রিয়াদ পৌরসভার একজন উচ্চ পর্যায়ের সদস্য আমার নিকট বর্ণনা করেন যে, ১৩৭৬ হিজরীতে জুবাইল শহরের একদল জেলে সাগরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে এবং তিনদিন তিন রাত্র অতিবাহিত করার পরও তারা এমনকি একটি মাছও ধরার ব্যবস্থা করতে পারেনি। ইতোমধ্যে নিকটবর্তী আরেকদল জেলে অনেক মাছ ধরে ফেলল। তাদের ব্যর্থতা ও অন্যদলের সফলতার মাঝে শুধুমাত্র প্রভেদের কারণেই তারা বিস্মিত হল না, অধিকন্তু, তারা বিস্মিত হয়েছিল এ কারণেও যে, তারা দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা সত্বেও ব্যর্থ হয়েছিল, পক্ষান্তরে, অন্যদল সালাত না পড়া সত্বেও সফল হয়েছিল। সালাত আদায়কারী দলের একজন বলল। “সুবহানাল্লাহ! (আল্লাহ কতই না পবিত্র!) আমরা প্রতি ওয়াক্তের সালাত পড়েছি অথচ আমরা কিছুই পাইনি, আর অন্য দলটি গত কয়েকদিনে আল্লাহকে এমনকি একটি সিজদাও করেনি অথচ চেয়ে দেখ ঐ যে তাদের কত কত মাছ।” তখন শয়তান তাদেরকে সালাত না পড়ার কুমন্ত্রণা দিল। পরের দিন তারা ফজরের সালাত পড়তে ঘুম থেকে উঠল না। তারা জোহরের ও আসরের সালাতও পড়ল না।
আসরের ওয়াক্ত হওয়ার পর তারা (মাছ ধরতে) সাগরে চলে গেল। এবার তারা একটি মাছ পেল। মাছটিকে কাটার পর তারা এর পেটে একটি মুক্তা পেল একটি বহুমূল্যবান মুক্তা। তারা মুক্তাটি হাতে নিয়ে এর দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ ভেবে বলল, “সুবহানাল্লাহ! (আল্লাহ কতই না পবিত্র!) আমরা যখন তার আনুগত্য করেছি তখন আমরা কিছুই পাইনি, আর যখন আমরা তাকে অমান্য করলাম তখন আমরা এ জিনিস পেলাম! আমাদের সামনে এই যে রিযিক তা অবশ্যই সন্দেজনক প্রকৃতির।” তারপর তিনি মুক্তাটিকে হাতে নিয়ে তা সাগরে ছুড়ে মারলেন এবং বললেন, “আল্লাহ আমাদেরকে এর চেয়েও ভালো জিনিস দিয়ে প্রতিদান দিবেন।
আল্লাহর কসম, আমি এটা নিব না ; কেননা, সালাত ছাড়ার পর আমরা এটা পেয়েছি। তোমরা আমার সাথে আস এবং চল, যে স্থানে আমরা আল্লাহর আদেশ অমান্য করেছি সেস্থান ছেড়ে আমরা চলে যাই।” তারা তিন মাইল দূরে গিয়ে রাতের জন্য তাবু খাটাল। তারা কিছুক্ষণ পর আবার মাছ শিকারে গেল এবং তখন তারা একটি বেশ বড় আকারের মাছ পেল। যখন তারা এটিকে কাটল তখন এর পেটে সেই একই মূল্যবান মুক্তাটি পেল তখন তারা বলল- “সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর যিনি আমাদেরকে উত্তম (পবিত্র) রিযিক দান করেছেন।” সালাত পড়ার পর, আল্লাহর জিকির করার পর এবং আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাওয়ার পর তারা মাছটি ধরেছিল, তাই তারা এবার মাছটি রাখল।
একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য আপনার লক্ষ্য করা উচিত; জিনিস একটিই ছিল, কিন্তু আল্লাহকে অমান্য করার সময় যখন তারা এটি পেল তখন এটি অপবিত্র ছিল।
“আল্লাহ্ ও তার রাসূল তাদেরকে যা দান করেছেন যদি তারা তাতে সন্তুষ্ট হতো এবং বলত, আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট, (আর) অচিরেই আল্লাহ আমাদেরকে তার অনুগ্রহ থেকে দান করবেন এবং তার রাসূলও (দান করবেন)। নিশ্চয় আমরা আল্লাহর নিকট সনির্বন্ধ অনুরোধ করি (যাতে তিনি আমাদেরকে ধনী করেন); (তবে কতইনা ভালো হতো!)” (৯-সূরা তাওবাঃ আয়াত-৫৯)
নিশ্চয় এটা আল্লাহর দয়া। অতএব যখন কেউ আল্লাহর জন্য কোন কিছু ত্যাগ করে তখন আল্লাহ তাকে তার চেয়ে ভালো জিনিসের আঞ্জাম দেন।
এতে আলী (রাঃ)-এর একটি গল্প আমার মনে পড়ে গেল। একদিন সকালে তিনি দুরাকাত নফল সালাত পড়ার জন্য কুফার মসজিদে প্রবেশ করলেন। প্রবেশের পূর্বে তিনি একটি ছেলেকে দরজায় দাঁড়ানো দেখতে পেলেন। তিনি ছেলেটিকে বললেন। এই যে ছেলে! শোন, আমি সালাত শেষ করা পর্যন্ত তুমি আমার খচ্চরটিকে ধরে রেখো।”
মসজিদে প্রবেশের সময় আলী (রাঃ) নিয়াত করেছিলেন যে, ছেলেটিকে তার কাজের বিনিময়ে এক দিরহাম দিবেন। ইতোমধ্যে ছেলেটি খচ্চরের লাগাম খুলে এটিকে (লাগামটিকে) বিক্রি করার জন্য বাজারের দিকে প্রচণ্ড বেগে ধাবিত হলো। আলী (রাঃ) যখন মসজিদ থেকে বের হলেন তখন তিনি কোন ছেলেকে দেখতে পেলেন না এবং খচ্চরটিকে লাগামহীন দেখতে পেলেন।
তিনি একজন লোককে ছেলেটিকে ধরার দায়িত্ব দিলেন ও তাকে বাজারে যেতে আদেশ করলেন, যেহেতু ছেলেটি লাগামটিকে বিক্রি করার জন্য বাজারে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি ছিল। লোকটি দেখতে পেলেন যে, ছেলেটি এর (লাগামের) দর হাঁকছে আর তিনি ছেলেটির থেকে এক দিরহামের বিনিময়ে এটিকে (লাগামটিকে) কিনে নিয়ে এলেন। তিনি আলী (রাঃ)-এর নিকট ফিরে এসে যা ঘটেছে তা তাকে জানালেন। যা ঘটেছে তা শুনার পর আলী (রাঃ) বললেন, সুবহাল্লাহ! (আল্লাহু কতইনা পবিত্র!) আল্লাহর শপথ, আমি তাকে একটি হালাল দিরহাম দেয়ার নিয়ত করেছিলাম কিন্তু সে এটাকে প্রত্যাখ্যান করে বরং হারামভাবে এক দিরহাম নিল।
“(হে মুহাম্মদ!) আপনি যে কাজে বা যে অবস্থায়ই থাকেন না কেন আর সে বিষয়ে আপনি কুরআনের যে অংশই তেলাওয়াত করেন না কেন আর তোমরা যে আমলই (কাজ) কর না কেন যখন তোমরা তা কর বা তাতে প্রবৃত্ত হও তখন আমি তোমাদের সাক্ষী বা পরিদর্শক হয়ে থাকি। আর আসমানসমূহে ও জমিনে অনুপরিমাণ কোন কিছু, তার চেয়ে ক্ষুদ্রতর কোন কিছু এবং এর চেয়েও বৃহত্তর কোন কিছুই তোমার প্রভুর নিকট থেকে গোপন থাকে না।” (১০-সূরা ইউসুফঃ আয়াত-৬১)