাঝে (ইহুদীদের মাঝে) এমন কিছু নিরক্ষর লোক আছে কিতাব সম্বন্ধে যাদের কোন জ্ঞান নেই, তারা শুধু মিথ্যা আশা করে ও ধারণা করে।” (২-সূরা বাকারাঃ আয়াত-৭৮)
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যখন প্রথমে বিবেচনা করা উচিত তখন কখনও ছোটখাট বিষয়ের পিছনে লাগবেন না। যে ব্যক্তি তার উদ্দেশ্য জানে না তাকে দীর্ঘ ও ক্লান্তিকর সফর করতে হবে-যা কোথাও শেষ হবে না।