ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
আর-রাহীকুল মাখতূম নৈশ ভ্রমণ ও উর্ধ্বগমন বা মি'রাজ (الإِسْــرَاءُ وَالْمِعْــرَاجُ) আল্লামা সফিউর রহমান মোবারকপুরী (রহঃ)
সংবাদের সত্যতা ও শপথকারীদের পশ্চাদ্ধাধাবন (تَأَكَّدَ الْخَبَرُ لَدَى قُرَيْشٍ وَمُطَارَدَةُ الْمُبَايِعِيْنَ):

মক্কার কুরাইশ নেতাগণ সম্ভবতঃ দৃঢ়তার সঙ্গে এটা ধরেই নিয়েছিল যে, এ সংবাদ মিথ্যা। কিন্তু এর অনুসন্ধানে সর্বদা লেগেই থাকল এবং শেষ পর্যন্ত নিঃসন্দেহে আবগত হল যে, অঙ্গীকার গ্রহণের ঘটনা সত্য। এ ঘটনাটি অবগত হওয়ার পর তারা অঙ্গীকার গ্রহণকারীদের প্রতি মারমুখী হয়ে উঠে। কিন্তু যখন তারা এ সংবাদটি অবগত হল তখন অঙ্গীকারাবদ্ধ হাজীগণ নিজ নিজ গৃহাভিমুখে অনেকটা পথ অগ্রসর হয়ে গিয়েছেন। মক্কাবাসীগণ দ্রুতপদে অগ্রসর হয়েও তাঁদের নাগাল পেলনা। অবশ্য সা’দ বিন উবাদাহ এবং মুনযির বিন ‘আমরকে দেখে ফেলে এবং তাদেরকে তাড়া করতে থাকে। কিন্তু মুনযির অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে তাঁদের নাগালের বাইরে চলে যেতে সক্ষম হন। অবশ্য সা’দ বিন উবাদাহ তাদের হাতে ধরা পড়ে যান। তারা তাঁর হাত দুটো তাঁরই পালানের দড়ি দ্বারা গর্দানের পিছনে বেঁধে দেয়। কষ্ট দিতে দিতে মক্কা পর্যন্ত নিয়ে যায়। কিন্তু সেখানে মুত্ব’ঈম বিন আদী এবং হারিস বিন হারব বিন উমাইয়া এসে তাঁকে ছাড়িয়ে দেন। কারণ, তাদের দুজনের যে বাণিজ্য কাফেলা মদীনার পথ দিয়ে যাতায়াত করত তা সায়াদের আশ্রয়েই চলাচল করত। তাঁকে বন্দী করে নিয়ে যাওয়ায় আনসারগণ খুবই বিব্রতবোধ করতে থাকেন এবং তাঁকে মুক্ত করার ব্যাপারে উপযুক্ত ব্যবস্থাবলম্বনের জন্য সলা পরামর্শ করতে থাকেন। ইতি মধ্যে দেখা গেল যে, বন্দী দশা থেকে মুক্ত হয়ে তিনি সঙ্গী সাথীদের নিকট প্রত্যাবর্তন করেছেন। এরপর সকলেই নিরাপদে মদীনায় প্রত্যাবর্তন করলেন।[1]

এটাই হচ্ছে ‘আক্বাবাহর দ্বিতীয় অঙ্গীকার যাকে ‘আক্বাবাহর বড় শপথ বলে অভিহিত করা হয়। এ অঙ্গীকার এমন এক খোলা জায়গায় সম্পাদিত হয়েছিল যা ভালবাসা ও ওয়াদাপালন, সততা, বিচ্ছিন্ন ঈমানদারদের মধ্যে সাহায্য, সহযোগিতা, পারস্পরিক নির্ভরশীলতা, আস্থা ও বিশ্বাস, আত্মত্যাগ ও বীরত্বের উদ্দীপনায় ভরপুর ছিল। ফলে ইমানদার ইয়াসরিববাসীদের অন্তর মক্কার দুর্বল ভাইদের প্রতি দয়ামায়ায় ভরপুর ছিল। মক্কার অধিবাসী ভাইদের সাহায্য করার জন্য তাঁদের অন্তরে উৎসাহ উদ্দীপনার কমতি ছিল না। অধিকন্তু, তাঁদের প্রতি অত্যাচার কারীদের বিরুদ্ধে দারুণ দুশ্চিন্তা ও ক্রোধছিল। তাঁদের অন্তর এ ভাইদের ভালবাসায় ভরপুর ছিল যাদের না দেখে আল্লাহর ওয়াস্তে ভাই নির্ধারণ করেছিল।

আর এ উৎসাহ উদ্দীপনা ও অনুধাবন শুধু একটি কল্পিত আকর্ষণের ফলই ছিল না, যা সময়ের অগ্রগতির সঙ্গে শেষ হয়ে যেতে পারে বরং এর উৎস হচ্ছে আল্লাহর প্রতি ঈমান, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর প্রতি ঈমান ও কিতাবের প্রতি ঈমান। অর্থাৎ যে ঈমান অন্যায় অত্যাচারের বড় থেকে বড় শক্তির কাছেও মাথানত করে না। যে ঈমানেরই বদৌলতে (কারণে) এমন সব যুগান্তকারী কর্ম ও কীর্তিমালা স্থাপিত হয়েছে এবং মানবজাতির ইতিহাসে এমন সব অধ্যায় রচিত হয়েছে যার তুলনায় অতীত কিংবা বর্তমান কোন কালেই মিলে না। সম্ভবতঃ ভবিষ্যতেও মিলবে না।

[1] যা’দুল মা’আদ ২য খন্ড ৫১ পৃঃ। ইবনে হিশাম ১ম খন্ড ৪৪৮-৪৫০ পৃঃ।