ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
হজ উমরা ও যিয়ারত পঞ্চম অধ্যায় : উমরা ইসলামহাউজ.কম
ইহরামের আগে ও পরে হজ-উমরাকারীরা যেসব ভুল করে থাকেন

১. সমুদ্র বা আকাশ পথে মীকাতের সমান্তরাল হলে ইহরাম না বেঁধে বিমান অবতরণ করা পর্যন্ত দেরি করা। এটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর বাণীর পরিপন্থী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«هُنَّ لَهُنَّ وَلِمَنْ أَتَى عَلَيْهِنَّ مِنْ غَيْرِهِنَّ مِمَّنْ أَرَادَ الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ.»

‘এই মীকাতগুলো এসবের অধিবাসী এবং এসব স্থানে পদার্পণকারী বহিরাগত প্রতিটি হজ ও উমরাকারীর জন্য ইহরাম বাঁধার স্থান।’[1]

অতএব বিমানে বা জাহাজে আগমনকারীর কর্তব্য হলো, মীকাতে পৌঁছার আগেই ইহরামের পোশাক পরে নেবে কিংবা ইহরামের কাপড় হাতে নিয়ে রাখবে, যাতে মীকাতে পৌঁছামাত্র তা পরে নিতে পারে। যে বিমানে ইহরামের পোশাক পরার কথা ভুলে যায় কিংবা তার পক্ষে ব্যাগ থেকে কাপড় বের করা সম্ভব না হয়, সে তার পরিধেয় বস্ত্র খুলে একটি চাদর ও একটি লুঙ্গি পরে নেবে। যদি লুঙ্গি পরার সুযোগ না পায় তাহলে আপাতত পাজামা বা প্যান্ট পরেই লজ্জাস্থান ঢাকবে। তারপর যখন সুযোগ পাবে, পাজামা খুলে ইহরামের কাপড় পরে নেবে। এ জন্য তাকে কোন ক্ষতিপূরণ দিতে হবে না। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :

«مَنْ لَمْ يَجِدْ إِزَارًا فَلْيَلْبَسِ السَّرَاوِيلَ.»

‘যার লুঙ্গি নাই সে পাজামা পরে নেবে।’[2]

২. অনেক মহিলা ধারণা করেন, ইহরামের জন্য কালো, সবুজ বা সাদা এ জাতীয় বিশেষ পোশাক রয়েছে। এর কোন ভিত্তি নেই। মহিলারা যেকোনো কাপড় পরিধান করতে পারবেন। তবে পোশাকটি সৌন্দর্য প্রদর্শনে সহায়ক কিংবা পুরুষ বা অমুসলিমদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হতে পারবে না।

৩. অনেকের ধারণা, ইহরামের পোশাক ময়লা হলে বা ছিঁড়ে গেলেও পরিবর্তন করা যায় না। এটা ঠিক নয়। সঠিক হল, মুহরিমের জন্য ইহরামের পোশাক খোলা এবং যখন ইচ্ছা পরিবর্তন করার অনুমতি রয়েছে।

৪. অনেক মহিলা তার চেহারা ও নেকাবের মধ্যস্থানে কাঠ বা এ জাতীয় কিছু রাখেন। যাতে নেকাব তার চেহারা স্পর্শ না করে। এও এক ভিত্তিহীন লৌকিকতা। ইসলামের সূচনা যুগের কোন মুসলিম মহিলা এমন করেননি; বরং মহিলারা পরপুরুষ সামনে এলে মুখে নেকাব না দিয়ে ওড়না ঝুলিয়ে চেহারা আড়াল করবে। পরপুরুষ না থাকলে মুখ খোলা রাখবেন। ওড়না তার চেহারা স্পর্শ করলেও কোন সমস্যা নেই।

