ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
ইসলামের নামে জঙ্গিবাদ ৩. বিভ্রান্তির তাত্ত্বিক পর্যালোচনা ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.)
৩. ৫. বিচার ও হত্যা

বিচারের ক্ষেত্রে নরহত্যা, বিবাহিতের ব্যভিচার ও স্বেচ্ছায় বুঝে শুনে ইসলাম গ্রহণ করার পরে ইসলাম ত্যাগ করলে তাকে মৃত্যুদন্ড দেওয়ার বিধান আছে। এ জন্য অনেক কঠিন শর্ত রয়েছে। বিচারক সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন মৃত্যুদন্ড না দেওয়ার। অপরাধের পূর্ণতার বিষয়ে সামান্যতম সন্দেহ থাকলেও আর মৃত্যুদন্ড প্রদান করা যাবে না। কারণ, বিচারকের ভুলে নিরপরাধের শাস্তি বা কম অপরাধীর বেশি শাস্তি হওয়ার চেয়ে অপরাধীর মুক্তি বা বেশি অপরাধের কম শাস্তি হওয়া বাঞ্চনীয়।
এ বিচার অবশ্যই রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় বিচারকের আদালতে যথাযথ সাক্ষ্য, প্রমাণ ও আত্মপক্ষ সমর্থনের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হতে হবে। মুমিনকে ন্যায়ের আদেশ এবং অন্যায়ের নিষেধ ও পরিবর্তন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাকে অন্যায়ের বিচার বা আইন হাতে তুলে নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় নি। আবূ সাঈদ খুদরী (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন:


مَن رأى مِنكُم مُنكرًا فليغيِّرهُ بيدِهِ ، فإن لَم يَستَطِع فبِلسانِهِ ، فإن لم يستَطِعْ فبقَلبِهِ . وذلِكَ أضعَفُ الإيمانِ


‘‘তোমাদের কেউ যদি কোন অন্যায় দেখে তবে সে তার বাহুবল দিয়ে তা পরিবর্তন করবে। যদি তাতে সক্ষম না হয় তবে সে তার বক্তব্যের মাধ্যমে তা পবিবর্তন করবে। এতেও যদি সক্ষম না হয় তবে সে তার অন্তর দিয়ে তা পরিবর্তন (কামনা) করবে, আর এ ঈমানের দুর্বলতম পর্যায়।’’[1] প্রত্যেক মুমিনেরই দায়িত্ব অন্যায় দেখতে পেলে সাধ্য ও সুযোগ মত তার পরিবর্তন বা সংশোধন করা। যেমন মদপান একটি মুনকার বা অন্যায়। কেউ অন্য কাউকে মদপান করতে দেখলে সম্ভব হলে তা ‘পরিবর্তন’ করবেন। অর্থাৎ তিনি মদপান বন্ধ করবেন। তা সম্ভব না হলে তিনি মুখ দ্বারা তা নিষেধ করবেন। তাও সম্ভব না হলে তিনি অন্তর দিয়ে তা পরিবর্তন করবেন, অর্থাৎ তা পরিবর্তন করার পরিকল্পনা করবেন বা ঘৃণা করবেন। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই মুমিন ‘মদপানের’ অপরাধে উক্ত ব্যক্তিকে বিচার করতে বা শাস্তি দিতে পারবেন না। প্রয়োজনে তিনি উক্ত ব্যক্তিকে আইনের হাতে সোপর্দ করবেন বা মদপানের ইসলামী শাস্তি প্রবর্তনের জন্য দাওয়াত অব্যাহত রাখবেন। কাউকে কোনো অপরাধে লিপ্ত দেখে তাকে বিচারকের নিকট সোপর্দ করে যথাযথ প্রক্রিয়ায় আত্মপক্ষ সমর্থনের মাধ্যমে বিচার ছাড়া কেউ শাস্তি দিতে পারেন না। এ প্রক্রিয়ার বাইরে স্বয়ং রাষ্ট্রপ্রধান বা প্রধান বিচারপতিও কাউকে শাস্তি দিতে পারেন না।
খলীফা উমার (রা) আব্দুর রাহমান ইবনু আউফ (রা) -কে বলেন,

لو رأيت رجلا على حد زنا او سرقة وانت امير فقال شهادتك شهادة رجلا من المسلمين قال صدقت

‘‘আপনি শাসক থাকা অবস্থায় যদি কাউকে ব্যভিচারের অপরাধে বা চুরির অপরাধে রত দেখতে পান তাহলে তার বিচারের বিধান কী? (নিজের দেখাতেই কি বিচার করতে পারবেন?)’’ আব্দুর রাহমান (রা) বলেন, ‘‘আপনার সাক্ষ্যও একজন সাধারণ ২ মুসলিমের সাক্ষ্যের সমান।’’ উমার (রা) বলেন, ‘‘আপনি ঠিকই বলেছেন।’’[2] অর্থাৎ রাষ্ট্রপ্রধান নিজের হাতে বিচার তুলে নিতে পারবেন না। এমনকি তার সাক্ষ্যের অতিরিক্ত কোনো মূল্যও নেই। রাষ্ট্রপ্রধানের একার সাক্ষ্যে কোনো বিচার হবে না। বিধিমোতাবেক দুইজন বা চারজন সাক্ষীর কমে বিচারক কারো বিচার করতে পারবেন না।

অন্য ঘটনায় উমার (রা) রাত্রে মদীনায় ঘোরাফেরা করার সময় একব্যক্তিকে ব্যভিচারে লিপ্ত দেখতে পান। তিনি পরদিন সাহাবীগণকে জিজ্ঞাসা করেন, যদি রাষ্ট্রপ্রধান কাউকে ব্যভিচারে লিপ্ত দেখতে পান তাহলে তিনি কি শাস্তি প্রদান করতে পারবেন? তখন আলী (রা) বলেন, কখনোই না। আপনি ছাড়া আরো তিনজন প্রত্যক্ষ সাক্ষী যদি অপরাধের সাক্ষ্য না দেয় তাহলে আপনার উপরে মিথ্যা অপবাদের শাস্তি প্রয়োগ করা হবে।[3]

[1] মুসলিম, আস-সহীহ ১/৬৯।

[2] বুখারী, আস-সহীহ ৬/২৬২২।

[3] আবদুর রহমান ইবনু আবী বাকর সালিহী (৮৫৬ হি.), আল-কানযুল আকবার ১/২২৭।