আল্লাহ্ তা‘আলার রহমত থেকে সম্পূর্ণরূপে নিরাশ হওয়াও আরেকটি কবীরা গুনাহ্। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
«وَمَنْ يَّقْنَطُ مِنْ رَّحْمَةِ رَبِّهِ إِلاَّ الضَّالُّوْنَ»
‘‘একমাত্র পথভ্রষ্টরাই নিজ প্রভুর করুণা থেকে নিরাশ হয়ে থাকে’’। (হিজ্র : ৫৬)
তিনি আরো বলেন:
«وَلَا تَيْأَسُوْا مِنْ رَّوْحِ اللهِ، إِنَّهُ لَا يَيْأَسُ مِنْ رَوْحِ اللهِ إِلاَّ الْقَوْمُ الْكَافِرُوْنَ»
‘‘তোমরা আল্লাহ্ তা‘আলার করুণা থেকে কখনোই নিরাশ হয়ো না। কারণ, একমাত্র কাফিররাই আল্লাহ্ তা‘আলার করুণা থেকে নিরাশ হয়ে থাকে’’। (ইউসুফ : ৮৭)
আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্ঊদ (রাঃ) বলেন:
أَكْبَرُ الْكَبَائِرِ : الإِشْرَاكُ بِاللهِ وَالَامْنُ مِنْ مَكْرِ اللهِ وَالْقُنُوْطُ مِنْ رَّحْمَةِ اللهِ وَالْيَأْسُ مِنْ رَّوْحِ اللهِ.
‘‘সর্ববৃহৎ পাপ হচ্ছে, আল্লাহ্ তা‘আলার সাথে কাউকে শরীক করা, তাঁর শাস্তি থেকে নিজকে নিরাপদ ভাবা এবং তাঁর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া’’। (‘আব্দুর রায্যাক, হাদীস ১৯৭০১)
তবে মঙ্গলজনক নিয়ম হচ্ছে এই যে, সুস্থতার সময় আল্লাহ্ তা‘আলাকে ভয় পাওয়া এবং অসুস্থতা বা মৃত্যুর সময় আল্লাহ্ তা‘আলার রহমতের আশা করা। আর উভয়টির মধ্যে সর্বদা সমতা বজায় রাখাই তো সর্বোত্তম।
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তাঁর মৃত্যুর তিন দিন আগে বলতে শুনেছি তিনি বলেন:
لَا يَمُوْتَنَّ أَحَدُكُمْ إِلاَّ وَهُوَ يُحْسِنُ الظَّنَّ بِاللهِ عَزَّ وَجَلَّ.
‘‘তোমাদের প্রত্যেকেই যেন আল্লাহ্ তা‘আলার উপর সুধারণা নিয়েই মৃত্যু বরণ করে’’। (মুসলিম ২৮৭৭; আবূ দাউদ ৩১১৩; ইব্নু মাজাহ্ ৪২৪২)
আনাস্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
دَخَلَ عَلَى النَّبِيِّ شَابٌّ وَهُوَ فِيْ الْـمَوْتِ، فَقَالَ: كَيْفَ تَجِدُكَ؟ قَالَ: وَاللهِ يَا رَسُوْلَ اللهِ! إِنِّيْ أَرْجُوْ اللهَ، وَإِنِّيْ أَخَافُ ذُنُوْبِيْ، فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ : لَا يَجْتَمِعَانِ فِيْ قَلْبِ عَبْدٍ فِيْ مِثْلِ هَذَا الْمَوْطِنِ إِلاَّ أَعْطَاهُ اللهُ مَا يَرْجُوْ، وَآمَنَهُ مِمَّا يَخَافُ.
‘‘একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক যুবকের নিকট গেলেন তখন সে মুমূর্ষু অবস্থায়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন: তুমি কি অবস্থায় আছো? সে বললো: হে আল্লাহ্’র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আল্লাহ্’র কসম! আমি আল্লাহ্ তা‘আলার রহমতের আশা করছি এবং নিজের গুনাহ্’র ব্যাপারে ভয় পাচ্ছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: এমন সময় কোন বান্দাহ্’র অন্তরে এ দু’ জিনিস থাকলে আল্লাহ্ তা‘আলা তার আশা পূরণ এবং তার ভয় দূরীভূত করবেন’’। (তিরমিযী ৯৮৩; ইব্নু মাজাহ্ ৪৩৩৭)
মানুষ যতই গুনাহ্ করুক না কেন তবুও সে কখনো আল্লাহ্ তা‘আলার রহমত হতে নিরাশ হতে পারে না। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
«قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِيْنَ أَسْرَفُوْا عَلَى أَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوْا مِنْ رَّحْمَةِ اللهِ، إِنَّ اللهَ يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ جَمِيْعًا، إِنَّهُ هُوَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ، وَأَنِيْبُوْا إِلَى رَبِّكُمْ وَأَسْلِمُوْا لَهُ مِنْ قَبْلِ أَنْ يَّأْتِيَكُمُ الْعَذَابُ ثُمَّ لَا تُنْصَرُوْنَ»
‘‘আপনি আমার বান্দাহ্দেরকে এ বাণী পৌঁছিয়ে দিন যে, হে আমার বান্দাহ্রা! তোমরা যারা গুনাহ্’র মাধ্যমে নিজেদের প্রতি অধিক অত্যাচার- অবিচার করেছো আল্লাহ্ তা‘আলার অনুগ্রহ থেকে কখনো নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদের সকল গুনাহ্ ক্ষমা করে দিবেন। নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। তোমরা নিজ প্রতিপালক অভিমুখী হও এবং তাঁর নিকট আত্মসমর্পণ করো শাস্তির সম্মুখীন হওয়ার বহু পূর্বে। জেনে রাখো, এরপর কিন্তু তোমাদেরকে আর সাহায্য করা হবে না’’। (যুমার : ৫৩-৫৪)
আশা ও ভয়ের সংমিশ্রণকেই ঈমান বলা হয়। নবী ও রাসূলদের ঈমান এ পর্যায়েরই ছিল। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
«إِنَّهُمْ كَانُوْا يُسَارِعُوْنَ فِيْ الْـخَيْرَاتِ وَيَدْعُوْنَنَا رَغَبًا وَّرَهَبًا وَكَانُوْا لَنَا خَاشِعِيْنَ»
‘‘তারা (নবী ও রাসূলরা) সৎকর্মে দৌড়ে আসতো এবং আমাকে ডাকতো আশা ও ভয়ের মাঝে। তেমনিভাবে তারা ছিলো আমার নিকট সুবিনীত’’। (আম্বিয়া : ৯০)
তিনি আরো বলেন:
«أُوْلآئِكَ الَّذِيْنَ يَدْعُوْنَ يَبْتَغُوْنَ إِلَى رَبِّهِمُ الْوَسِيْلَةَ أَيُّهُمْ أَقْرَبُ وَيَرْجُوْنَ رَحْمَتَهُ وَيَخَافُوْنَ عَذَابَهُ إِنَّ عَذَابَ رَبِّكَ كَانَ مَحْذُوْرًا»
’’তারা যাদেরকে ডাকে তারাই তো নিজ প্রতিপালকের নৈকট্য লাভের উপায় অনুসন্ধান করে বেড়ায়। এ প্রতিযোগিতায় যে, কে কতটুকু আল্লাহ্ তা‘আলার নৈকট্য লাভ করতে পারে এবং তারা আল্লাহ্ তা‘আলার দয়া কামনা করে ও তাঁর শাস্তিকে ভয় পায়। আপনার প্রতিপালকের শাস্তি সত্যিই ভয়াবহ’’। (ইসরা/বানী ইসরাঈল : ৫৭)