১৪০০ হিজরীতে ইয়েমেনের সীমান্তের নিকটে ইসলাম প্রচারের জন্য আমি একটি প্রচারাভিযানে যোগ দিলাম। আমার একজন অধ্যাপকের সাথে আবহাতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে আমরা যে তাবুতে ছিলাম তা সাময়িকভাবে ছেড়ে বের হয়ে পড়লাম। ফিরার পথে আমি মানসিকভাবে বিচলিত ছিলাম, কারণ, তিনি তার গাড়িকে অতি দ্রুত গতিতে চালাচ্ছিলেন। গতি কমানোর জন্য আমি তাকে সনির্বন্ধ অনুরোধ করলাম, কিন্তু মনে হলো এটা যেন তাকে আরো দ্রুত গতিতে চালাতে তাড়না দিল। সে রাতে বৃষ্টি হচ্ছিল, তবুও তিনি অনবরত বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। পানিতে ভরে যাচ্ছিল এমন এক উপত্যকায় এসে আমরা পৌছলাম।
প্রথমে পানি আমাদের গাড়ির চাকার কিছুটা উপরে পৌছল। যখন আমরা উপত্যকার মাঝামাঝি পৌঁছলাম তখন অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গেল, কেননা আমাদের গাড়ির ভিতরে প্রবাহিত হয়ে পানি প্রবেশ করতে লাগল। আমরা গাড়ি ছেড়ে অতি কষ্টে উপত্যকার কিনারে যেতে পারলাম। আমরা সেখানে সারারাত খাদ্য-পানীয় এবং সবচেয়ে বড় কথা কম্বল ছাড়া (কেননা আমরা ভিজে গিয়ে শীতে কাপছিলাম, তাই কম্বলের দরকার ছিল) আটকা পড়ে ছিলাম। তবুও আমরা সন্তুষ্ট ও কৃতজ্ঞ ছিলাম। কেননা, বন্যা যখন আমাদেরকে পরাভূত করে ফেলেছিল তখন আমরা মৃত্যুর আশংকা করেছিলাম আর তাই শুধুমাত্র জীবিত থাকার কারণেই আমরা কৃতজ্ঞ ছিলাম।
খুব সকালে এক লোক এসে আমাদেরকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে গেল। এ ঘটনার দ্বারা আমার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে সংঘটিত এক গল্পের কথা মনে পড়ে গেল। একটি ক্ষেপণাস্ত্র একটি আমেরিকান জাহাজকে আঘাত হানল তাই এটি ডুবে যেতে লাগল। ক্যাপ্টেন তের দিন শুধুমাত্র রুটি ও পানি খেয়ে অসহায় অবস্থায় ছিলেন। পরবর্তীতে তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, তিনি তার এই অভিজ্ঞতা থেকে কি শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেছিলেন, “এ অভিজ্ঞতা থেকে আমি গুরুত্বপূর্ণ যে শিক্ষা গ্রহণ করেছি তা হলো যদি কোন লোক সুস্থ থাকে এবং তার খাদ্য ও পানীয় থাকে তবে গোটা দুনিয়াটাই তার।”
সুস্থ শরীর, মনের শান্তি, খাদ্য ও পানীয় এবং পরিধেয় বস্ত্র ছাড়া দুনিয়াটা আর কি-ই-বা? আমরা কেন হিসেব করে দেখিনা যে, আমাদের কি আছে আর কী নেই? আমি মনে করি যে, (হিসেব করলে) আমরা দেখতে পাব যে, জীবনের শান্তিদায়ক জিনিসের শতকরা আশি ভাগেরও বেশি জিনিস আমাদের আছে। একথা বলা নিম্প্রয়োজন যে, গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নেই এমন ব্যতীক্রমধর্মী লোকের ঘটনাও আছে, কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমরা সেসব শান্তির জন্য কাঁদি যা না থাকার কারণ হলো আমাদের না হাসা (গোমড়ামুখী হয়ে থাকা) এবং আমাদের যা আছে তার জন্য কৃতজ্ঞ না হওয়া (অকৃতজ্ঞ হওয়া)। (অর্থাৎ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমাদের অশান্তির মূল কারণ হলো আমাদের অকৃতজ্ঞতা ও আমাদের বেজারভাব, অর্থাৎ আমাদের এ অশান্তি প্রকৃত অশান্তি নয়, কৃত্রিম; যার কারণ হলো অকৃতজ্ঞতা ও গোমড়ামুখী হয়ে থাকা-অনুবাদক।) যখন আমরা বিপদগ্ৰস্ত থাকি তখন আমরা দুঃখিত থাকি আর যখন সব কিছু ভালো থাকে তখন আমরা অকৃতজ্ঞ থাকি।