যার আত্মা পবিত্র সে পরিষ্কার পোশাকাদি পরিধান করে। কোন কোন জ্ঞানী লোক এমনকি একথাও বলেছেন যে
“যখন কারো পোশাক ময়লা হয়ে যায় তখন তার আত্মাও পোশাককে অনুসরণ করে (অর্থাৎ পোশাকের মতো ময়লা হয়ে যায়)।”
অনেক লোকের বিরক্তির মূল কারণ হলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না থাকা, অগোছালো থাকা ও নিয়মনিষ্ঠ না থাকা; আর অন্যদের বিরক্তির কারণ হলো অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, ময়লা পোশাকাদি ও নোংরা সুরৎ। এ বিশ্ব জগৎ নিয়মভিত্তিক পরিচালিত। আসলে আমাদের ধর্মের গভীরতা ও প্রজ্ঞা সত্যিকারভাবে বুঝতে হলে আমাদের এ কথা বুঝা উচিত যে, ছোট বড় উভয় বিষয়েই আমাদের জীবনকে নিয়মতান্ত্রিক করার জন্য এ ধর্ম এসেছে। আল্লাহর সব কিছুই (অর্থাৎ সকল বিধানই) একটি মাত্রা অনুপাতে আছে।
মুসলিম শরীফে নিম্নোক্ত হাদীসটি আছে—
إِنَّ اللهَ جَمِيلٌ يُحِبُّ الْجَمَالَ
“নিশ্চয় আল্লাহ্ সুন্দর এবং তিনি সৌন্দর্যকে ভালোবাসেন।”
ইমাম বুখারী তার সহীহ কিতাবে নিম্নোক্ত হাদীসটি বর্ণনা করেছেন-
“সপ্তাহে একদিন গোসল করা, মাথা ও শরীর ধোয়া প্রত্যেক মুসলমানের উপর বাধ্যতামূলক।”
সর্বাপেক্ষা কম যতটা আশা করা যায় এটা (সপ্তাহে একদিন গোসল করা) হলো তা। আমাদের কিছু কিছু ধাৰ্মিক পূর্বসূরী প্রতিদিন একবার গোসল করতেন, যেমনটা উসমান ইবনে আফফান (রাঃ) সম্বন্ধে আমাদের নিকট খবর পৌঁছেছে- “এতো গোসলের সুশীতল পানি ও (প্রাণবন্তকারী) পানীয়”। (৩৮-সূরা ছোয়াদঃ আয়াত-৪২)
দাড়ি রাখা, মোছ ছাঁটা, নখ কাটা, দাঁত মাজা, আতর মাখা, কাপড় ধোয়া ও সাধারণত বাহ্যিক আকৃতির যত্ন করা পুরুষের জন্য বাধ্যতামূলক কাজ। এসব স্বাস্থ্যকর কাজ করলে আরাম ও ভালো বোধ করা যায়। সাদা পোশাক পরার পরামর্শও দেয়া হয়েছে। কেননা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
“সাদা পোশাক পরিধান কর ও মৃতের কাফন হিসেবে সাদা কাপড় ব্যবহার কর।”
আপনার উচিত ছোট একখানা নোটবুকে আপনার কাজ-কর্মকে পড়ার, ইবাদত করার, ব্যায়াম করার ও ইত্যাদির সময় নির্ধারণ করে সুবিন্যস্ত করে রাখা।
“প্রত্যেক বিষয়ের নির্দিষ্ট সময় (আল্লাহ নিকট) লিখিত আছে।” (১৩-সূরা রাআদঃ আয়াত-৩৮)
“আমার নিকট প্রত্যেক বস্তুর ভাণ্ডার আছে এবং আমি তা নির্দিষ্ট পরিমাণ ছাড়া নাযিল করি না।" (১৫-সূরা হিজরঃ আয়াত-২১)
কংগ্রেসের লাইব্রেরিতে এক বিশাল বিজ্ঞাপন ঝুলছে ও তাতে লিখা আছে- “এ বিশ্বজগৎ নিয়মভিত্তিক পরিচালিত।” একথা সত্য। কেননা, ঐশী ধর্ম সকল কাজ কর্মে নিয়ম-শৃঙ্খলা ও ভারসাম্যতার দাবি করে।
