ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
আল-ফিকহুল আকবর হেদায়াত, কবর, অনুবাদ, আয়াতসমূহের মর্যাদা, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর আত্মীয়গণ, মিরাজ, কিয়ামতের আলামত ইত্যাদি ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.)
২. কবরের অবস্থা

এরপর ইমাম আযম কবর বিষয়ক আকীদার কয়েকটি দিক উল্লেখ করে বলেছেন: মুনকার ও নাকীরের প্রশ্ন সত্য, যা কবরের মধ্যে হবে। কবরের মধ্যে বান্দার রূহকে দেহে ফিরিয়ে দেওয়া সত্য। কবরের চাপ এবং কবরের আযাব সত্য, কাফিররা সকলেই এ শাস্তি ভোগ করবে এবং কোনো কোনো পাপী মুমিনও তা ভোগ করবে।’’

কুরআন ও হাদীসের আলোকে মৃত্যুর পরে কিয়ামাতের আগে মধ্যবর্তী সময়ের অবস্থা সম্পর্কে আমরা জানতে পারি। মহান আল্লাহ বলেন:


يُثَبِّتُ اللَّهُ الَّذِينَ آَمَنُوا بِالْقَوْلِ الثَّابِتِ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الآَخِرَةِ وَيُضِلُّ اللَّهُ الظَّالِمِينَ وَيَفْعَلُ اللَّهُ مَا يَشَاءُ


‘‘যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে আল্লাহ শাশ্বত বাণীতে সুপ্রতিষ্ঠিত রাখবেন ইহজীবনে এবং পরজীবনে এবং যারা জালিম আল্লাহ তাদেরকে বিভ্রান্তিতে রাখবেন। আল্লাহ যা ইচ্ছা তা করেন।’’[1]

এ থেকে জানা যায় যে, ইহজীবনের ন্যায় পরজীবনেও শাশ্বত বাণীর উপর প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন আছে। বিভিন্ন হাদীস থেকে জানা যায় যে পরকালীন জীবনের শুরুতে কবরে ‘মুনকার-নাকীর’ নামক মালাকদ্বয়ের প্রশ্নের মাধ্যমে এ প্রতিষ্ঠা প্রমাণিত হবে।

অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন:


وَلَوْ تَرَى إِذِ الظَّالِمُونَ فِي غَمَرَاتِ الْمَوْتِ وَالْمَلائِكَةُ بَاسِطُو أَيْدِيهِمْ أَخْرِجُوا أَنْفُسَكُمُ الْيَوْمَ تُجْزَوْنَ عَذَابَ الْهُونِ بِمَا كُنْتُمْ تَقُولُونَ عَلَى اللَّهِ غَيْرَ الْحَقِّ وَكُنْتُمْ عَنْ آَيَاتِهِ تَسْتَكْبِرُونَ


‘‘যদি তুমি দেখতে, যখন জালিমগণ মৃত্যু যন্ত্রণায় থাকবে এবং মালাকগণ হাত বাড়িয়ে বলবে: ‘তোমাদের প্রাণ বের কর, তোমরা আল্লাহ সম্বন্ধে অন্যায় বলতে ও তাঁর নিদর্শন সম্বন্ধে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করতে, সে জন্য আজ তোমাদেরকে অবমাননাকর শাস্তি প্রদান করা হবে।’’[2]

এ আয়াত থেকে মৃত্যুকালীন শাস্তি এবং মৃত্যুর পরেই- সেদিনেই- যে শাস্তি প্রদান করা হবে তার বিষয়ে জানা যায়। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন:


وَحَاقَ بِآَلِ فِرْعَوْنَ سُوءُ الْعَذَابِ النَّارُ يُعْرَضُونَ عَلَيْهَا غُدُوًّا وَعَشِيًّا وَيَوْمَ تَقُومُ السَّاعَةُ أَدْخِلُوا آَلَ فِرْعَوْنَ أَشَدَّ الْعَذَابِ


‘‘কঠিন শাস্তি পরিবেষ্টন করল ফিরাউনের গোষ্ঠীকে। সকাল সন্ধ্যায় তাদের উপস্থিত করা হয় আগুনের সামনে এবং যেদিন কিয়ামাত ঘটবে সেদিন (বলা হবে:) ফিরাউনের গোষ্ঠীকে প্রবেশ করাও কঠিন শাস্তির মধ্যে।’’[3]

এ কথা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, কিয়ামাতের পূর্বেও কাফিরগণকে শাস্তি প্রদান করা হবে এবং সকাল-সন্ধ্যায় আগুনের সামনে তাদের উপস্থিত করা হবে।

কিয়ামাত দিবসের বর্ণনা প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন:


يَوْمَ لا يُغْنِي عَنْهُمْ كَيْدُهُمْ شَيْئًا وَلا هُمْ يُنْصَرُونَ وَإِنَّ لِلَّذِينَ ظَلَمُوا عَذَابًا دُونَ ذَلِكَ وَلَكِنَّ أَكْثَرَهُمْ لا يَعْلَمُونَ


‘‘যে দিন তাদের ষড়যন্ত্র তাদের কোনো কাজে লাগবে না এবং তাদেরকে সাহায্যও করা হবে না। আর যালিমগণের জন্য রয়েছে এর পূর্বের বা নিম্নের শাস্তি; কিন্তু তাদের অধিকাংশই জানে না।’’[4]

