আবু বকর (রাঃ) সংক্ষিপ্তকারে অথচ ব্যাপক অর্থবোধকভাবে বলেন-
صنائع المعروف تقى مصارع السوء
ভাবাৰ্থঃ “দান কর্ম মানুষকে জীবনের উত্থান-পতন থেকে রক্ষা করে।”
এ কথা অহী ও সুস্থ যুক্তি দ্বারা সমর্থিত। (ইংরেজি পুস্তকে এভাবেই অনুবাদ করা হয়েছে- এর শাব্দিক অর্থ হবে নেক আমল- দুর্ঘটনা ও বিপদাপদ থেকে রক্ষা করে -অনুবাদক)।
“যদি না ইউনুস (আঃ) আল্লাহর তসবীহ পাঠকারীদের অন্তর্ভুক্ত হতো, তবে কিয়ামত (পুনরুত্থান) দিবস পর্যন্ত তিনি এর (মাছের) পেটে থাকত।” (৩৭-সূরা আস সাফফাতঃ আয়াত-১৪৩-১৪৪)
খাদিজা (রাঃ) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলেছিলেনঃ “কখনও নয়, আল্লাহর কসম, আল্লাহ আপনাকে কখনও পরিত্যাগ করবেন না। কেননা, নিশ্চয় আপনি আত্মীয়দের নিকট ভালো বা আত্মীয়দের জন্য কল্যাণকর, আপনি অন্যদের বোঝা বহন করেন, আপনি অভাবীদের খাদ্য যোগান এবং যে সব লোকদের দুঃসময় চলছে আপনি তাদেরকে সাহায্য করেন।”
লক্ষ্য করুন যে, তিনি কতটাই বুঝেছিলেন যে, আমলে সালেহ অবশ্যই সুফল বয়ে আনে এবং মহান বা শুভ সূচনার বিজয়ী সমাপ্তি ঘটে।
সাবাবি (আরবী পুস্তকে আছে ‘সাবী’)-এর ‘আলওযারাহ’ ইবনুল জাওয়ীর ‘আল মুনতা’যিম’ ও তানূখির ‘আল ফারাজু বা’দাশ শিদ্দাহ’ এসব ক’টি পুস্তকেই নিম্নোক্ত ঘটনাটি বর্ণনা করা হয়েছে।
ইবনুল ফুরাত নামে এক গভর্নর সর্বদা আবূ জাফর ইবনে বিস্তামের ক্ষতি করতে চাইত। এ কারণে আবু জাফর অনেক কষ্ট ভোগ করেছে।
আবু জাফর যখন শিশু ছিলেন তখন তার বালিশের নিচে তার মা একটি রুটি রেখে দিত। পরদিন সকালে তার মা তার ছেলের পক্ষ থেকে এ রুটিকে একজন অভাবী লোককে দান করে দিত। পরবর্তী জীবনে আবু জাফর কোন না কোন কাজে ইবনুল ফুরাতের নিকট গিয়েছিল। ইবনুল ফুরাত তৎক্ষণাৎ বলল, তোমার ও তোমার মায়ের মাঝে রুটি নিয়ে কোন ব্যাপার আছে কি? সে উত্তর দিল, “না।”
ইবনুল ফুরাত গো ধরল, “আমার সাথে তোমাকে অবশ্যই সত্য কথা বলতে হবে”। আবু জাফর সম্ভবত কিছুটা বিব্রত হয়ে ঘটনাকে এমন ভঙ্গিমায় পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা করল যাতে তার (মায়ের) প্রতি ও সাধারণভাবে নারী জাতির প্রতি মজা করা হলো। ইবনুল ফুরাত বলল, “এমন (কৌতুকের) ঢংয়ে কথা বল না। কেননা, গতরাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে আমি একটি পরিকল্পনা করেছি, তা যদি সফল হতো তবে তুমি ধ্বংস হয়ে যেতে। আমি যখন ঘুমিয়ে পড়লাম তখন আমি একটি স্বপ্ন দেখলাম, আমি যেন দু’হাতে একটি খাপমুক্ত তরবারী উচিয়ে তোমাকে হত্যা করার জন্য তোমার দিকে দৌড়ে গেলাম।
তোমার মা আমাকে আটকিয়ে দিল আর তার হাতে একটি রুটি ছিল, যা সে তোমাকে আমার কাছ থেকে রক্ষা করার জন্য ব্যবহার করেছিল, ফলে তোমার নিকট পৌছতে পারিনি, আর এরপর আমি ঘুম থেকে জেগে উঠলাম। তাদের মাঝে ধীরে ধীরে যে শক্রতা গড়ে উঠেছিল তার জন্য আবু জাফর তাকে মৃদুভাবে তিরস্কার করল এবং এ ঘটনা তাদের মাঝে কলহ বিরতির পথ খুলে দিল। ইবনুল ফুরাত আবু জাফরকে তার কাজে ব্যাপকভাবে সাহায্য করলেন আর তারা অচিরেই ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে গেল। এ ঘটনার পর ইবনুল ফুরাতকে বলতে শোনা গিয়েছিল, “আল্লাহ্র কসম, এরপর তুমি আমার পক্ষ থেকে কোন ক্ষতি দেখতে পাবে না।”