আইয়ামে তাশরীক : যিলহজ মাসের ১১, ১২, ১৩ তারিখকে আইয়ামে তাশরীক বলা হয়।
ইযতিবা : ডান বগলের নিচ দিয়ে চাদরের প্রান্ত বাম কাঁধের ওপর উঠিয়ে রাখা। এভাবে, ডান কাঁধ খালি রেখে উভয় প্রান্ত বাম কাঁধের ওপর ঝুলিয়ে রাখা।
ইয়াওমুত তারবিয়াহ : যিলহজ মাসের ৮ তারিখ মিনায় যাওয়ার দিন।
ইয়াওমু আরাফা : আরাফা দিবস। যিলহজ মাসের ৯ তারিখ সূর্য হেলে যাওয়ার পর থেকে সূযাস্ত পর্যন্ত ফরয হিসেবে আরাফায় অবস্থান করতে হয়। এ দিনকে ইয়াওমু আরাফা বলে।
ইহরাম : হারাম বা নিষিদ্ধ করে নেয়া। হজ ও উমরা পালনের উদ্দেশ্যে সুনির্দিষ্ট কিছু কথা ও কাজ নিজের ওপর নিষিদ্ধ করে নেয়ার সংকল্প করা।
ওয়াদি মুহাস্সার : এটি মুযদালিফা ও মিনার মাঝামাঝি একটি জায়গার নাম, যেখানে আবরাহা ও তার হস্তী বাহিনীকে ধ্বংস করা হয়েছিল। স্থানটি হেরেমের ভেতরে অবস্থিত কিন্তু ইবাদতের স্থান নয়। এখানে পৌঁছলে আল্লাহর গজব নাযিল হওয়ার স্থান হিসেবে তা দ্রুত অতিক্রম করা উচিত।
ওয়াদি উরনাহ : আরাফার মাঠের পাশে বিস্তৃত উপত্যকা, যা মুযদালিফার দিক থেকে আরাফায় প্রবেশের ঢোকার সময় প্রথম সামনে পড়ে।
উকূফ : অবস্থান করা। আরাফা ও মুযদালিফায় অবস্থান করাকে যথাক্রমে উকূফে আরাফা ও উকূফে মুযদালিফা বলা হয়।
কসর : সংক্ষিপ্ত করা। চার রাক‘আত বিশিষ্ট সালাতগুলো দু’রাক‘আত করে আদায় করা।
কিরান : মিলিয়ে করা। হজ ও উমরাকে একই সাথে আদায় করার নাম কিরান করা। এটি তিন প্রকার হজের অন্যতম।
জামরাহ : শাব্দিক অর্থ পাথর। মিনায় অবস্থিত শয়তানকে পাথর মারার স্থান। জামরার সংখ্যা তিনটি।
জাবাল : পাহাড়।
জাবালে আরাফা : আরাফায় অবস্থিত পাহাড়, যাকে জাবালে রহমতও বলে।
তাওয়াফ : প্রদক্ষিণ করা। কা‘বার চারপাশে প্রদক্ষিণ করাকে তাওয়াফ বলে।
তাওয়াফে ইফাযা বা তাওয়াফে যিয়ারাহ : ১০ যিলহজ কুরবানী ও হলক-কসরের পর থেকে ১২ যিলহজের মধ্যে কা‘বা শরীফের তাওয়াফ করাকে তাওয়াফে ইফাযা বা তাওয়াফে যিয়ারাহ বলে। এ তাওয়াফ ফরয।
তাওয়াফে কুদূম : কদূম অর্থ আগম করা। সুতরাং এর অর্থ আগমনী তাওয়াফ। মীকাতের বাইরের লোকেরা যখন হজ বা উমরার উদ্দেশ্যে কা‘বা শরীফে আসেন, তখন তাদেরকে বায়তুল্লাহ তথা কা‘বার সম্মানার্থে এ তাওয়াফটি করতে হয়। এটি সুন্নত।
তাওহীদ : আল্লাহর একত্ববাদ।
তাকবীর : বড় করা। ইসলামী পরিভাষায় ‘আল্লাহু আকবার’ বলাকে তাকবীর বলে।
তামাত্তু : উপকৃত হওয়া, উপকার নেয়া, ভোগ করা। একই সফরে প্রথমে উমরা আর পরে হজ আলাদাভাবে আদায় করাকে তামাত্তু বলে। এটি তিন প্রকার হজের অন্যতম।
তালবিয়া : সাড়া দেয়া। এখানে আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে হজ বা উমরার উদ্দেশ্যে আগমনকারীকে ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ বলে যে বাণী পাঠ করতে হয় তাকে তালবিয়া বলা হয়।
তাহলীল : লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলা।
দম : রক্ত। হজ-উমরা আদায়ে ওয়াজিব ছুটে যাওয়া জনিত ভুল-ত্রুটি হলে তার কাফ্ফারা স্বরূপ একটি পশু যবেহ করে গরীব-মিসকীনদের মধ্যে বিলিয়ে দিতে হয়। এই পশু যবেহকে বলে দম দেয়া।
নহর : কুরবানী করা। উট কুরবানী করার জন্য দাঁড়ানো অবস্থায় তার গলায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়। এ প্রক্রিয়াকে নহর বলে।
