ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
আল-ফিকহুল আকবর ইসমাতুল আম্বিয়া, সাহাবায়ে কেরাম, তাকফীর, সুন্নাত ও ইমামাত ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.)
৮. মোজার উপর মাস্হ করা

মোজা বুঝাতে আরবীতে দুটি শব্দ রয়েছে: খুফ্ফ (الخف) অর্থাৎ চামড়ার মোজা এবং জাওরাব (الجورب) অর্থাৎ কাপড়, পশম ইত্যাদির মোজা। ‘জাওরাব’-এর উপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মাসহ করেছেন কিনা সে বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। কোনো কোনো সাহাবী তা করেছেন। বিষয়টি নিয়ে ফকীহগণ মতভেদ করেছেন। ইমাম মুহাম্মাদ উল্লেখ করেছেন যে, ইমাম আবূ হানীফার মতে ‘জাওরাব’-এর উপর মাসহ করা বৈধ নয়। ইমাম আবূ ইউসুফ ও মুহাম্মাদের মতে ‘জাওরাব’ যদি পুরু হয়, পায়ের চামড়া প্রকাশ না করে তবে তার উপর মাসহ করা বৈধ। ইমাম যাইলায়ী উল্লেখ করেছেন যে, ইমাম আযম মৃত্যুর পূর্বে নিজ মত পরিত্যাগ করে তাঁর ছাত্রদ্বয়ের মত গ্রহণ করেন।[1]

পক্ষান্তরে বহুসংখ্যক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, ওযু অবস্থায় চামড়ার মোজা পরিধান করা হলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ওযূ করার সময় মোজা না খুলে মোজার উপর আদ্র হাত বুলিয়ে মুছে নিতেন বা মাস্হ করতেন। তিনি স্বগৃহে অবস্থানকারীর জন্য ২৪ ঘণ্টা এবং মুসাফিরের জন্য ৭২ ঘন্টা পর্যন্ত এরূপ মাস্হ করার অনুমতি দিয়েছেন।

খারিজীগণ মোজার উপর মাস্হ করার বৈধতা অস্বীকার করেন। শীয়াগণ মোজাবিহীন পদযুগল মাসহ করা বৈধ বলেন। বিষয়টি কর্মের, আকীদার বিষয় নয়। তবে চামড়ার মোজার উপর মাস্হ মুতাওয়াতির হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। এরূপ বিষয়ের বৈধতা অস্বীকার করার অর্থ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত একটি কর্মকে অবৈধ বলে মনে করা, নিজেদেরকে তাঁর চেয়েও বেশি মুত্তাকী ও কুরআন বুঝার ক্ষেত্রে নিজেদেরকে তাঁর চেয়ে পারঙ্গম বলে মনে করা। এগুলি সবই কুফরের নামান্তর। এজন্যই ইমাম আবূ হানীফা ও অন্যান্য ইমাম বিষয়টি আকীদার মধ্যে উল্লেখ করেছেন।

এখানে ইমাম আবূ হানীফা বলেছেন যে, খুফ্ফ বা চামড়ার মোজার উপর মাস্হ করা সুন্নাত। ওসিয়্যাহ গ্রন্থে তিনি একে ওয়াজিব বলেছেন। তিনি বলেন:


وَنُقِرُّ بِأَنَّ الْمَسْحَ عَلَى الْخُفَّيْنِ وَاجِبٌ لِلْمُقِيْمِ يَوْماً وَلَيْلَةً، وَلِلْمُسَافِرِ ثَلاَثَةَ أَيَّامٍ وَلَيَالِيْهَا؛ لأَنَّ الْحَدِيْثَ وَرَدَ هَكَذَا، فَمَنْ أَنْكَرَهُ فَإِنَّهُ يُخْشَى عَلَيْهِ الْكُفْرُ؛ لأَنَّهُ قَرِيْبٌ مِنَ الْخَبَرِ الْمُتَوَاتِرِ.


‘‘নিজ গৃহে অবস্থানকারী বা মুকীমের জন্য এক দিন এক রাত ও মুসাফিরের জন্য তিন দিন তিন রাত্রি মোজার উপর মাস্হ করা ওয়াজিব বলে আমরা স্বীকার করি। কারণ হাদীসে এরূপই বর্ণিত হয়েছে। যদি কেউ তা অস্বীকার করে তবে তার কাফির হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ তা মুতাওয়াতির হাদীস হওয়ার নিকটবর্তী।’’[2]

অর্থাৎ, মোজার উপর মাস্হ করা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর জীবন-পদ্ধতি ও ইবাদত পদ্ধতির অংশ। তিনি যেভাবে যতটুকু গুরুত্ব দিয়ে তা করেছেন, সেভাবে ততটকু গুরুত্ব দিয়ে তা গ্রহণ করা সুন্নাত। একে সুন্নাহ নির্দেশিত বৈধ কর্ম হিসেবে বিশ্বাস করা ওয়াজিব। মোজার উপর মাস্হ না করলে গোনাহ হয় না। তবে মাস্হ না করে মোজা খুলে পা ধোয়াকে বেশি তাকওয়া মনে করা বা মাস্হ করাকে না-জায়েয মনে করা একটি বিদআত বা নব-উদ্ভাবিত বিশ্বাস। এরূপ আকীদা পোষণকারী সুন্নাহ নির্দেশিত ওয়াজিব আকীদা পরিত্যাগের জন্য পাপী।

[1] মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান, আল-মাবসূত ১/৯১; যাইলায়ী, তাবয়ীনুল হাকায়িক ১/৫২।

[2] ইমাম আবূ হানীফা, আল-ওয়াসিয়্যাহ, পৃ. ৭৮।