মুসলিম উম্মাহর প্রসিদ্ধ চার মুজতাহিদ ফকীহের মধ্যে ইমাম আবূ হানীফা (৮০-১৫০ হি) প্রথম। তিনি ছিলেন তাবিয়ী প্রজন্মের। ইমাম মালিক ইবন আনাস (৯৩-১৭৯ হি) ও ইমাম মুহাম্মাদ ইবন ইদরীস শাফিয়ী (১৫০-২০৪ হি) উভয়ে তাবি-তাবিয়ী প্রজন্মের। আর ইমাম আহমদ ইবন মুহাম্মাদ ইবন হাম্বাল (১৬৪-২৪১হি) ছিলেন তাবি-তাবিয়ীদের ছাত্র পর্যায়ের। রাহিমাহুমুল্লাহু: মহান আল্লাহ তাঁদেরকে রহমত করুন। বস্ত্তত তাবিয়ী যুগের ফকীহগণের মধ্যে একমাত্র ইমাম আবূ হানীফাই এরূপ প্রসিদ্ধি লাভ করেছেন।
৪১ হিজরী সালে মুআবিয়া (রা)-এর খিলাফত গ্রহণের মাধ্যমে উমাইয়া যুগের শুরু। ৬০ হিজরীতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ইয়াযিদ ইবন মুআবিয়া প্রায় চার বৎসর শাসন করেন (৬০-৬৪ হি)। তার মৃত্যুর পর কয়েক মাস তার পুত্র মুআবিয়া এবং বৎসর খানেক মারওয়ান ইবনুল হাকাম রাজত্ব করেন (৬৪-৬৫ হি)। তার পর তার পুত্র আব্দুল মালিক প্রায় ২১ বৎসর রাজত্ব করেন (৬৫-৮৬ হি)। ১৩২ হিজরী পর্যন্ত পরবর্তী প্রায় ৪৬ বৎসর আব্দুল মালিকের পুত্র, পৌত্র, ভাতিজাগণ রাজত্ব পরিচালনা করেন। ৯৯ থেকে ১০১ হিজরী সাল: প্রায় তিন বৎসর উমার ইবন আব্দুল আযীয খিলাফত পরিচালনা করেন। তাঁর শাসনামল ‘‘খিলাফাতে রাশেদার’’ পর্যায়ভুক্ত বলে গণ্য।
৯৯ হিজরী সাল থেকেই ‘‘নবী-বংশের রাজত্ব’’ শ্লোগানে গোপনে আববাসী আন্দোলন শুরু হয়। ১২৭ হিজরী থেকে প্রকাশ্য বিদ্রোহ ও যুদ্ধ শুরু হয়। ১৩২ হিজরীতে উমাইয়া খিলাফতের পতন ঘটে ও আববাসী খিলাফত প্রতিষ্ঠা পায়। প্রথম আববাসী খলীফা আবুল আব্বাস সাফ্ফাহ প্রায় চার বৎসর (১৩২-১৩৬ হি) এরপর আবূ জাফর মানসূর প্রায় ২২ বৎসর (১৩৬-১৫৮ হি) রাজত্ব করেন। রাষ্ট্রীয় উত্থান-পতন, অস্থিরতা ও পরিবর্তনের পাশাপাশি ধর্মীয় বিশ্বাস ও কর্মেও নানা দল-উপদল জন্ম নেয় এ সময়েই। আভ্যন্তরীণ সমস্যাদি সত্ত্বেও মুসলিম রাষ্ট্র তৎকালীন বিশ্বের অন্যতম শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিল। চীন, রাশিয়া ও ভারতের কিছু অংশ থেকে উত্তর আফ্রিকা ও স্পেন পর্যন্ত- তৎকালীন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি- মুসলিম রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত ছিল। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও জ্ঞানচর্চার ব্যাপক প্রসার ঘটে।
ইমাম আবূ হানীফার জন্মের পূর্বেই আলী (রা)-এর খিলাফতের সময়ে খারিজী ও শীয়া দুটি রাজনৈতিক-ধর্মীয় ফিরকার জন্ম হয়। উমাইয়া যুগের মাঝামাঝি সময় থেকে কাদারিয়া, মুরজিয়া, জাহমিয়া, মুতাযিলা প্রভৃতি ফিরকার উদ্ভব ঘটে। এ সময়েই উমাইয়া খলীফা আব্দুল মালিকের রাজত্বকালে ইমাম আবূ হানীফার জন্ম ও আববাসী খলীফা মানসূরের সময়ে তাঁর ওফাত।