ফিদয়া : ক্ষতিপূরণ। সাধারণ কোন অপরাধ হয়ে গেলে তিনটি কাজের যেকোন একটি করতে হয়। ছয়জন মিসকীনকে এক কেজি দশ গ্রাম পরিমাণ খাবার প্রদান কিংবা তিনদিন সিয়াম পালন করা অথবা ছাগল যবেহ করে গরীব-মিসকীনদের মধ্যে বিতরণ করে দেয়া।
বাতনে ওয়াদী : বাতন অর্থ পেট বা মধ্যভাগ। আর ওয়াদী অর্থ উপত্যকা। তাই বাতনে ওয়াদী শব্দদু’টির অর্থ উপত্যকার মধ্যভাগ। সাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মাঝখানে নিচু উপত্যকা এলাকা ছিল। সে উপত্যকাটিকেই বাতনে ওয়াদী বলে।
মাকামে ইবরাহীম : ইবরাহীম আ.-এর দাঁড়ানোর স্থান। একটি বড় পাথরের ওপর দাঁড়িয়ে ইবরাহীম আ. কা‘বা শরীফ নির্মাণ সম্পন্ন করেন। সে পাথরে তাঁর পদচিহ্ন পড়ে যায়, যা এখনো বর্তমান রয়েছে। কা‘বা শরীফের সামনে অবস্থিত এই পাথরকে মাকামে ইবরাহীম বলা হয়।
মাতাফ : তাওয়াফ করার স্থান। কা‘বা ঘরের চারদিকে সাদা পাথর বিছানো এলাকাকে মাতাফ বলা হয়। এখান দিয়েই তাওয়াফ করা হয়।
মাবরুর : মকবুল। হাদীসে মকবুল হজকে হজ্জে মাবরূর বলা হয়েছে।
মাশ‘আর : নিদর্শন সম্বলিত স্থান। আর মাশ‘আরুল হারাম বলতে মুযদালিফাকে বুঝানো হয়েছে।
মাস‘আ : সাঈ করার স্থান। সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যবর্তী জায়গা, যেখানে লোকজন সাঈ করে।
মুলতাযাম : লেপ্টে থাকার স্থান। হাজরে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানীর মাঝখানে অবস্থিত কা‘বা ঘরের স্থান, যা দু’আ কবুলের স্থান হিসেবে পরিচিত। তাই এখানে সবসময় লোকজন লেগেই থাকে।
রওযা : বাগান। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ মিম্বর ও ঘরের মাঝখানের অংশকে রওযাতুম মিন রিয়াযিল জান্নাত বা জান্নাতের একটি বাগান বলে অভিহিত করেছেন।
রমল : ঘন পদক্ষেপে দ্রুত হাঁটা। হজ বা উমরার প্রথম তাওয়াফের সময় প্রথম তিন চক্কর ঘন পদক্ষেপে বীরদর্পে বাহু ঘুরিয়ে দ্রুত হাঁটতে হয়। এটাকে রমল বলে।
রুকন : স্তম্ভ। হজের রুকনের অর্থ হজের স্তম্ভসমূহ, যার ওপর হজের ভিত্তি। এর কোনটি বাদ গেলে হজ হয় না।
রুকনে ইয়ামানী : রুকনে ইয়ামানীর অর্থ কা‘বার সেই স্তম্ভ যেটি ইয়ামান দেশের দিকে স্থাপিত।
সাঈ : দৌড়ানো। এখানে সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মাঝখানে সাতবার যাওয়া আসা করাকে বুঝায়।
হজ্জে আকবার : যিলহজের দশ তারিখের দিনকে কুরআনে ‘ইয়াওমুল হাজ্জিল-আকবার তথা বড় হজের দিন বলা হয়েছে। যিলহজের ৯ তারিখ তথা আরাফা দিবস যদি শুক্রবারে হয় তাহলে আরাফা দিবস ও জুমাবার- উভয়ের ফযীলত লাভ হয়। তবে এটি আকবরী হজ নামে যে লোক মুখে প্রচলিত তার কোন ভিত্তি নেই।
হলক-কসর : হজ বা উমরার কাজ সম্পন্ন হলে মাথার চুল কামাতে বা ছোট করতে হয়। মাথা কামানোকে হলক এবং চুল ছোট করাকে কসর বলা হয়।
হারাম : নিষিদ্ধ বস্তুকে হারাম বলে। আবার সম্মানিত স্থানকেও হারাম বলে। মক্কা ও মদীনার নির্দিষ্ট সীমারেখাকে হারাম বলে।
হালাল : বৈধ হওয়া। ইহরাম শেষ হওয়ার পর মুক্ত অবস্থাকে হালাল হওয়া বলে।
হিজর বা হাতীম : কা‘বা শরীফ সংলগ্ন উত্তর পাশে খোলা জায়গা, যা ইবরাহীম আ. কর্তৃক নির্মিত মূল কা‘বার অংশ ছিল।