৫. উমরা বা হজ করার নিয়ত করেও অনেক মহিলা হায়েয বা নিফাস অবস্থায় মীকাত থেকে ইহরাম বাঁধেন না। এ এক প্রকাশ্য ভুল। নিফাস বা হায়েযবতী মহিলার জন্যও মীকাত থেকে ইহরাম বাঁধা ফরয। উপরন্তু নিফাস বা হায়েযবিহীন স্বাভাবিক মহিলাদের মতো তাদের জন্যও গোসল ও পবিত্রতা অর্জন করার বিধান রাখা হয়েছে। নিফাস ও হায়েযবতী মহিলারা অন্যসব হজ ও উমরাকারীর ন্যায় সবই করতে পারবেন। কেবল পবিত্র হওয়ার আগ পর্যন্ত বাইতুল্লাহ্‌র তাওয়াফ করতে পারবেন না। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসমা বিনতে উমাইসকে মীকাতে (বাচ্চা প্রসব করার পর) নিফাস শুরু হলে বলেন,

«اغْتَسِلِى وَاسْتَثْفِرِى بِثَوْبٍ وَأَحْرِمِى.»

‘গোসল করো, কাপড় দিয়ে রক্ত আটকাও আর ইহরাম বেঁধে নাও।’[3] আর ইহরাম অবস্থায় আয়েশা রা.-এর ঋতুস্রাব শুরু হলে তাঁর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন,

«إِنَّ هَذَا أَمْرٌ كَتَبَهُ اللَّهُ عَلَى بَنَاتِ آدَمَ فَاقْضِي مَا يَقْضِي الْحَاجُّ غَيْرَ أَنْ لاَ تَطُوفِي بِالْبَيْتِ».

‘এটি এমন এক বিষয় যা আল্লাহ তা‘আলা আদম কন্যাদের ওপর লিখে দিয়েছেন। (এটা তো হবেই) সুতরাং তুমি অন্য হাজীদের মতো সবই করতে পারবে, কেবল বাইতুল্লাহ্‌র তাওয়াফ করবে না।’[4]

৬. ইহরামের সময় দুই রাকা‘আত সালাত পড়া ওয়াজিব মনে করা।

৭. অনেকে ইহরামের পোশাক পরলেই ইহরামের নিষিদ্ধ কাজগুলো থেকে বিরত থাকতে হবে বলে মনে করেন; কিন্তু সঠিক হল, বান্দা ইহরাম বাঁধার নিয়ত করলেই কেবল ওইসব কাজ নিষিদ্ধ হয়। চাই তিনি তার আগে ইহরামের পোশাক পরুন বা তার পরে।

৮. অনেকে শিশু-কিশোরদের ইহরামের পর তাদেরকে ক্লান্ত দেখে হজ ভেঙ্গে দেয়। এটিও ভুল। বরং শিশুর অভিভাবকের উচিত, তাকে হজের কার্যাদি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সমর্থন ও সহযোগিতা করা। যেগুলো সে আদায় করতে পারবে না, অভিভাবক তার পক্ষে সেগুলো আদায় করবেন।

৯. সমবেত কণ্ঠে তালবিয়া পড়া শরীয়ত কর্তৃক অনুমোদিত নয়। কারণ, তালবিয়া এমন একটি ইবাদত যা কেবল সেভাবেই করা যায় যেভাবে তা বর্ণিত হয়েছে। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বা তাঁর সাহাবায়ে কিরাম সমবেতকণ্ঠে তালবিয়া পড়েছেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না।

১০. অনর্থক কথা বা কাজ এবং যা পরে করলেও চলে এমন কাজে লিপ্ত হয়ে তালবিয়া পড়া থেকে বিরত থাকা। এর চেয়েও ভয়ানক ব্যাপার হলো, গীবত, চোগলখোরি কিংবা গান বা অনর্থক কোন কাজে মূল্যবান সময় নষ্ট করা।

[1]. বুখারী : ১৫২৪, মুসলিম : ১১৮১।

[2]. বুখারী : ১৮৪৩, মুসলিম : ১১৭৮।

[3]. প্রাগুক্ত।

[4]. বুখারী : ২৯৪; মুসলিম : ১২১১।