ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
ইসলামের নামে জঙ্গিবাদ ৩. বিভ্রান্তির তাত্ত্বিক পর্যালোচনা ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.)
৩. ৯. ৫. ইসলামী রাষ্ট্র বনাম অনৈসলামিক রাষ্ট্র

আমরা দেখেছি যে, জামাআতুল মুসলিমীন বা ‘‘তাকফীর ওয়াল হিজরা’’ সংগঠন উপনিবেশোত্তর মুসলিম দেশগুলিকে কাফির রাষ্ট্র বলে গণ্য করে। এ বিষয়ে তাদের বিভ্রান্তি আমরা নিম্নরূপে বিন্যস্ত করতে পারি:
(১) আধুনিক মুসলিম রাষ্ট্রগুলি কাফির রাষ্ট।
(২) কাফির রাষ্ট্র উৎখাত করে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা বড় ফরয।
(৩) এ ফরয পালনের জন্য জিহাদই একমাত্র পথ এবং রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য যা কিছু করা হয় সবই জিহাদ বলে গণ্য।
(৪) এ জিহাদ পালনে রাষ্ট্রের নাগরিকদের নির্বিচারে হত্যা করা বৈধ। এভাবে তারা ইসলামী শিক্ষার বিকৃতি সাধন করেছেন। অজ্ঞতা, আক্রোশ ও আবেগ তাদেরকে এ পথে পরিচালিত করে।
অথবা ইসলামকে কলঙ্কিত করতে এবং ইসলামী জাগরণকে থামিয়ে দিতে কৌশলে তাদেরকে বিভ্রান্ত করে এ সকল কথা বলানো হয়েছে। তৃতীয় ও চতুর্থ বিষয়ের বিভ্রান্তি আমরা ইতোপূর্বে আলোচনা করেছি। আমরা দেখেছি যে, জিহাদ ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথ নয়, জিহাদ প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রের নিরাপত্তা রক্ষার পথ। আর জিহাদ শুধু শত্রু বাহিনীর সশস্ত্র যোদ্ধাদের বিরুদ্ধেই পরিচালিত হবে। পারিভাষিক জিহাদ বা রাষ্ট্রীয় যুদ্ধের বাইরে রাষ্ট্র সংস্কার বা রাষ্ট্রে ইসলামী মূল্যবোধ ও বিধিবিধান প্রতিষ্ঠার কর্ম ইসলামী পরিভাষায় জিহাদ নয়, তা হলো ‘‘আল্লাহর পথে দাওয়াত’’ এবং ‘‘ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের নিষেধ’’। একে পারিভাষিক জিহাদ বলে মনে করা বা এজন্য অস্ত্রধারণ ও হত্যা বৈধ মনে করা ইসলামী শিক্ষার কঠিনতম বিকৃতি ছাড়া কিছুই নয়। আমরা এখানে প্রথম ও দ্বিতীয় বিষয় আলোচনা করতে চেষ্টা করব। আর এ বিষয়ক বিভ্রান্তি বুঝতে হলে আমাদেরকে জানতে হবে, কখন আমরা একটি রাষ্ট্রকে ‘‘ইসলামী রাষ্ট্র’’ বলে গণ্য করব এবং কখন আমার একটি রাষ্ট্রকে ‘‘কাফির রাষ্ট্র’’ বা অনৈসলামিক রাষ্ট্র বলে গণ্য করব?