এ আয়াতও কিয়ামাতের পূর্বের শাস্তির কথা প্রমাণ করে। পাশাপাশি অসংখ্য হাদীসে মৃত্যুর সময়ের, মৃত্যুর পরের এ সকল শাস্তি, পুরস্কার ইত্যাদির বিষয়ে জানানো হয়েছে। এ সকল হাদীস থেকে জানা যায় যে, মৃতব্যক্তিকে কবরে রাখার পরে তার ‘রূহ’ তাকে ফেরত দেওয়া হবে এবং তাকে ‘মুনকার ও নাকীর’ নামক ফিরিশতাগণ প্রশ্ন করবেন তার প্রতিপালক, তার দীন ও তার নবী সম্পর্কে। মুমিন ব্যক্তি এ সকল প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম হবেন। মুনাফিক বা কাফির এ সকল প্রশ্নের উত্তর দিতে অক্ষম হবে। পাপী ও অবিশ্বাসীদেরকে কবরে বিভিন্ন প্রকারের শাস্তি ভোগ করতে হবে, তন্মধ্যে রয়েছে ‘কবরের চাপ’। কবরের মাটি চারিদিক থেকে কবরস্থ ব্যক্তিকে চাপ দেওয়ার মাধ্যমে শাস্তি প্রদান করবে। পক্ষান্তরে নেককার মুমিনগণ কবরে অবস্থানকালে শান্তি ও নিয়ামত ভোগ করবেন।

সাধারণভাবে এ অবস্থাকে ‘কবরের’ অবস্থা বলা হয়। তবে ‘কবর’ বলতে মৃত্যু ও কিয়ামাতের মধ্যবর্তী অবস্থাকেই বুঝানো হয়। কোনো ব্যক্তি কোনো কারণে কবরস্থ না হলেও সে এ সকল শাস্তি বা পুরস্কার লাভ করে। কুরআনে বলা হয়েছে:


حَتَّى إِذَا جَاءَ أَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ رَبِّ ارْجِعُونِ لَعَلِّي أَعْمَلُ صَالِحًا فِيمَا تَرَكْتُ كَلا إِنَّهَا كَلِمَةٌ هُوَ قَائِلُهَا وَمِنْ وَرَائِهِمْ بَرْزَخٌ إِلَى يَوْمِ يُبْعَثُونَ.


‘‘যখন তাদের কারো মৃত্যু উপস্থিত হয় তখন সে বলে, হে আমার প্রতিপালক, আমাকে পুনরায় প্রেরণ কর; যাতে আমি সৎকর্ম করতে পারি যা আমি পূর্বে করি নি। না, এ হওয়ার নয়। এ তো তার একটি উক্তি মাত্র। তাদের সম্মুখে ‘বারযাখ’ (প্রতিবন্ধক বা পৃথকীকরণ সময়কাল) থাকবে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত।’’[5]

ইমাম আবূ হানীফা এ বিষয়ে আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাআতের বিশ্বাস সংক্ষেপে এখানে ব্যাখ্যা করেছেন।

কবর আযাব প্রসঙ্গে তিনি ‘আল-ফিকহুল আবসাত’-এ বলেন:


من قال لا أعرف عذاب القبر فهو من الجهمية الهالكة لأنه أنكر قوله تعالى: "سَنُعَذِّبُهُمْ مَرَّتَيْنِ"، "ثُمَّ يُرَدُّونَ إِلَى عَذَابٍ عَظِيمٍ"، يعني عذاب القبر وقوله تعالى: "وَإِنَّ لِلَّذِينَ ظَلَمُوا عَذَابًا دُونَ ذَلِك"، يعني في القبر


‘‘যদি কেউ বলে: আমি কবরের আযাব জানি না তবে সে ধ্বংসগ্রস্ত জাহমীদের দলভুক্ত। কারণ, সে কুরআনের বক্তব্য অস্বীকার করেছে। আল্লাহ বলেন: ‘‘অচীরেই আমি তাদেরকে শাস্তি প্রদান করব দু’বার’’ ‘‘এরপর তাদেরকে কঠিন আযাবের দিকে নেওয়া হবে’’- অর্থাৎ কবরের আযাব। আল্লাহ আরো বলেছেন: ‘‘আর যালিমগণের জন্য রয়েছে এর পূর্বের শাস্তি...’’[6], অর্থাৎ কবরের শাস্তি।’’[7]

[1] সূরা (১৪) ইবরাহীম: ২৭ আয়াত।

[2] সূরা (৬) আন‘আম: ৯৩ আয়াত।

[3] সূরা (৪০) গাফির/মুমিন: ৪৫-৪৬ আয়াত।

[4] সুরা (৫২) তূর: ৪৬-৪৭ আয়াত।

[5] সূরা (২৩) মুমিনুন: ৯৯-১০০ আয়াত।

[6] সূরা (৯) তাওবা: ১০১ আয়াত এবং সূরা (৫২) তূর: ৪৭ আয়াত।

[7] ইমাম আবূ হানীফা, আল-ফিকহুল আবসাত (আলিম ওয়াল মুতাআল্লিম-সহ), পৃষ্ঠা ৫২।