ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
হজ সফরে সহজ গাইড উমরাহ মুহাম্মাদ মোশফিকুর রহমান
মসজিদুল হারামের প্রচলিত অনিয়ম, ভুলত্রুটি ও বিদ‘আত
  • মসজিদের ভেতরে নারী-পুরুষ পাশাপাশি বসেন, সালাত পড়েন। অনেক পুরুষ তার স্ত্রীর হাত ধরে, কাঁধে হাত দিয়ে মসজিদের বাইরে এমনভাবে ঘুরে বেড়ান যেন তারা অবকাশ যাপনে এসেছেন!
  • মসজিদের ভেতরে খোলা পরিবেশে নারী ও পুরুষেরা ঘুমান এবং ঘুমের সময় তাদের পর্দার ব্যাপারে খেয়াল থাকে না।
  • অনেকে মসজিদের ভেতরে গভীর ঘুমের পর অযু ছাড়াই সালাতের জন্য দাঁড়িয়ে যান।
  • মসজিদের প্রবেশদ্বারের ভেতরে ঢ়ুকে দরজার সামনেই কিছু মহিলা বসে পড়েন, এতে অনেক মানুষ সেই স্থানের দরজা দিয়ে বের হতে সমস্যায় পড়েন। হজযাত্রীদের ভিড় সামলানোর জন্য মাসজিদুল হারামের ব্যবস্থাপনা ভালো হওয়া সত্ত্বেও তাদের হিমশিম খেতে হয়।
  • জুতা ও স্যান্ডেল রাখার পর্যাপ্ত শেলফ থাকা সত্ত্বেও অনেকে মসজিদের ভেতরে যত্রতত্র জুতা-স্যান্ডেল ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখেন।
  • অনেকেই জানেন না মসজিদে নারী পুরুষ পাশাপাশি দাঁড়িয়ে কিংবা মহিলার সরাসরি পেছনে পুরুষের দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করা ঠিক নয়।
  • অনেক নারী-পুরুষই ভালোভাবে কাতারবদ্ধ হয়ে দাঁড়ান না এবং ভালোভাবে কাতার সোজা করেন না ও সামনের কাতার আগে পূরন করেন না।
  • সালাতের সময় পুরুষদের কাপড় টাখনুর নিচে থাকে, সতর খোলা থাকে এবং মহিলাদের পা, মাথা অনাবৃত থাকে।
  • অনেক বৃদ্ধ মহিলা ও পুরুষের এস্কেলেটরে চড়ার অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে পড়ে গিয়ে নিজেরা আহত হন এবং অন্যকে আহত করেন।
  • অনেকে সঠিকভাবে অযু করতেও জানেন না। অনেকে অযু করার পরও ইহরাম অবস্থায় তাদের হাঁটু বের করে রাখেন।
  • অনেকে ইহরাম অবস্থায় মসজিদুল হারামের বাইরের চত্তরে ধুমপান করেন।
  • সালাত শেষ করে অনেকে মসজিদের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন, এর ফলে অনেক মুসল্লি বের হতে পারেন না।
  • অনেকে তাওয়াফের মাতাফ এলাকায় সালাতের জন্য দাঁড়িয়ে পড়েন ও তাওয়াফকারীদের তাওয়াফে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন।
  • অনেকে যমযমের পানি পান করার স্থানে যমযমের পানি দিয়ে অযু করেন।
  • অনেকে আবার সা‘ঈ এলাকার মধ্যেও জুতা পরে হাঁটেন।
  • অনেকে মসজিদের ভেতরে খাওয়া-দাওয়া করে অপরিস্কার করে ফেলে।
  • তাওয়াফ ও সা‘ঈ করার সময় নারী-পুরুষ একত্রে সমবেত কণ্ঠে উচ্চস্বরে তালবিয়াহ ও দো‘আ পাঠ করেন।
  • অনেক মহিলাই সঠিকভাবে হিজাব পরতে জানেন না। অনেকে আবার আকর্ষণীয় হিজাব পরেন। অনেক মহিলাই মাথা ও পা খোলা রাখেন।
  • মসজিদে যমযমের নরমাল পানি (Not cold) ঠান্ডা পানির চেয়ে সংখ্যায় অপ্রতুল। অনেকে পানি পান করার সময় পানি নষ্ট করেন।
  • মসজিদের ভেতরে অনেকে জুতা ও ব্যাগ অরক্ষিত অবস্থায় ফেলে রাখেন এবং পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা এসে সেসব জুতা ও ব্যাগ ভিজিয়ে ফেলেন।
  • তাওয়াফের সময় হাজরে আসওয়াদে চুমু খাওয়ার জন্য অনেকে ধাক্কাধাক্কি, বলপ্রয়োগ ও বৈরি আচরণ করেন।
  • অনেক মহিলা আবেগের তাড়নায় পুরুষদের মাঝেই হাজরে আসওয়াদ চুমু খাওয়ার চেষ্টা করেন।
  • অনেকে আবার কা‘বার দেওয়াল ও গিলাফ জড়িয়ে ধরে বিলাপ কান্নাকাটি করেন। তবে মুলতাযাম এ গিয়ে দো‘আ করা জায়েয আছে।
  • অনেকে কা‘বা ও মাক্বামে ইবরাহীমের দেওয়াল স্পর্শ করেন, চুমু খান এবং পরিধানের কাপড়, রুমাল ও টুপি ঘষতে থাকেন।
  • অনেকে আবার সা‘ঈ করার সময় সিসিটিভি ক্যামেরার উদ্দেশ্যে হাই... হ্যালো.. বলেন ও গল্পগুজব করেন।
  • সা‘ঈ করার সময় অনেকে সাফা-মারওয়ার দিকে হাত উচু করে দো‘আ করেন।
  • সালাত শেষ হওয়ার পরপরই অনেকে মসজিদ থেকে বের হওয়ার জন্য তাড়াহুড়া শুরু করেন, ঠিক একই সময়ে বাইরে থেকে অনেকে ভিতরে প্রবেশের চেষ্টা করেন। এতে করে মারাত্নক অরাজকতা ও চাপ সৃষ্টি হয়।
  • মসজিদের বাইরে বোরখা পরা মহিলা ও ছোট মেয়েরা হাত কাটা ভাব দেখিয়ে অসাধু উপায়ে সাহায্য প্রার্থনা করে।
  • অনেকে শপিং মলে ঘুরাঘুরি, কেনাকাটা ও ফুড কোর্ট এ খাওয়া দাওয়া করে সময় অপচয় করেন যা ইবাদতের মনোযোগ ও একাগ্রতা নষ্ট করে।
  • অনেককে দেখবেন টানা নফল সালাত আদায় করে যাচ্ছেন, কারণ তার সারা জীবনে যা সালাত কাজা করেছেন তা তুলে ফেলছেন এখানে এবং সাথে সাথে আগামীতে যদি সালাত কাজা হয়ে যায় তাও তুলে ফেলছেন আগেভাগে!
  • অনেকের মাঝে এমন ভুল ধারণা প্রচলিত আছে যে, কা‘বার ঘরের দিকে পিছন দিক ফিরে বসা ও পিছন ফিরে কুরআন তিলাওয়াত করা যাবে না আবার কা‘বার ঘরের দিকে পা দিয়ে বসা ও ঘুমানো যাবে না।
  • মসজিদের ভেতরে অনেক লোককে দেখবেন সালাতের সময় আপনার সামনে দিয়ে আসা-যাওয়া করছেন। সাধারণত অন্যান্য মসজিদে এধরনের দৃশ্য দেখা যায় না। আশা করি আপনি এ সম্পর্কিত চল্লিশ দিন/মাস/বছরের একটি সহীহ হাদীস শুনে থাকবেন। কিন্তু অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববীর জন্য এ বিষয়টিকে শিথিল করে দেখার বিষয়ের হাদীসটি নিয়ে আলেমগণের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। তাই এক্ষেত্রে আমার পরামর্শ হলো - আপনি সতর্ক থাকুন ও সাবধাণতা অবলম্বন করুন। যখন দেখবেন কেউ সালাত পড়ছেন তখন আপনি যাওয়া-আসার জন্য যতটা সম্ভব বিকল্প পথ খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন। তবে কোনো পথ খুঁজে না পেলে এবং যাওয়া-আসা করা যদি অপরিহার্য হয় তাহলে হেঁটে চলে যান। তবে উদ্দেশ্যহীনভাবে হাঁটাহাটি করবেন না। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সঠিক জ্ঞান দান করুন ও ক্ষমা করুন। আমিন।