আল্লাহ আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন যে, এ বিশ্বজগতের কাজকর্ম খেল-তামাশার উপর ভিত্তি করে পরিচালিত নয় বরং পূর্ব নির্ধারিত বিধান, পরিমাপ ও শৃঙ্খলার উপর ভিত্তি করে পরিচালিত।
“চন্দ্র-সূর্য হিসাব মতে চলে”। (৫৫-সূরা আর রাহমানঃ আয়াত-৫)
“সূর্যের সাধ্য নেই চন্দ্রের নাগাল পায়, আর রাতও দিনকে অতিক্রম করতে পারবে না। আর প্রত্যেকেই (যার যার নির্দিষ্ট) কক্ষপথে পরিভ্রমণ করছে।” (৩৬-সূরা ইয়াসিনঃ আয়াত-৪০)
“আর চন্দ্রের জন্য আমি বহু ঘাটি নির্ধারণ করে দিয়েছি (এগুলো অতিক্রম করতে করতে) অবশেষে তা শুষ্ক, বক্র, পুরাতন খেজুর ডালের মতো হয়ে যায়।” (৩৬-সূরা ইয়াসীন আয়াত-৩৯)
“এবং আমি রাত ও দিনকে দুটি নিদর্শন বানিয়েছি। পরে আমি রাতের চিহ্নকে অন্ধকারময় করেছি এবং দিনের চিহ্নকে উজ্জ্বল করছি। যাতে তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের অনুগ্রহ তালাশ করতে পার ও বছরের সংখ্যা ও হিসাব জেনে নিতে পার। আর আমি প্রতিটি বিষয়কে বিশদভাবে বর্ণনা করেছি।” (১৭-সূরা বনী ইসরাঈলঃ আয়াত-১২)
“হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি এসব কিছু অযথা সৃষ্টি করেনি; সকল মহিমা, গৌরব, প্রশংসা ও ধন্যবাদ তোমারই প্রাপ্য।” (৩-সূরা আলে ইমরানঃ আয়াত-১৯১)
আসমান-জমিন ও এতদুভয়ের মাঝে যা কিছু আছে তা আমি খেল তামাশা করে সৃষ্টি করিনি। যদি আমি খেল-তামাশা গ্রহণ করতে চাইতাম। তবে তা আমি আমার পক্ষ থেকেই গ্রহণ করতাম, কিন্তু আমি তা করিনি।” (২১-সূরা আল আম্বিয়াঃ আয়াত-১৬, ১৭)
“এবং (হে মুহাম্মদ!) আপনি বলে দিন, তোমরা ভালো কাজ কর।” (৯-সূরা তাওবাঃ আয়াত-১০৫)
যখন কোন মানসিকভাবে অসুস্থ রোগীকে গ্রিসের হাকীমদের নিকট চিকিৎসার জন্য আনা হতো তখন তারা এ রোগীকে খামার ও বাগান করতে বাধ্য করত। অল্প কিছু সময় কাটতে না কাটতেই এ রোগী সুস্থ হয়ে যেত। হস্তশিল্পী ব্যবসায়ীরা অন্যদের তুলনায় বেশ সুখী। ধীর ও শান্ত। আপনি যদি শ্রমিকদেরকে লক্ষ্য করেন তবে আপনি তাদের শরীরে শক্তি ও মনের শান্তি দেখতে পাবেন। এতদুভয়ই সন্তুষ্টির ফলে আসে। আর সন্তুষ্টি আসে নড়াচাড়া ব্যায়াম ও কাজের মাধ্যমে।
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ الْعَجْزِ وَالْكَسَلِ
“হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট অক্ষমতা ও অলসতা থেকে মুক্তি চাই।”