আগেই বলেছি যে, সাধারণ খুটিনাটি বিষয়ে প্রশস্ততা দেওয়ার জন্য মুআমালাত বিষয়ে ইসলামে অনেক বিষয় উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। তারই একটি প্রকাশ হলো ‘‘দারুল ইসলাম’’ বা ইসলামী রাষ্ট্র ও দারুল কুফর বা কুফরী রাষ্ট্র বিষয়ক কোনো সুনির্ধারিত সংজ্ঞা কুরআন-হাদীসে প্রদান করা হয় নি। এখন যদি আমাদের কাউকে ইসলামী বিবাহ ও কুফরী বিবাহ অথবা ইসলামী পরিবার ও কুফরী পরিবারের ‘‘সুনির্ধারিত সংজ্ঞা’’ জিজ্ঞাসা করা হয় তাহলে আমরা দেখব যে, বিষয়টি বেশ প্রশস্ত। পরিপূর্ণ ইসলামী বিবাহের বা পরিবারের যে ধারণা আমাদের রয়েছে তার কিছু বিচ্যুতি হলেই আমরা সে বিবাহ বা পরিবারকে ‘‘কুফরী’’ বলে গণ্য করতে পারছি না। বরং কুফরী বিবাহ বা পরিবারের ঊধ্বে উঠলেই তাকে ‘ইসলামী’ বলে মানতে বাধ্য হচ্ছি, যদিও পুরোপুরি ইসলামী নয় বলে বুঝতে পারছি।


ইসলামী রাষ্ট্রের বিষয়টিও অনুরূপ। কুরআন ও হাদীসে ইসলামী রাষ্ট্রের কোনো সুস্পষ্ট সংজ্ঞা প্রদান করা হয় নি। মহান আল্লাহ বলেন:

وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنْكُمْ وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَيَسْتَخْلِفَنَّهُمْ فِي الْأَرْضِ كَمَا اسْتَخْلَفَ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ وَلَيُمَكِّنَنَّ لَهُمْ دِينَهُمُ الَّذِي ارْتَضَىٰ لَهُمْ وَلَيُبَدِّلَنَّهُمْ مِنْ بَعْدِ خَوْفِهِمْ أَمْنًا يَعْبُدُونَنِي لَا يُشْرِكُونَ بِي شَيْئًا وَمَنْ كَفَرَ بَعْدَ ذَٰلِكَ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ

‘‘তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে তাদেরকে আল্লাহ ওয়াদা করেছেন যে, অবশ্যই তিনি তাদেরকে পৃথিবীতে স্থলাভিষিক্ত করবেন যেমন তিনি স্থলাভিষিক্ত করেছিলেন তাদের পূর্ববর্তীদেরকে এবং তিনি অবশ্যই সুদৃঢ় করবেন তাদের জন্য তাদের দীনকে যা তিনি তাদের জন্য মনোনীত করেছেন এবং তিনি অবশ্যই তাদের ভয়-ভীতিকে শান্তি-নিরাপত্তায় পরিবর্তিত করবেন। তারা আমার ইবাদত করবে, আমার কোনো শরীক করবে না। এরপর যারা অকৃতজ্ঞ হবে তারাই সত্যত্যাগী।’’[1]
অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন:

الَّذِينَ إِنْ مَكَّنَّاهُمْ فِي الْأَرْضِ أَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ وَأَمَرُوا بِالْمَعْرُوفِ وَنَهَوْا عَنِ الْمُنْكَرِ وَلِلَّهِ عَاقِبَةُ الْأُمُورِ

‘‘যাদেরকে আমি পৃথিবীতে ক্ষমতাবান করলে তারা সালাত কায়েম করে, যাকাত প্রদান করে, ন্যায়ের আদেশ করে এবং অন্যায় থেকে নিষেধ করে। আর কর্মসমূহের পরিণাম আল্লাহরই অধীনে।’’[2]
এ আয়াতদ্বয়ে ইসলামী রাষ্ট্রের কিছু বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথম আয়াতে দীনের সুদৃঢ়তা, শান্তি-নিরাপত্তায় দীন পালনের স্বাধীনতা এবং নির্ভয়ে আল্লাহর শিরকমুত্ত ইবাদত করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। দ্বিতীয় আয়াতে সালাত, যাকাত, ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের নিষেধের বিদ্যমানতা ইসলামী রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

