প্রথম দৃষ্টিতেই যে কোনো পাঠকের কাছে কথাগুলি খুবই আপত্তিকর মনে হবে। জন্ম, বংশ বা ধর্মের কারণে মানুষকে কুকুর বলে অভিহিত করা! শুধুমাত্র বংশ বা ধর্মের কারণে তাকে মানবিক সাহায্য করতে অস্বীকার করা!! একজন খৃস্টধর্ম বিরোধী পাঠক দাবি করতে পারেন যে, এ বক্তব্য দ্বারা জাতিগত বৈষম্য ও জাতিগত বিদ্বেষ চিরস্থায়ী করা হয়েছে। তিনি দাবি করতে পারেন যে, বাইবেলের উপর্যুক্ত সকল গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের মূল দর্শন যীশুর এ কথার মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। কেউ এ দাবীও করতে পারেন যে, বর্তমান যুগে ফিলিস্তিন, ইরাক ও অন্যান্য দেশে গণহতা ও ধ্বংসযজ্ঞের বিষয়ে পোপ কোনো প্রতিবাদ না করে ইসলামের নবীর সমালোচনা করছেন এর কারণও এ ‘কুকুর’ দর্শন। যে দর্শনের মূল হলো, ইহূদীখৃস্টানগণ ঈশ্বরের সন্তান। অন্য সকল মানুষ কুকুরের মতই মানবেতর প্রাণী। কুকুরকে যেমন পচা বা ছেড়া রুটির টুকরো ছুড়ে দেওয়া যায়, তেমনি এদেরকে মাঝে মাঝে কিছু সাহায্য করা যেতে পারে। কিন্তু ঈশ্বরের সন্তানদের স্বার্থের ক্ষতি করে তাদের কোনো উপকার করা যাবে না। যদি ঈশ্বরের সন্তানদের স্বার্থের ক্ষতি হয় তবে লক্ষকোটি সারমেয় সন্তানকে নির্বিচারে হত্যা করতে কোনো অসুবিধা নেই। এছাড়া ঈশ্বরের সন্তানগণ যদি কিছুটা আনন্দ ও তৃপ্তি লাভের জন্য দুচার হাজার বা দুচার লক্ষ সারমেয় সন্তানকে হত্যা করে ফেলেন তাতেও অসুবিধা কী?
বাইবেলে অন্যধর্মের অনুসারীদের ঠান্ডামাথায় হত্যার নির্দেশনা, এমনকি প্রতারণামূলকভাবে ডেকে এনে হত্যা করার নির্দেশনা রয়েছে। একটি ঘটনা দেখুন। ইহূদীদের প্রাচীন রাষ্ট্র ‘‘ইসরায়েলের’’ কিছু নাগরিক ‘‘বাল’’ দেবতার উপাসনা করত। ঈশ্বরের প্রিয়পাত্র ইস্রায়েলের সম্রাট যেহূ (Jehu, the son of Jehoshaphat) ঈশ্বরের সঠিক ধর্ম প্রতিষ্ঠার জন্য ‘‘বাল’’ দেবতার উপাসকদের ঠান্ডা মাথায় গণহত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি ঘোষণা দেন যে, সম্রাট যেহূ বাল দেবতার সেবা করবেন। এ জন্য তিনি বাল দেবতার উপাসকদের এক মহা- সমাবেশের আয়োজন করেন। সেখানে তিনি দেবতার উদ্দেশ্যে ভেট ও উৎসর্গের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু গোপনে উৎসবকেন্দ্র ও মন্দিরের চারিপাশে সেনাবাহিনী নিয়োগ করে উৎসবরত সকল ‘‘বিধর্মী’’-কে তরবারীর আঘাতে হত্যা করতে নির্দেশ দেন। এমনকি তিনি তাঁর সৈন্যদের বলেন, যদি একজন বিধর্মীও জীবন নিয়ে পালায় তবে তার বিনিময়ে একজন সৈন্য হত্যা করা হবে। এভাবে হাজার হাজার নিরীহ নিরস্ত্র নারী-পুরুষকে কেবলমাত্র ধর্মীয় বিরোধিতার কারণে কোনোরূপ সুযোগ না দিয়ে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করেন।[1]
