১. হজ ইসলামের পাঁচ রুকন বা স্তম্ভের অন্যতম, যা আল্লাহ তা‘আলা সামর্থবান মানুষের ওপর ফরয করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلِلَّهِ عَلَى ٱلنَّاسِ حِجُّ ٱلۡبَيۡتِ مَنِ ٱسۡتَطَاعَ إِلَيۡهِ سَبِيلٗاۚ وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ ٱللَّهَ غَنِيٌّ عَنِ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٩٧ ﴾ [ال عمران: ٩٧]
‘এবং সামর্থ্যবান মানুষের ওপর আল্লাহর জন্য বাইতুল্লাহ্র হজ করা ফরয। আর যে কুফরী করে, তবে আল্লাহ তো নিশ্চয় সৃষ্টিকুল থেকে অমুখাপেক্ষী।’[1]
ইবন উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«بُنِيَ الإِسْلاَمُ عَلَى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ ، وَإِقَامِ الصَّلاَةِ ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ وَالْحَجِّ ، وَصَوْمِ رَمَضَانَ».
‘ইসলামের ভিত রাখা হয়েছে পাঁচটি বস্তুর ওপর : এ মর্মে সাক্ষ্য প্রদান করা যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল; সালাত কায়েম করা; যাকাত প্রদান করা; হজ করা এবং রমযানের সিয়াম পালন করা।’[2]
সুতরাং হজ ফরয হওয়ার বিধান কুরআন-সুন্নাহর অকাট্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত। এ ব্যাপারে সকল মুসলিম একমত।
২. হজ সামর্থবান ব্যক্তির ওপর সারা জীবনে একবার ফরয। ইবন আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«خَطَبَنَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ : يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ اللَّهَ كَتَبَ عَلَيْكُمُ الْحَجَّ.فَقَامَ الأَقْرَعُ بْنُ حَابِسٍ فَقَالَ : أَفِى كُلِّ عَامٍ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ : لَوْ قُلْتُهَا لَوَجَبَتْ ، وَلَوْ وَجَبَتْ لَمْ تَعْمَلُوا بِهَا ، وَلَمْ تَسْتَطِيعُوا أَنْ تَعْمَلُوا بِهَا. الْحَجُّ مَرَّةٌ فَمَنْ زَادَ فَتَطَوُّعٌ».
‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সম্বোধন করে বললেন, ‘হে লোক সকল, আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের ওপর হজ ফরয করেছেন।’ তখন আকরা‘ ইবন হাবিস রা. দাঁড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, প্রত্যেক বছর? তিনি বললেন, ‘আমি বললে অবশ্যই তা ফরয হয়ে যাবে। আর যদি ফরয হয়ে যায়, তবে তোমরা তার ওপর আমল করবে না এবং তোমরা তার ওপর আমল করতে সক্ষমও হবে না। হজ একবার ফরয। যে অতিরিক্ত আদায় করবে, সেটা হবে নফল।’[3]
৩. সক্ষম ব্যক্তির ওপর বিলম্ব না করে হজ করা জরুরী। কালক্ষেপণ করা মোটেই উচিত নয়। এটা মূলত শিথিলতা ও সময়ের অপচয় মাত্র। ইবন আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«تَعَجَّلُوا إِلَى الْحَجِّ - يَعْنِي : الْفَرِيضَةَ - فَإِنَّ أَحَدَكُمْ لاَ يَدْرِي مَا يَعْرِضُ لَهُ».
‘তোমরা বিলম্ব না করে ফরয হজ আদায় কর। কারণ তোমাদের কেউ জানে না, কী বিপদাপদ তার সামনে আসবে।’[4] উমর ইবনুল খাত্তাব রা. বলেন,
لَقَدْ هَمَمْتُ أَنْ أَبْعَثَ رِجَالًا إلَى هَذِهِ الْأَمْصَارِ فَيَنْظُرُوا كُلَّ مَنْ لَهُ جَدَةٌ وَلَمْ يَحُجَّ فَيَضْرِبُوا عَلَيْهِ الْجِزْيَةَ مَا هُمْ بِمُسْلِمِينَ مَا هُمْ بِمُسْلِمِينَ.
‘আমার ইচ্ছা হয়, এসব শহরে আমি লোক প্রেরণ করি, তারা যেন দেখে কে সামর্থবান হওয়ার পরও হজ করেনি। অতপর তারা তার ওপর জিযিয়া[5] আরোপ করবে। কারণ, তারা মুসলিম নয়, তারা মুসলিম নয়।’[6] উমর রা. আরো বলেন :
لِيَمُتْ يَهُودِيًّا أَوْ نَصْرَانِيًّا- يَقُولُهَا ثَلَاثَ مَرَّات-ٍ رَجُلٌ مَاتَ وَلَمْ يَحُجَّ وَوَجَدَ لِذَلِكَ سَعَةً .
‘ইহূদী হয়ে মারা যাক বা খ্রিস্টান হয়ে -তিনি কথাটি তিনবার বললেন- সেই ব্যক্তি যে আর্থিক স্বচ্ছলতা সত্ত্বেও হজ না করে মারা গেল।’[7]
[2]. বুখারী : ০৮; মুসলিম : ৬১।
[3]. মুসনাদে আহমদ : ৪০২২; আবূ দাউদ : ১২৭১; ইবন মাজাহ্ : ৬৮৮২।
[4]. মুসনাদে আহমদ : ৭৬৮২; ইবন মাজাহ্ : ৩৮৮২।
[5]. কর বা ট্যাক্স।
[6]. ইবন হাজার, আত-তালখীসুল হাবীর : ২/২২৩।
[7]. বাইহাকী : ৪/৩৩৪।