ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম সালাত শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ)
(২৫৩) জালসা ইস্তেরাহা করার বিধান কি?

এ মাসআলাটিতে বিদ্বানদের তিন ধরণের মতামত পাওয়া যায়।

প্রথমঃ জালসা ইস্তেরাহা করা সবসময় মুস্তাহাব।

দ্বিতীয়ঃ জালসা ইস্তেরাহা করা কখনই মুস্তাহাব নয়।

তৃতীয়ঃ উল্লেখিত দু’টি মতের মধ্যপন্থী মত। সরাসরি দাঁড়াতে যাদের কষ্ট হয় তারা জালসা ইস্তেরাহা করবে। আর যাদের কষ্ট হয় না তারা জালসা ইস্তেরাহা করবে না।

মুগনী গ্রন্থে (১/৫২৯ দারুল মানার প্রকাশনী) বলা হয়েছেঃ “এই তৃতীয় মতটি দ্বারা হাদীছ সমূহের মাঝে সামঞ্জস্য বিধান করা হয়েছে এবং তা হচ্ছে দু’টি মতের মধ্যপন্থী মত।” অতঃপর পরবর্তী পৃষ্ঠায় বলা হয়েছেঃ ‘আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ফরয নামাযে সুন্নাত হচ্ছে, কোন ব্যক্তি যখন প্রথম দু’রাকাআত শেষ করে উঠবে, তখন দু’হাত দিয়ে মাটিতে ভর করে যেন না উঠে। তবে যদি অতিবৃদ্ধ ব্যক্তি অনুরূপ করতে সক্ষম না হয়, তবে সে হাত দ্বারা মাটিতে ভর করে উঠতে পারে। (হাদীছটি আছরাম বর্ণনা করেন।) এরপর মুগনী গ্রন'কার বলেন, মালেক বিন হুওয়াইরিছ (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে বলা হয়েছে,

إِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ عَنِ السَّجْدَةِ الثَّانِيَةِ جَلَسَ وَاعْتَمَدَ عَلَى الْأَرْضِ ثُمَّ قَامَ

“নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন দ্বিতীয় সিজদা থেকে মাথা উঠাতেন, সোজা হয়ে বসতেন, তারপর যমীনের উপর ভর দিয়ে দাঁড়াতেন।”

এ হাদীছটি হচ্ছে সেই সময়ের কথা যখন নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুর্বল ও বৃদ্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে সরাসরি দাঁড়াতে তাঁর কষ্ট হচ্ছিল। কেননা তিনি বলেন, “আমার শরীর ভারী হয়ে গেছে। তাই তোমরা রুকূ সিজদায় আমার আগ বেড়ে কিছু করো না।”

এই তৃতীয় মতকে আমি সমর্থন করি। কেননা মালেক বিন হুওয়াইরিছ (রাঃ) এমন সময় নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর নিকট আগমণ করেন যখন তিনি তাবুক যুদ্ধের প্রস্ততি গ্রহণ করছিলেন। আর সে সময় নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বৃদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন এবং তাঁর দুর্বলতা সুস্পষ্ট হচ্ছিল। ছহীহ্‌ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে। আয়েশা (রাঃ) বলেন,

لَمَّا بَدَّنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَثَقُلَ كَانَ أَكْثَرُ صَلَاتِهِ جَالِسًا

‘নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর শরীর মোবারক যখন মোটা ও ভারী হয়ে গিয়েছিল, তখন অধিকাংশ নামায তিনি বসে বসে আদায় করতেন।’ আবদুল্লাহ্‌ বিন শাক্বীক্ব (রাঃ) আয়েশা (রাঃ)কে প্রশ্ন করলেন, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি বসে বসে নামায আদায় করতেন? তিনি বললেন, نَعَمْ بَعْدَ مَا حَطَمَهُ النَّاسُ ‘হ্যাঁ, যখন তিনি বয়োবৃদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন।’ হাফছা (রাঃ) বলেন,

مَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَّى فِي سُبْحَتِهِ قَاعِدًا حَتَّى كَانَ قَبْلَ وَفَاتِهِ بِعَامٍ فَكَانَ يُصَلِّي فِي سُبْحَتِهِ قَاعِدًا

“আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে কখনো বসে নফল নামায আদায় করতে দেখিনি। তবে মৃত্যুর এক বছর পূর্বে থেকে তিনি বসে নফল নামায আদায় করেছেন।” অপর বর্ণনায় ‘একবছর বা দু’বছর পূর্বে থেকে।’ এ বর্ণনাগুলো সবই ছহীহ্‌ মুসলিমে রয়েছে। একথার সমর্থন পাওয়া যায় মালিক বিন হুওয়াইরিছ বর্ণিত হাদীছে, যাতে মাটিতে ভর করে দাঁড়ানোর কথা উল্লেখ রয়েছে। আর সাধারণতঃ প্রয়োজন ছাড়া কোন বস্তর উপর নির্ভর করার প্রশ্নই উঠে না।

সম্ভবতঃ আমাদের সমর্থনে আবদুল্লাহ্‌ বিন বুহায়না (রাঃ) বর্ণিত হাদীছটি পেশ করা যায়। তিনি বলেন, ‘নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা তাদেরকে নিয়ে যোহর ছালাত আদায় করলেন। কিন্তু তিনি দু’রাকাআত পড়ে দাঁড়িয়ে পড়লেন, বসলেন না।’ এখানে ‘বসলেন না’ শব্দটি দ্বারা সবধরণের বসা বুঝা যায়। অর্থাৎ- জালাসা ইস্তেরাহাতেও বসলেন না। কিন্তু এর জবাবে বলা যায়, এখানে ‘বসলেন না’ বলতে তাশাহুদের জন্য বসা উদ্দেশ্য করা হয়েছে। (আল্লাহ্‌ই অধিক জ্ঞাত)