অন্য ঘটনায় বাইবেলীয় নবী এলিজাহ (Prophet Elijah) বাল দেবতার ৪৫০ জন উপাসককে ধরে ঠান্ডা মাথায় জবাই করেন। [2] এ সকল ঘটনা থেকে খৃস্টান পোপ, পাদরী ও বিশপগণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, খৃস্টান দেশে বসবাস রত সকল অখৃস্টান নাগরিক এবং ভিন্নমতাবলম্বী খৃস্টানদেরকে হত্যা ও নির্মূল করা তাদের ধর্মীয় দায়িত্ব ও অধিকার। প্রসিদ্ধ আরব প্রটেস্ট্যান্ট পাদরি আইজাক বাদারকান ১৮৪৯ খৃস্টাব্দে প্রকাশিত তার লেখা ‘‘পুস্তিকা ত্রয়োদশ’’ গ্রন্থে লিখেছেন: রোম থেকে আরবী ভাষায় প্রকাশিত বাইবেল ইনডেক্সের ‘‘হা’’ অক্ষরের মধ্যে ‘‘হারতাকা’’ (heresy) বিষয়ে লেখা হয়েছে: ‘‘ধর্মীয় ভিন্নমতাবলম্বী বা বিদআতী ফিরকার (heretics) বিষয়ে আমাদের দায়িত্ব হলো তাদের নির্মূল ও নিশ্চিহ্ন করা; কারণ সম্রাট যেহূ প্রতারণার মাধ্যমে বাল দেবতার অনুসারীদের জমায়েত করে হত্যা করেছেনা এবং নবী এলিজাহ বাল দেবতার অনুসারীদের জবাই করেছেন। এথেকে প্রমাণিত হয় যে, বিধর্মীদের এভাবে হত্যা ও নির্মূল করা আমাদের ধর্মীয় দায়িত্ব।
খৃস্টানগণ বিশ্বাস করেন যে, ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার প্রেরণায় ‘‘পোপ’’ নিষ্পাপ, নির্ভুল ও অভ্রান্ত (infallible) । তাঁর সিদ্ধান্তই ঈশ্বরের সিদ্ধান্ত। আর এরূপ অভ্রান্ত পোপগণের নেতৃত্বে খৃস্টধর্ম ও খৃস্টীয় চার্চ বিধর্মী নির্মূলের এ মহান দায়িত্ব সর্বোত্তমভাবেই পালন করেছেন। ৩২৫ খৃস্টাব্দে বাইজান্টাইন সম্রাট কন্সাটনাইন (Constantine) খৃস্টধর্মকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান করেন। সেদিন থেকে প্রায় দেড় হাজার বৎসর পর্যন্ত খৃস্টধর্মের ইতিহাস ধর্মীয় সহিংসতা, হত্যা, অত্যাচার ও জোরপূর্বক ধর্মান্তরের ইতিহাস। ‘‘শূন্য সহনশীলতা’’ (Zero tolerance) প্রদর্শন করে কঠোর বর্বরতার সাথে খৃস্টান চার্চ সকল বিধর্মী ও ভিন্নমতাবলম্বীকে নির্মূল করেছে। আর এজন্যই নোবেল বিজয়ী প্রসিদ্ধ দার্শনিক বাট্রান্ড রাসেল (Bertrand Russell: 1872-1970) বলেন: "You find as you look around the world that every single bit of progress in human feeling, every improvement in the criminal law, every step towards the diminution of war, every step towards better treatment of coloured races, or every mitigation of slavery, every moral progress that there has been in the world, has been consistently opposed by the organized Churches of the world. I say quite deliberately that the Christian religion, as organized in the churches, has been and still is the principal enemy of moral progress in the world.