এ সকল আয়াতের আলোকে ফকীহগণ দারুল ইসলাম বা ইসলামী রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রকারের সংজ্ঞা দিয়েছেন। এক্ষেত্রে কেউ কেউ মুসলমানদের রাজনৈতিক আধিপত্যকে মূল বলে গণ্য করেছেন এবং বলেছেন যে, দাও‘আত, যুদ্ধ, সন্ধি, স্বাধীনতা বা অন্য যে কোনোভাবে কোনো দেশের রাষ্ট্রক্ষমতা মুসলিমদের হাতে আসলে সে দেশ দারুল ইসলাম।[3] অন্যান্য ফকীহ ইসলামী বিধি বিধানের প্রকাশকে মানদন্ড বলে গণ্য করেছেন। তাঁদের ভাষ্যমতে যে কোনো দেশ, রাষ্ট্র বা জনপদে ইসলামের বিধিবিধান প্রকাশিত থাকলে তা দারুল ইসলাম বা ইসলামী রাষ্ট্র বলে গণ্য।[4]

এখানে লক্ষণীয় যে, ব্যক্তি মুমিনের ক্ষেত্রে যেমন পরিপূর্ণ ও আদর্শ মুমিনের পাশাপাশি কম বা বেশি পাপে লিপ্ত পাপী মুমিনদেরকেও মুসলিম বলে গণ্য করা হয়েছে, তেমনি ইসলামী রাষ্ট্র বা ইসলামী দেশের ইসলামের দাবি গ্রহণে প্রশস্ততা অবলম্বন করা হয়েছে। পাপের প্রকাশ, ইসলামী বিধিবিধানের অবমাননা, ইসলামী বিধান লঙ্ঘন, কুরআন বিরোধী বিধিবিধান বা আকীদা বিশ্বাসের প্রকাশের কারণে রাষ্ট্রকে কাফির রাষ্ট্র বলে গণ্য করা হয় নি। মুসলিম উম্মাহর ফকীহ ও ইমামগণ বারংবার উল্লেখ করেছেন যে, কোনো দেশ বা রাষ্ট্র মুসলিম শাসনাধীন হয়ে ‘‘দারুল ইসলামে’’ পরিণত হওয়ার পর শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন, অমুসলিমদের প্রাধান্য বা অন্য কোনো কারণে পুনরায় ‘‘দারুল কুফর’’ বা ‘‘দারুল হরব’’ অর্থাৎ অনৈসলামিক রাষ্ট্র বা শত্রু রাষ্ট্র বলে গণ্য করার ক্ষেত্রে ব্যাপক সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এ বিষয়ে ফকীহগণের বিভিন্ন মতামত রয়েছে। ইমাম আবূ হানীফা (রাহ) বলেন, তিনটি শর্ত পূরণ হলে ইসলামী রাষ্ট্রকে কাফির রাষ্ট্র বলে গণ্য করা যাবে:
(১) কুফরের বিধিবিধান প্রতিষ্ঠিত হওয়া,
(২) কাফির রাষ্ট্রের সাথে সংযুক্ত হওয়া এবং
(৩) উক্ত রাষ্ট্রের মুসলিম ও অমুসলিম সকল নাগরিকের মুসলিমগণ প্রদত্ত নাগরিক অধিকার ও নিরাপত্তা বাতিল হওয়া।[5]

ইসলামের ইতিহাসে শীয়াগণ সর্বদা শীয়া রাষ্ট্র ছাড়া সকল সরকার ও রাষ্ট্রকে তাগূতী রাষ্ট্র বলে বিশ্বাস করেছেন। পক্ষান্তরে সাহাবীগণ ও তাঁদের অনুসারী আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আলিমগণ কখনোই এ ধরনের মতামত পোষণ করেন নি। এমনকি বাতিনী শিয়া, কারামিতা, ফাতিমী শিয়া ও অন্যান্য গোষ্ঠী যারা প্রকাশ্যে ও সুস্পষ্টভাবে কুরআন-হাদীসের বিধানাবালি ব্যাখ্যা করে অস্বীকার ও অমান্য করত এবং এর ব্যতিক্রম বিধান প্রদান করত তাদের রাষ্ট্রকেও তাগূতী, জাহিলী বা কাফির রাষ্ট্র বলে গণ্য করেন নি। বরং এগুলিকে ইসলামী রাষ্ট্র বলেই গণ্য করেছেন।

