এভাবে আমরা নিশ্চিত হই যে, মুহাদ্দিস বা রাবীর বিচার দু-একজন বা অধিকাংশ মুহাদ্দিসের মন্তব্যের ভিত্তিতে হয় না; বরং সামগ্রিক বিচারের মাধ্যমে হয়। আমরা যদি ইমাম আবূ হানীফার বিষয়ে শুবা ইবনুল হাজ্জাজ, ইয়াহইয়া কাত্তান, ইবন মাহদী, ইবন মায়ীন, ইমাম আহমদ, ইমাম বুখারী, নাসায়ী, ইবন হিব্বান, ইবন আদী, উকাইলী সকলের মত সমানভাবে গ্রহণ করি তবে তাঁর বিষয়ে বলতে হবে (صدوق رمي بالإرجاء) সত্যপরায়ণ, মুরজিয়া বলে অভিযুক্ত, অথবা (صدوق له أوهام): সত্যপরায়ণ, তাঁর কিছু ভুল আছে। এক্ষেত্রে তাঁর বর্ণিত হাদীস সহীহ বা হাসান বলে গণ্য হবে।
তবে মুহাদ্দিসগণের নীতিমালার দাবি যে, সমসাময়িক সমালোচকগণের স্বীকৃতি প্রসিদ্ধ হওয়ার পরে কোনো মুহাদ্দিসকে কেউ অনির্ভরযোগ্য বললে তা গ্রহণযোগ্য হয় না, বিশেষত যদি প্রমাণ হয় যে, তা আকীদা বা মাযহাবী বিরোধিতার কারণে। এজন্য দ্বিতীয় শতকের প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিসগণের মতের বিপরীতে ইমাম আহমদ, বুখারী, নাসাঈ, উকাইলী, ইবন হিব্বান, ইবন আদী প্রমুখের মত গ্রহণযোগ্য নয়। দ্বিতীয় শতকের জারহ-তাদীলের ইমামগণের বক্তব্যের আলোকে ইমাম আবূ হানীফাকে ‘সিকাহ’ বা নির্ভরযোগ্য বলা ছাড়া উপাই নেই। বাহ্যত এজন্যই ইবন তাইমিয়া, ইবনুল কাইয়িম, মিযযী, সুবকী, ইবন হাজার প্রমুখ মুহাদ্দিস ইমাম আবূ হানীফাকে প্রসিদ্ধ ফকীহ, ইমাম, হাদীসের ইমাম বা মুসলিমদের ইমাম বলে উল্লেখ করেছেন।[1]
কোনো অবস্থাতেই তাঁকে এবং তাঁর বর্ণিত হাদীস ‘‘দুর্বল’’ বলে গণ্য করা জারহ-তাদীলের মূলনীতি অনুসারে সঠিক নয়। শুবা, ইসরাঈল, ইবনুল মুবারাক, আবূ ইউসূফ, কাত্তান, ইবন মাহদী, ইবন মায়ীন ও দ্বিতীয় শতকের প্রসিদ্ধ ইমামগণের মূল্যায়ন বিচার না করে তৃতীয় বা পরবর্তী শতকগুলোর মুহাদ্দিসদের কয়েক ডজন বক্তব্য একত্র করে ইমাম আবূ হানীফাকে দুর্বল বলা কখনোই ইলমুল হাদীসের মূলনীতি সমর্থিত নয়। এরূপ বিচার করলে বুখারী, মুসলিম ও অন্যান্য মুহাদ্দিস কর্তৃক ‘‘নির্ভরযোগ্য’’ বলে স্বীকৃত অনেক রাবীকেই দুর্বল বলতে হবে এবং সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের অনেক হাদীসকেই দুর্বল বলতে হবে।