‘‘বিশ্বের চারিদিকে তাকালে আপনি দেখবেন যে, বিশ্বের যেখানেই মানবীয় অনুভবের যে কোনো ক্ষুদ্রতম অগ্রগতি, অপরাধআইনের যে কোনো উন্নয়ন, যুদ্ধ হ্রাসে যে কোনো পদক্ষেপ, কাল বা অ-সাদা বর্ণের মানুষদের সাথে উন্নততর আচরণের ক্ষেত্রে যে কোনো পদক্ষেপ, দাসপ্রথা বিলুপ্তির যে কোনো প্রচেষ্টা এবং নৈতিক উন্নয়ন যে কোনো অগ্রগতি সাধিত হয়েছে তারই বিরোধিতা করেছে খৃস্টীয় চার্চ নিরবিচ্ছিন্নভাবে। আমি পরিপূর্ণ সতর্কতা ও সুচিন্তিতভাবে বলছি যে, চার্চ পরিচালিত খৃস্টধর্মই বিশ্বের নৈতিক উন্নয়নের প্রধান শত্রু ছিল এবং এখনো আছে।’’[3]
Vlasis Rassias নামক একজন গবেষক (Demolish Them) নামে একটি পুস্তক প্রকাশ করেছেন গ্রীক ভাষায় ২০০০ খৃস্টাব্দে (ISBN 960-7748-20-4) । এ পুস্তকে খৃস্টধর্মের সহিংসতার অনেক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এ সকল সহিংসতার তালিকায় রয়েছে:
Emperor Constantine began a centuries-long run of torture, destruction and extermination of all things not Christian like eradicating ancient Greek temples and stealing their treasures. Subsequent Roman Emperors in Constantinople executed everyone that did not accept the new Christian faith. Then libraries were burned and all contrary teachings outlawed....
For another thousand years, the primary occupation of state-sanctioned Christians was to exterminate those who would not accept the documents constructed into a Bible at the Council of Nicea. In 1493, Spanish monarchs Ferdinand and Isabella issued an edict demanding death for all those who would not accept 'the true faith'. Christopher Columbus and others began slaughtering natives of the Western Hemisphere by the millions, not because the would not accept the faith, but because they could not understand the question, because they could not speak Spanish!"
‘‘খৃস্টান বিশ্বাসের পরিপন্থী সকল কিছুর বিরুদ্ধে সম্রাট কনস্টান্টাইন এক নিপীড়ন, ধ্বংসযজ্ঞ ও নির্মূল অভিযানের শুরু করেন যা শতাব্দীর পর শতাব্দী স্থায়ী হয়। যেমন প্রাচীন গ্রীক মন্দিরগুলি ধ্বংস করা হয় এবং সেগুলির ভান্ডার লুণ্ঠন করা হয়। নতুন খৃস্টীয় ধর্মবিশ্বাস গ্রহণ করতে রাজি নয় এমন সকলকে নির্মূল করেন কন্সটান্টিনোপলের পরবর্তী রোমান শাসকগণ। এরপর লাইব্রেরীগুলি পুড়িয়ে ফেলা হয় এবং খৃস্টীয় বিশ্বাসের বিপরীত সকল কিছু নিষিদ্ধ করা হয়। ...নিকীয়া কাউন্সিলে যে বাইবেল তৈরি করা হয় সে বাইবেল যারা মানে না তাদেরকে নির্মূল করাই ছিল পরবর্তী হাজার বৎসর যাবৎ রাষ্ট্র পরিচালিত খৃস্টানগণের মূল কর্ম।
