অতি বড় দুশমনও রাসূল (ছাঃ)-কে কখনো অসৎ বলেনি। কিন্তু তারা কুরআনী বিধানকে মানতে রাযী হয়নি। স্বেচ্ছাচারিতায় অভ্যস্ত পুঁজিবাদী গোত্রনেতারা ইসলামের পুঁজিবাদ বিরোধী ও ন্যায়বিচারভিত্তিক অর্থনীতি, মানবিক সমাজনীতি এবং আখেরাতভিত্তিক জীবন নীতিকে মেনে নিতে পারেনি। আর সে কারণেই তো আবু জাহল রাসূল (ছাঃ)-কে বলেছিল, إِنَّا لاَ نُكَذِّبُكَ وَلَكِنْ نُكَذِّبُ بِمَا جِئْتَ بِهِ ‘আমরা তোমাকে মিথ্যা বলি না। বরং তুমি যে ইসলাম নিয়ে এসেছ, তাকে মিথ্যা বলি’। এ প্রসঙ্গে নিম্নোক্ত আয়াত নাযিল হয়,
فَإِنَّهُمْ لاَ يُكَذِّبُوْنَكَ وَلَكِنَّ الظَّالِمِيْنَ بِآيَاتِ اللهِ يَجْحَدُوْنَ- (الأنعام 33)-
‘বস্ত্ততঃ ওরা তোমাকে মিথ্যা বলে না। বরং এইসব যালেমরা আল্লাহর আয়াত সমূহকে অস্বীকার করে’ (আন‘আম ৬/৩৩)।[1]
বাতিলপন্থীরা চিরকাল ন্যায় ও সত্যকে ভয় পায়। তাই মক্কার মুশরিক নেতারা কুরআনকে সত্য বলে স্বীকার করার পরেও রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে এসে কুরআন পরিবর্তনের দাবী করেছিল। যেমন আল্লাহ বলেন,
وَإِذَا تُتْلَى عَلَيْهِمْ آيَاتُنَا بَيِّنَاتٍ قَالَ الَّذِيْنَ لاَ يَرْجُوْنَ لِقَاءنَا ائْتِ بِقُرْآنٍ غَيْرِ هَـذَا أَوْ بَدِّلْهُ قُلْ مَا يَكُوْنُ لِيْ أَنْ أُبَدِّلَهُ مِن تِلْقَاء نَفْسِيْ إِنْ أَتَّبِعُ إِلاَّ مَا يُوْحَى إِلَيَّ إِنِّيْ أَخَافُ إِنْ عَصَيْتُ رَبِّيْ عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيْمٍ- (يونس ১৫)-
‘আর যখন তাদের কাছে আমাদের স্পষ্ট আয়াত সমূহ পাঠ করা হয়, তখন যারা আমাদের সাক্ষাৎ কামনা করে না তারা বলে যে, এটি ব্যতীত অন্য কুরআন নিয়ে এসো অথবা এটাকেই পরিবর্তন কর। তুমি বলে দাও যে, নিজের পক্ষ থেকে এতে পরিবর্তন আনার কোন সাধ্য আমার নেই। আমি তো কেবল সেটারই অনুসরণ করি যা আমার নিকটে অহী করা হয়। আমি যদি আমার পালনকর্তার অবাধ্যতা করি, তাহ’লে আমি ভয়ংকর দিবসের শাস্তির আশংকা করি’ (ইউনুস ১০/১৫)।
আল্লাহ তাঁর রাসূলকে বলেন, إِنَّكَ لَعَلَى هُدًى مُسْتَقِيمٍ ‘নিশ্চয়ই তুমি সরল পথের উপরে আছ’ (হজ্জ ২২/৬৭)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর পুরা জীবন ছিল কুরআনের বাস্তব চিত্র। সেকারণ একদা মা আয়েশাকে রাসূল (ছাঃ)-এর চরিত্র সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি বলেছিলেন, كَانَ خُلُقُهُ الْقُرْآنَ ‘তাঁর চরিত্র ছিল কুরআন’।[2] অর্থাৎ তিনি ছিলেন কুরআনের বাস্তব রূপকার। হাদীছের পাতায় পাতায় যার দৃষ্টান্ত সমূহ স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ আছে। কুরআন ও হাদীছ তাই মুসলিম জীবনের চলার পথের একমাত্র আলোকবর্তিকা। আল্লাহ আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর জীবন চরিত যথাযথভাবে অনুসরণের তাওফীক দান করুন। আমীন!
[2]. আহমাদ হা/২৫৩৪১, ২৫৮৫৫; ছহীহুল জামে‘ হা/৪৮১১।