রাষ্ট্রীয় বিষয়ে কুরআনের বিধিবিধানের ব্যতিক্রম চলা বা ‘‘আল্লাহর আইনের’’ ব্যতিক্রম বিধান দান উমাইয়া যুগেই শুরু হয়েছে। বিশেষত আববাসী, ফাতিমী, বাতিনী, মোগল ইত্যাদি রাজ্যে ইসলামী বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক সুস্পষ্ট কুফরী বিশ্বাস ও মতবাদকে রাষ্ট্রীয় মতবাদ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, ইসলামের আইন বিচার অনেকাংশেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, এমনকি ইসলামের হারাম অনেক বিষয় বিভিন্ন ব্যাখ্যা করে বৈধ করা হয়েছে এবং বিভিন্ন পর্যায়ে ইহূদী, খৃস্টান, অগ্নিউপাসক বা পৌত্তলিকদের রাষ্ট্রীয় আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আলিমগণ সাধ্যমত এগুলির কঠোর প্রতিবাদ করেছেন, অনেকে সরকারের বিরাগভাজন হয়েছেন, শাস্তিভোগ করেছেন, কিন্তু কখনোই রাষ্ট্র প্রশাসনের এ সকল বিচ্যুতির কারণে এ সকল রাষ্ট্র বা সমাজকে কাফির রাষ্ট্র বা সমাজ বলে গণ্য করেন নি, রাষ্ট্র, সরকার বা তাদের অনুগতদের বা নাগরিকদের কাফির বলে গণ্য করেন নি বা ‘‘ইসলামী রাষ্ট্র’’ প্রতিষ্ঠার জন্য এরূপ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ বা যুদ্ধে লিপ্ত হন নি। বরং এরূপ রাষ্ট্রের আনুগত্য করেছেন, আইন মেনেছেন এবং এদের নেতৃত্বে কাফির রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে জিহাদে শরীক হয়েছেন।