১৪৯৩ খৃস্টাব্দে স্পেনের সম্রাট ফার্ডিনান্ড ও রাণী ইসাবেলা এক আদেশ জারি করেন যে, যারা ‘সঠিক ধর্ম বিশ্বাস’ (খৃস্টধর্ম) গ্রহণ করবে না তাদেরকে হত্যা করতে হবে। (এ আজ্ঞার ভিত্তিতে) ক্রিস্টোফার কলম্বাস ও অন্যান্যরা আমেরিকায় যেয়ে সেখানকার মিলিয়ন মিলিয়ন বাসিন্দাকে (রেড ইন্ডিয়ান) হত্যা করেন। খৃস্টধর্ম গ্রহণ করতে অস্বীকার করার কারণে তারা তাদেরকে হত্যা করেন নি। বরং স্প্যানিশ ভাষা না জানায় তারা খৃস্টধর্মের বিশ্বাস বুঝতে পারছিল না। এ অপরাধে তারা তাদেরকে হত্যা করেন।’’[4]
শুধু মুসলিম, ইহূদী বা অখৃস্টানদের বিরুদ্ধেই নয়, ভিন্নমতাবলম্বী খৃস্টানদের বিরুদ্ধেও ক্রসেড চালিয়েছেন খৃস্টান ধর্মগুরু পোপগণ এবং একেক যুদ্ধে লক্ষাধিক মানুষ হত্যা করেছেন। আপনারা যে কোনো এনসাইক্লোপীডিয়াতে ক্রুসেড (Crusade), এ্যালবিজেনসিয়ান ক্রুসেড (the Albigensian Crusade), সেন্ট বার্থলমিউস দিবসের গণহত্যা (Massacre of Saint Bartholomew's Day), ইনকুইজিশন (Inquisition), ধর্মের যুদ্ধ (The Wars of Religion), ইহূদী বিরোধিতা (Anti-Semitism) ইত্যাদি আর্টির্কেল পড়লেই অনেক তথ্য জানতে পারবেন। যদিও আধুনিক গ্রন্থগুলিতে বিষয়গুলিকে খুবই হালকা করা হয়, নিহতদের সংখ্যা কম করা হয় এবং ‘‘ধর্ম’’ ও ‘‘চার্চ’’-কে বাঁচিয়ে অন্যদের উপর দায় চাপানোর চেষ্টা করা হয়। তারপরও যেটুক সত্য দেখবেন তাতেই গায়ের লোম শিউরে উঠবে! একেক যুদ্ধ বা হত্যাকান্ডে ১০/২০ হাজার থেকে লক্ষাধিক মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। কখনো যুদ্ধ করে এবং কখনো যুদ্ধ ছাড়াই অতর্কিত হামলা চালিয়ে।
এ হলো ইহূদী-খৃস্টানদের একেকটি ধর্মযুদ্ধের বা ধর্মীয় হত্যাকান্ডের অবস্থা। এ সকল বর্বরতা কখনো খৃস্টান সম্রাটশাসকগণের নেতৃত্বে ঘটেছে এবং পোপগণ তা সমর্থন করেছেন। কখনো স্বয়ং পোপের নেতৃত্বে এরূপ বর্বর নিধনযজ্ঞ শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য আমি পাঠককে আমার লেখা (Jihad of the Holy Bible and Jihad of Muhammad (ﷺ)) গ্রন্থটি পাঠ করতে অনুরোধ করছি।
আধুনিক যুগের ধর্মনিরপেক্ষ (!) ও উদার (!) খৃস্টান বুদ্ধিজীবি ও রাজনৈতিক নেতাদের কথবার্তার মধ্যেও আমরা উপরের মানসিকতার ছায়া দেখতে পাই। আমেরিকার টুইন টাওয়ার ধ্বংসের জন্য আল-কায়েদাকে দায়ী করা হলেও এখন পর্যন্ত মার্কিন প্রশাসন নিজের দেশের আদালতেও তা প্রমাণ করতে পারেন নি। তা সত্ত্বেও ‘‘আল-কায়েদার’’ অপরাধের জন্য সকল মুসলিম দেশ দখল করে নেতাদের হত্যা ও মুসলমানদের জোরপূর্বক খৃস্টান বানানোর দাবিদাওয়া জানাচ্ছেন তাদের অনেকেই। এ বিষয়ে প্রসিদ্ধ মার্কিন সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবী কলামিস্ট অ্যান কাল্টার (Ann Coulter) -এর বক্তব্য আমরা ইতোপূর্বে উদ্ধৃত করেছি।
‘দ্যা সেভেইজ ন্যাশনস’ নামক রেডিও শোতে (১২ মে ২০০৩) প্রচারিত মাইকেল সেভেইজের মতামত পশ্চিমা দেশে বিশেষ করে আমেরিকায় প্রতিদিন পুনরাবৃত্তি করা হয়। তিনি তার শোতে বলেন: ‘‘আমার মনে হয় এই লোকগুলোকে (আরব ও মুসলমানদেরকে) জোর করে খৃস্টান ধর্মে দীক্ষিত করা উচিত। শুধুমাত্র এভাবেই সম্ভবত তাদেরকে মানুষে পরিণত করা যাবে।’’