- ইহরামের কাপড় পরিধানের আগে সাধারণ পরিচ্ছন্নতার কাজ সেরে নিন - নখ কাটা, লজ্জাস্থানের চুল পরিস্কার, গোঁফ ছোট করা। তবে দাঁড়ি ও চুল কাটবেন না। পরিচ্ছন্নতার এ কাজগুলো করা মুস্তাহাব।[1]
- এরপর গোসল করুন, আর যদি গোসল করা সম্ভব না হয় তাহলে অযু করুন। ঋতুবর্তী মহিলারা গোসল করে সাধারণ কাপড় পরে নিবেন এবং উমরাহ/হজ এর সকল বিধি-বিধান পালন করবেন, তবে ঋতু শেষ না হওয়া পর্যন্ত মসজিদে হারামে প্রবেশ করবেন না, তাওয়াফও করবেন না এবং সালাতও আদায় করবেন না।
ঋতু শেষ হলে তাওয়াফ করে নিবেন ও সালাত আদায় করবেন।
- পুরুষরা ইহরামের কাপড় পড়ার আগে চুলে তেল বা ‘তালবিদ’ দিতে পারেন এবং শরীরে, মাথায় ও দাঁড়িতে সুগন্ধী ব্যবহার করতে পারেন; তবে ইহরাম বাঁধার পর পারবেন না। সুগন্ধী যেন আবার ইহরামের কাপড়ে না লাগে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। লেগে গেলে তা ধুয়ে ফেলবেন। মহিলারা কখনই কোনো অবস্থাতেই সুগন্ধি ব্যবহার করবেন না। মহিলাদের সুগন্ধি ব্যবহার করা হারাম।[2]
- পুরুষরা ইহরামের কাপড় সুবিধা মতো উপায়ে পরতে পারেন তবে এমনভাবে পরবেন যাতে নাভির উপর থেকে হাটুর নিচ পর্যন্ত আবৃত হয়ে যায় এবং ইহরামের কাপড় দিয়ে কাঁধ ও শরীর আবৃত থাকে।
- মহিলারা মুখমণ্ডল এবং হাতের কব্জি খোলা রাখবেন, নেকাব বা বোরকা দ্বারা মুখমণ্ডল সবসময় ঢাকা রাখা যাবে না। তবে গায়ের মাহরাম পুরুষদের সামনে বা মাঝে গেলে তখন মুখমণ্ডল আবৃত করবেন।
- উত্তম হলো, কোনো ফরয সালাতের পূর্বে ইহরামের কাপড় পরা ও সালাত আদায় করা। আর ফরয সালাতের সময় না হলে তাহিয়্যাতুল ওযুর ২ রাকাত সালাত পড়া। সালাতের পর ইহরামের নিয়ত না করে বিমানে উঠবেন। যেহেতু নিয়ত করেন নি তাই তালবিয়াহ পাঠ থেকে বিরত থাকুন।
- যে কোনো ফরয সালাতের পর ইহরাম করা মুস্তাহাব। যদি কোনো ফরয সালাতের পর ইহরাম করা হয়, তাহলে স্বতন্ত্র সালাতের প্রয়োজন নেই। অন্য সময় ইহরাম বাঁধলে ২ রাকাত সালাত আদায় করে নিবেন। এ দু’রাকাত সালাত কি ইহরামের সালাত না তাহিয়াতুল অযুর -এ ব্যাপারে আলেমদের মাঝে মতভেদ আছে। তবে বিশুদ্ধতম ও গ্রহণযোগ্য মত হলো, এটি তাহিয়্যাতুল অযু হিসাবে আদায় করা হবে। ইহরামের জন্য আলাদা কোনো সালাত নেই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরয সালাত আদায়ের পর ইহরামের নিয়ত করেছিলেন।[3]
- মীকাতের কাছাকাছি যখন পৌঁছাবেন তখন ইহরাম করার জন্য প্রস্তুতি নিবেন। পুরুষরা শরীরে তৃতীয় কোনো কাপড় থাকলে তা খুলে রাখবেন, মাথা থেকে টুপি সরিয়ে ফেলবেন। তবে শীত নিবারনের জন্য গায়ে চাদর বা কম্বল ব্যাবহার করতে পারেন।
- মীকাতের স্থান থেকেই উমরাহর নিয়ত করবেন অর্থাৎ ইহরাম করবেন; এমনটি করা ওয়াজিব। মীকাতের কাছাকাছি পৌঁছলে বিমানের পাইলট ঘোষণা দিয়ে জানিয়ে দেবেন। জলদি ইহরাম বাঁধুন কারণ বিমান খুব দ্রুত মীকাত অতিক্রম করে চলে যাবে। অনেকে জেদ্দা বিমানবন্দরে পৌঁছালে নিয়ত করেন ও তালবিয়াহ পাঠ করেন, এমন কাজ করার কোনো নিয়ম নেই।
আপনি যখন মীকাতে কাছাকাছি পৌঁছাবেন কেবল তখনই শুধুমাত্র উমরাহর নিয়ত (হজ এর নয়, যেহেতু আপনি তামাত্তু হজ পালনকারী) করবেন, এমনকি ঋতুবর্তী মহিলারাও মীকাত থেকে উমরাহর নিয়ত করবেন। আপনি মনে মনে বলুন: لَبَّيْكَ عُمْرَةً “লাব্বাইকা উমরাহ’’ অর্থাৎ আমি উমরাহ করার জন্য হাযির’’। অথবা বলুন, اللهم لَبَّيْكَ عُمْرَةً “আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা উমরাহ’’। অর্থাৎ হে আল্লাহ আমি উমরাহ করার জন্য হাযির।”
- এবার স্বশব্দে তাওহীদ সম্বলিত তালবিয়াহ পাঠ শুরু করুন এবং মসজিদে হারামে তাওয়াফ শুরুর আগ পর্যন্ত এ তালবিয়াহ পাঠ চলতে থাকবে।
لَبَّيْكَ اَللهم لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ لَا شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكَ، إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ، لَا شَرِيْكَ لَكَ
‘‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বায়িক, ইন্নাল হামদা ওয়ান্নি‘মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক’’।
‘‘আমি হাযির, হে আল্লাহ! আমি হাযির। আমি হাযির, তোমার কোনো শরীক নেই, আমি হাযির। নিশ্চয় সকল প্রশংসা ও নি‘আমত তোমারই এবং রাজত্বও তোমারই, তোমার কোনো শরীক নেই’’।[4]
- উমরাহ সম্পন্ন করতে না পারার ভয় থাকলে (যদি কোনো প্রতিবন্ধকতা, বাধা অথবা অসুস্থতার কারণে না পারেন) তবে এ দো‘আ পাঠ করবেন:
فَإِنْ حَبَسَنِيْ حَابِسٌ فَمَحِلِّيْ حَيْثُ حَبَسْتَنِيْ
‘‘ফা ইন হাবাসানী হা-বিসুন, ফা মাহিল্লী হায়ছু হাবাসতানি’’।
‘‘যদি কোনো প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হই, তাহলে যেখানে তুমি আমাকে বাধা দিবে, সেখানেই আমার হালাল হওয়ার স্থান হবে’’।[5]
- তালবিয়াহ একটু উচু স্বরেই পাঠ করা উত্তম। তবে তালবিয়াহ খুব উচ্চস্বরে অথবা সমস্বরে পাঠ করবেন না যা অন্যদের বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আর মহিলারা তালবিয়াহ পাঠ করবেন নিচু স্বরে অথবা মনে মনে। এখন আপনার ইহরাম করা হয়ে গেছে; এ ইহরাম করার কাজটি ছিল ফরয।
- তালবিয়াহর মাধ্যমে তাওহীদ চর্চা দৃশ্যমান। একে হজের স্লোগান বলা হয়। তালবিয়াহ বেশি বেশি পড়া মুস্তাহাব। দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে, অযু, বে-অযু; সর্বাবস্থায় তালবিয়াহ পড়া যায়।[6]
- কেউ যদি মীকাত অতিক্রম করে ফেলেন কিন্তু ইহরাম করতে বা উমরাহর নিয়ত করতে ব্যর্থ হন তাহলে আবার উক্ত মীকাতের স্থানে ফিরে গিয়ে ইহরাম করতে হবে। যদি এটা করা সম্ভব না হয় তবে মীকাতের কথা মনে হওয়ার সাথে সাথেই ইহরাম করতে হবে। এমতাবস্থায় এ নিয়ম লঙ্ঘনের জন্য হারাম এলাকার মধ্যে কাফ্ফারা স্বরূপ একটা দম (পশু যবেহ) অবশ্যই করতে হবে। এ পশুর মাংস সম্পূর্ণ মিসকিন ও গরিবদের মাঝে বিলিয়ে দিতে হবে। এ মাংস থেকে কোনো অংশ নিজে গ্রহণ করতে পারবে না।
- অনেকে ইহরাম না করে মীকাত অতিক্রম করে ফেললে আয়েশা মসজিদে গিয়ে উমরাহর নিয়ত করেন ও ইহরাম বাঁধেন - যার কোনো ভিত্তি নেই।
[2] সহীহ বুখারী, হাদসি নং ১৬৩৫
[3] সুনান নাসাঈ
[4] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৪৬০, ৫৯১৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৮৪
[5] মিশকাত, হাদীস নং ২৭১১
[6] ইবন খুযাইমাহ. হাদীস নং ২৬২৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২১৯০