উমাইয়া, আববাসী, স্পেনীয়, খারিজীয়, ফাতেমীয়, কারামিতীয়, বাতিনী, তাতার, মুগল ইত্যাদি সকল যুগের সকল রাষ্ট্রকেই মুসলিম আলিম ও ফকীহগণ দারুল ইসলাম বলে গণ্য করেছেন এবং ইসলামী রাষ্ট্রের সকল বিধান সেখানে প্রয়োগ করেছেন। জুমুআ, জামাত, রাষ্ট্রের আনুগত্য, রাষ্ট্র প্রধানের নির্দেশে ও নেতৃত্বে শত্রুদেশের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জিহাদ ইত্যাদি সকল বিধান এ সকল রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বলে উল্লেখ করেছেন।
বর্তমান বিশ্বের মুসলিম দেশগুলির অবস্থা উমাইয়া যুগ ও পরবর্তী যুগের মুসলিম দেশগুলি থেকে মোটেও ভিন্ন নয়, বরং কিছুটা ভালই বলতে হয়। শাসক নির্বাচন ও রাষ্ট্র পরিচালনায় জনগণের পরামর্শ গ্রহণ, জনগণের নিকট জবাবদিহিতা, মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা, নিরপেক্ষভাবে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও আইন প্রয়োগ ইত্যাদি ইসলামী নির্দেশনা পালনের ক্ষেত্রে এ সকল রাষ্ট্র পূর্ববর্তী রাষ্ট্রগুলি থেকে কিছুটা হলেও উন্নত হয়েছে। এ সকল দেশের অধিকাংশ আইন-কানুন ও বিচার ব্যবস্থা ইসলামী আইন ও বিচার ব্যবস্থা থেকে গৃহীত। ইসলমী বিধানের পরিপন্থী কিছু আইন-কানুনও বিদ্যমান, যেগুলির অপসারণ ও সংশোধনের জন্য মুমিন চেষ্টা ও দাওয়াত অব্যাহত রাখবেন। কিন্তু শাসকদের পাপ, রাষ্ট্র ব্যবস্থার পাপ বা কিছু ইসলাম-বিরোধী আইন-কানুনের জন্য কোনো রাষ্ট্রকে ‘‘দারুল কুফর’’ বা কাফির রাষ্ট্র মনে করার কোনোরূপ ভিত্তি নেই। উপনিবেশোত্তর মুসলিম দেশগুলির স্বৈরাচার, ইসলাম বিরোধী আচরণ ও বিধিবিধান, ধার্মিক মানুষদের প্রতি অত্যাচার ইত্যাদির প্রেক্ষাপটে অনেক আবেগী মুসলিমই অনুভব করেন যে, তার দেশটি একটি অনৈসলামিক দেশ এবং এদেশে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সময়ের দাবি। আবেগ-তাড়িত মতামত বা কর্ম জাগতিক ফল বা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের সহায়ক নয়। আবেগ যাই বলুক না কেন, আমাদেরকে আবেগমুক্ত হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কুরআন-হাদীসের সামগ্রিক নির্দেশনা, ইসলামের ইতিহাসের সকল যুগের রাষ্ট্রগুলির অবস্থা, সেগুলির সংস্কারে আলিম, উলামা, পীর, মাশাইখ ও বুজুর্গগণের কর্মধারার ভিত্তিতে আবেগমুক্ত হয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।


কুরআন-হাদীসের সামগ্রিক নির্দেশনা, উমাইয়া যুগ ও পরবর্তী যুগগুলির বিষয়ে সাহাবী, তাবিয়ী ও তৎপরবর্তী আলিমগণের মতামতের আলোকে আমরা সুনিশ্চিত বুঝতে পারি যে, সমকালীন মুসলিম দেশগুলিকে কাফির রাষ্ট্র বলে গণ্য করার কোনো সুযোগ নেই। সমকালীন কোনো কোনো গবেষক মুসলিম রাষ্ট্র ও ইসলামী রাষ্ট্রের মধ্যে পার্থক্য করেছেন। এ পার্থক্য একান্তই গবেষণা। ইসলামী শরীয়তের বিধান প্রদানের ক্ষেত্রে এ পার্থক্যের কোনো গুরুত্ব নেই। শরীয়তের বিধানের আলোকে এগুলি সবই দারুল ইসলাম। আল্লাহর পথে দাওয়াত বা ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের নিষেধের অংশ হিসেবে মুমিন এ সকল রাষ্ট্রের অন্যায়ের প্রতিবাদ করবেন, সংশোধনের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন, কিন্তু কখনোই রাষ্ট্রীয় আনুগত্য পরিত্যাগ করবেন না বা রাষ্ট্রদ্রোহিতায় লিপ্ত হবেন না।

[1] সূরা (২৪) নূর: আয়াত ৫৫।

[2] সূরা (২২) হজ্জ: আয়াত ৪১।

[3] দেখুন: ইমাম শাফিয়ী, আল-উম্ম ৪/১৯১; ইবনু হাজম, আল-মুহাল্লা ১১/২০০।

[4] দেখুন: সারাখসী, আল-মাসবূত ১০/১৪৪; কাসানী, বাদাইউস সানাইয় ৭/১৩০।

[5] কাসানী, বাদাইউস সানাইয় ৭/১৩০-১৩১; ইবনু আবেদীন, রদ্দুল মুহতার ৩/২৫৩; আল-মাওসূআ আল-ফিকহিয়্যাহ, কুয়েত ২০/২০২।