আল্লাহ্ তা‘আলা যুগে যুগে রাসূল পাঠিয়েছেন, কিতাব অবতীর্ণ করেছেন এবং ভূমন্ডল ও নভোমন্ডল সৃষ্টি করেছেন শুধুমাত্র একটি কারণে। আর তা হচ্ছে সঠিকভাবে তাঁকে চেনা ও এককভাবে তাঁরই ইবাদাত ও আনুগত্য করা। ডাকলে একমাত্র তাঁকেই ডাকা।
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
«وَمَا خَلَقْتُ الْـجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلاَّ لِيَعْبُدُوْنَ»
‘‘আমি জিন ও মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছি একমাত্র আমারই ইবাদাত করার জন্যে’’। (যারিয়াত : ৫৬)
আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন:
«اللهُ الَّذِيْ خَلَقَ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ وَّمِنَ الْأَرْضِ مِثْلَهُنَّ، يَتَنَزَّلُ الْأَمْرُ بَيْنَهُنَّ لِتَعْلَمُوْا أَنَّ اللهَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ، وَأَنَّ اللهَ قَدْ أَحَاطَ بِكُلِّ شَيْءٍ عِلْمًا»
‘‘আল্লাহ্ তা‘আলাই সৃষ্টি করেছেন সপ্তাকাশ এবং তদনুরূপ (সপ্ত) জমিনও। ওগুলোতে নেমে আসে তাঁর নির্দেশ। যাতে তোমরা বুঝতে পারো যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা সর্ব বিষয়ে শক্তিমান এবং সব কিছুই নিশ্চিতভাবে তাঁর জ্ঞানাধীন’’। (ত্বালাক্ব : ১২)
সুতরাং আল্লাহ্ তা‘আলার সৃষ্টি এবং তাঁর আদেশের লক্ষ্যই হচ্ছে তাঁর নাম ও গুণাবলীর মাধ্যমে তাঁকে চেনা ও একমাত্র তাঁরই ইবাদাত করা। তাঁর সাথে কাউকে শরীক না করা। বরং দুনিয়াতে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা।
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
«لَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلَنَا بِالْبَيِّنَاتِ، وَأَنْزَلْنَا مَعَهُمْ الْكِتَابَ وَالْمِيْزَانَ لِيَقُوْمَ النَّاسُ بِالْقِسْطِ»
‘‘নিশ্চয়ই আমি রাসূলদেরকে পাঠিয়েছি স্পষ্ট প্রমাণসহ এবং তাঁদের সঙ্গে নাযিল করেছি কিতাব ও তুলাদন্ড তথা ন্যায়-নীতি পরিমাপক জ্ঞান। যেন মানুষ ইন্সাফের উপর সুপ্রতিষ্ঠিত হতে পারে’’। (হা’দীদ : ২৫)
মানবস্রষ্টার প্রতি তার বান্দাহ্’র একান্ত সুবিচার হচ্ছে একমাত্র তাঁরই ইবাদাত করা ও তাঁর সাথে কাউকে শরীক না করা।
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
«إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيْمٌ»
‘‘নিশ্চয়ই শির্ক বড় যুলুম’’। (লুক্বমান : ১৩)
সুতরাং যে কাজই উক্ত উদ্দেশ্যের চরম বিরোধী তাই মহাপাপ এবং যে কোন পাপই উক্ত বিরোধীতার মানানুসারে ছোট বা বড় বলে বিবেচিত হয়। ঠিক এরই বিপরীতে যে কাজই উক্ত উদ্দেশ্যকে দুনিয়ার বুকে বাস্তবায়ন করতে সত্যিকারার্থে সহযোগিতা করবে তাই হবে অবশ্য করণীয় অথবা ঈমান ও ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ রুকন।
উক্ত সূত্র বুঝে আসলেই আপনি বুঝতে পারবেন সকল ইবাদাত ও গুনাহ্’র পরস্পর তারতম্য।
শির্ক যখন উক্ত উদ্দেশ্যের চরম বিরোধী অতএব তা বিনা বাক্যে সর্ববৃহৎ মহাপাপ। তাই আল্লাহ্ তা‘আলা মুশ্রিকের উপর জান্নাত হারাম করে দেন এবং তার জান, মাল ও পরিবারবর্গ তাওহীদপন্থীদের জন্য হালাল করেন। কারণ, সে যখন আল্লাহ্ তা‘আলার একচ্ছত্র গোলামি ছেড়ে দিয়েছে তখন তিনি তাকে ও তার অনুগত পরিবারবর্গকে তাঁর তাওহীদপন্থী বান্দাহ্দের গোলামি করতে বাধ্য করেছেন। তেমনিভাবে আল্লাহ্ তা‘আলা মুশ্রিকের কোন নেক আমল কবুল করবেন না এবং তার ব্যাপারে কিয়ামতের দিন কারোর কোন সুপারিশ গ্রহণ করা হবে না। আখিরাতে তার কোন ফরিয়াদ শুনা হবে না এবং সে দিন তার কোন গুনাহ্ ক্ষমা করা হবে না। কারণ, সে আল্লাহ্ তা‘আলার শানে নিতান্ত মূর্খতার পরিচয় দিয়েছে এবং তাঁর প্রতি চরম অবিচার করেছে।
কেউ বলতে পারেন: যারা আল্লাহ্ তা‘আলাকে পাওয়ার জন্য দুনিয়ার কোন ব্যক্তি বা বস্ত্তকে মাধ্যম বানিয়েছে তারা তো সত্যিকারার্থে আল্লাহ্ তা‘আলাকে অধিক সম্মান করে। কারণ, তারা মনে করে, আল্লাহ্ তা‘আলা বড় মহীয়ান। সুতরাং কোন মাধ্যম ছাড়া সে মহীয়ানের নিকটবর্তী হওয়া যাবে না। তবুও আল্লাহ্ তা‘আলা তাদের প্রতি এতো অসন্তুষ্ট কেন?
উত্তরে বলতে হয়: শির্ক প্রথমত: দু’ প্রকার:
১. যা আল্লাহ্ তা‘আলার মহান সত্তা, তাঁর নাম, কাম ও গুণাবলীর সাথে সম্পৃক্ত।
২. যা তাঁর ইবাদাত ও তাঁর সঙ্গে সঠিক আচার-আচরণের সাথে সম্পৃক্ত। যদিও উক্ত মুশ্রিক এমন মনে করে যে, আল্লাহ্ তা‘আলা নিজ সত্তা, কর্ম ও গুণাবলীতে একক। তাঁর কোন শরীক নেই।
প্রথমোক্ত শির্ক আবার দু’ প্রকার: