মুসআব ইবনু উমায়ের (রাঃ)-এর শাহাদতের পর আলী (রাঃ)-কে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) পতাকা প্রদান করেন। তিনি প্রাণপণে যুদ্ধ করে যান। সেখানে উপস্থিত অবশিষ্ট সাহাবায়ে কেরামও অতুলনীয় বীরত্বের সাথে প্রতিরোধ ও আক্রমণ করেন। এর দ্বারা অবশেষে এ সম্ভাবনা দেখা যায় যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মুশরিকদের সারিগুলো ভেদ করে ভিড়ের মধ্যে আগত সাহাবায়ে কেরামের দিকে পথ তৈরি করতে পারবেন। তিনি সামনে পা বাড়ালেন এবং সাহাবায়ে কেরামের দিকে আসলেন। সর্ব প্রথম তাঁকে চিনতে পারেন কা‘ব ইবনু মা’লিক (রাঃ)। তিনি খুশীতে চিৎকার করে ওঠেন, ‘হে মুসলিমবৃন্দ! তোমরা আনন্দিত হও, এই যে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)! তিনি তাঁকে ইঙ্গিত করেন, ‘চুপ থাকো, যাতে মুশরিকরা আমার অবস্থান ও অবস্থানস্থলের টের না পায়।’ কিন্তু কা‘ব (রাঃ)-এর আওয়ায মুসলিমগণের কানে পৌঁছেই গিয়েছিল। সুতরাং তারা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর আশ্রয়ে চলে আসতে শুরু করেন এবং ক্রমে ক্রমে প্রায় ত্রিশ জন সাহাবী একত্রিত হয়ে যান।
যখন এ সংখ্যক সাহাবী সমবেত হয়ে যান তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) পাহাড়ের ঘাঁটি অর্থাৎ শিবিরের দিকে যেতে শুরু করেন। কিন্তু এ সরে যাওয়ার অর্থ ছিল, মুশরিকরা মুসলিমগণকে তাদের আয়ত্বের মধ্যে নিয়ে ফেলার যে ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করেছিল তা বিফল হয়ে যাবে। তাই, তারা মুসলিমগণের এ প্রত্যাবর্তনকে ব্যর্থ করার মানসে ভীষণ আক্রমণ শুরু করে দেয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ঐ আক্রমণকারীদের ভীড় ঠেলে রাস্তা তৈরি করেই ফেলেন এবং ইসলামের সিংহদের বীরত্বের সামনে তাদের কোন ক্ষমতাই টিকল না। এরই মধ্যে উসমান ইবনু আব্দুল্লাহ ইবনু মুগীরা নামক মুশরিকদের একজন হঠকারী ঘোড়সওয়ার রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর দিকে অগ্রসর হল এবং বলল, ‘হয় আমি থাকব, না হয় সে থাকবে।’ এদিকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)ও তার সাথে মোকাবালা করার জন্য থেমে গেলেন। কিন্তু মোকাবেলা করার সুযোগ হল না। কেননা তাঁর ঘোড়াটি একটি গর্তে পড়ে গেল। আর ইতোমধ্যে হারিস ইবনু সম্মাহ (রাঃ) তাঁর নিকট পৌঁছে তার পায়ের উপর এমন জোরে তরবারীর আঘাত করলেন যে, সে ওখানেই বসে পড়ল। অতঃপর তাকে জাহান্নামে পাঠিয়ে দিয়ে তিনি তার হাতিয়ার নিয়ে নিলেন এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর খিদমতে হাযির হয়ে গেলেন। কিন্তু এরই মধ্যে আবার আব্দুল্লাহ ইবনু জাবির নামক আর একজন মক্কার ঘোড়সওয়ার হারিস ইবনু সম্মাহ (রাঃ)-কে আক্রমণ করল এবং তাঁর কাঁধের উপর তরবারীর আঘাত করে যখম করে দিল। কিন্তু মুসলিমরা লাফিয়ে গিয়ে তাঁকে উঠিয়ে নিলেন। আর এদিকে মৃত্যুর সঙ্গে ক্রীড়ারত ম©র্দ মুজাহিদ আবূ দুজানা (রাঃ), যিনি আজ লাল পাগড়ী বেঁধে রেখেছিলেন, আব্দুল্লাহ ইবনু জাবিরের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং তাঁকে এমন জোরে তরবারীর আঘাত করেন যে, তার মাথা উড়ে যায়।
কি স্বর্গীয় মাহাত্ম্য যে, এ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চলাকালেই মুসলিমরা তন্দ্রাভিভূত হয়ে পড়েছিলেন। যেমন কুরআন কারীমে বলা হয়েছে যে, এটা ছিল আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে বিশ্রাম ও প্রশান্তি। আবূ ত্বালহাহ (রাঃ) বলেন, ‘উহুদের যুদ্ধের দিন যারা তন্দ্রাভিভূত হয়ে পড়েছিলেন আমিও ছিলাম তাদের মধ্যে একজন। এমনকি, আমার হাত হতে কয়েকবার তরবারী পড়ে যায়। প্রকৃত অবস্থা ছিল এরূপ যে, ওটা পড়ে যাচ্ছিল এবং আমি ধরে নিচ্ছিলাম। আবার পড়ে যাচ্ছিল এবং আবারও আমি ধরে নিচ্ছিলাম।[1]
সার কথা হল, এভাবে মরণপণ করে এ বাহিনী সুশৃঙ্খলভাবে পিছনে সরতে সরতে পাহাড়ের ঘাঁটিতে অবস্থিত শিবির পর্যন্ত পৌঁছে যান এবং বাকী সৈন্যদের জন্যেও এ সুরক্ষিত স্থানে পৌঁছার পথ পরিস্কার করে দেন। সুতরাং অবশিষ্ট সৈন্যরাও এখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট পৌঁছে গেলেন এবং খালিদের বাহিনী রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর বাহিনীর সামনে অকৃতকার্য হয়ে গেল।