[5] এভাবে আরো অনেক প্রসিদ্ধ পাশ্চাত্য উদার, পরমতসহিষ্ণু ও ধর্মনিরপেক্ষ (?!) রাজনীতিবিদ, ধর্মপ্রচারক ও গবেষক মুসলমানদেরকে জোরপূর্বক খৃস্টধর্মে দীক্ষিত করার উদাত্ত আহবান জানাচ্ছেন! আরেক মার্কিন সিনেটর দাবি করলেন যে, আমেরিকায় যে কোনো সন্ত্রাসী হামলা হলে বুঝতে হবে যে, তা মুসলিমগণ করেছে এবং কোনো প্রমাণ ছাড়ায় সঙ্গে সঙ্গে প্রতিশোধ হিসেবে মুসলিমদের পবিত্র স্থান মক্কা ও মদীনা ধ্বংস করে দিতে হবে। আর এধরনের বুদ্ধিজীবি ও রাজনীতিবিদগণ ক্রমান্বয়ে পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশে নীতি নির্ধারণের দায়িত্ব লাভ করছেন।
অথচ মুসলিম মানস এমনভাবেই তৈরি যে, সে কখনোই অন্য মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার বা কাউকে জোর পূর্বক ধর্মান্তরিত করার কথা চিন্তাও করতে পারে না। আমরা দেখছি যে, সবচেয়ে সহিংস মুসলিম সন্ত্রাসীও অন্যের ধর্মকে অবমাননা করার চেষ্টা করছে না বা অন্য ধর্মের মানুষকে জবরদস্তিকরে মুসলিম বানানোর আহবান করছে না। সুসভ্য, মানবতাবাদী ও যুক্তিবাদী ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ খৃস্টানগণ মুসলিমদের পবিত্র কুরআনকে অপবিত্র করেছে। মানবতাবাদী ও ভালবাসার প্রচারক (?!) খৃস্টান পাদরিগণ কুরআনকে টয়লেটে নিক্ষেপ করার দাবি সম্বলিত ফলক চার্চের সামনে টানিয়ে রাখছেন।[6] তারা মুসলিমদের পবিত্র নবীকে (ﷺ) নিয়ে ঘৃণ্য কার্টুন তৈরি করেছে।
সারা বিশ্বের মুসলিমগণ এ ঘৃণ্য বর্বরতার প্রতিবাদ করেছেন। তাঁরা মার্কিন বা ডেনিশ পতাকায় অথবা এ সব দেশের রাজনীতিবিদদের কুশপুত্তলিকায় অগ্নিসংযোগ করেছেন। কিন্তু কখনোই কোনো মুসলিম খৃস্টানদের ধর্মগ্রন্থের অবমাননা করেন নি। বাজার থেকে একটি বাইবেল কিনে তাতে পেশাব করেন নি বা তাতে অগ্নি সংযোগ করেন নি বা যীশু খৃস্টের অবমাননাকর কার্টুন প্রচার করেন নি। পাশ্চাত্যের সুসভ্য ধর্মনিরপেক্ষ মানুষদের দৃষ্টিতে একেবারে অশিক্ষিত, অসভ্য ও উগ্র কোনো মোল্লাও কখনো খৃস্টানদের ধর্মগ্রন্থকে অপবিত্র করতে বা যীশু নামে কার্টুন তৈরি করতে আহবান করেন নি। পাশ্চাত্যের দৃষ্টিতে সন্ত্রাসী ও উগ্র মৌলবাদীদের একজনকেও আমরা দেখছি না যে, সে খৃস্টানদেরকে জোরপূর্বক মুসলিম বানানোর জন্য আহবান জানাচ্ছে। তারা হয়ত মি. বুশকে হত্যার আহবান করছে। কিন্তু তা তার খৃস্টান হওয়ার কারণে নয়, আমেরিকান হওয়ার কারণে নয় বা গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের সেবক হওয়ার কারণে নয়, বরং তাকে আগ্রাসক, জালিম ও হত্যাকারী বলে মনে করার কারণে। একই কারণে তারা হয়ত আমেরিকা বা ইস্রাইলের ধ্বংসের জন্য আহবান করছে। কিন্তু কখনোই তারা কোনো ইহূদী বা খৃস্টানকে জোরপূর্বক মুসলিম বানানোর জন্য আহবান করছে না।
[1] The Holy Bible, 2 Kings 10/18-28
[2] The Holy Bible, 1 kings 18:40
[3] Bertrand Russell, Why I am not a Christian, pp 20-21, quatted from Dr. Abdul Hamid Qadri, Dimensions of Christianity, pp 40-41.
[4] Nasrine R Karim, War on Terror: What is it? The Independent, Dhaka, 20/02/2009.
[5] আজহারুল ইসলাম, নিন্দিত বিশ্ব, পৃ. ১২৩-১২৪।
[6] আজহারুল ইসলাম, নিন্দিত বিশ্ব, পৃ. ১২৪।