বিশ্বব্যাপী কুফরী শক্তিকে অবনত করে তাওহীদকে সমুন্নত করা ও মানুষকে শয়তানী শাসন ও যুলুমের শৃংখলমুক্ত করে আল্লাহর বিধানের অনুগত করাই হ’ল জিহাদের বিশ্বজয়ী লক্ষ্য। যদিও এটি কষ্টকর। কিন্তু এটি আল্লাহ মুসলমানের উপর ফরয করেছেন মানবতার মুক্তির জন্য এবং বিশ্বে শান্তি ও শৃংখলা প্রতিষ্ঠার জন্য। আল্লাহ বলেন,قَاتِلُوا الَّذِينَ لاَ يُؤْمِنُونَ بِاللهِ وَلاَ بِالْيَوْمِ الْآخِرِ وَلاَ يُحَرِّمُونَ مَا حَرَّمَ اللهُ وَرَسُولُهُ وَلاَ يَدِينُونَ دِينَ الْحَقِّ مِنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ حَتَّى يُعْطُوا الْجِزْيَةَ عَنْ يَدٍ وَهُمْ صَاغِرُونَ ‘তোমরা যুদ্ধ কর আহলে কিতাবদের মধ্যকার ঐসব লোকের বিরুদ্ধে, যারা আল্লাহ ও বিচার দিবসের উপর ঈমান রাখে না এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যা হারাম করেছেন তা হারাম করেনা ও সত্য দ্বীন (ইসলাম) কবুল করেনা, যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা বিনীত হয়ে করজোড়ে জিযিয়া প্রদান করে’ (বাক্বারাহ ২/২৪৬; তওবাহ ৯/২৯)।
অবশ্যই এ জিহাদ কেবল অস্ত্রশক্তি দিয়ে নয়। বরং তা হবে মূলতঃ দ্বীনের শক্তি দিয়ে। অর্থাৎ কুরআন-সুন্নাহ ও যুক্তিপূর্ণ দলীল দ্বারা আক্বীদা পরিবর্তনের মাধ্যমে। যাকে ‘চিন্তার যুদ্ধ’ (الْغَزْوُ الْفِكْرِىُّ) বলা হয়। আর এটাই হ’ল দ্রুত ও স্থায়ীভাবে কার্যকর। আর এর মাধ্যমেই আসে সর্বাত্মক সমাজ বিপ্লব। ইসলামী জিহাদের এটাই হ’ল চূড়ান্ত লক্ষ্য।
জিহাদ প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরয। জিহাদকে ইসলামের চূড়া (ذِرْوَةُ سَنَامِهِ الْجِهَادُ) বলা হয়েছে’।[1] আর চূড়া না থাকলে ঘর থাকেনা। যে ব্যক্তি কুফরী আদর্শের সঙ্গে আপোষ করে এবং তাওহীদ প্রতিষ্ঠার জন্য জিহাদের আকাংখাও হৃদয়ে পোষণ করে না, সে ব্যক্তি মুনাফেকী হালতে মৃত্যুবরণ করে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَنْ مَاتَ وَلَمْ يَغْزُ وَلَمْ يُحَدِّثْ بِهِ نَفْسَهُ مَاتَ عَلَى شُعْبَةٍ مِنْ نِفَاقٍ ‘যে ব্যক্তি মারা গেল, অথচ জিহাদ করল না। এমনকি জিহাদের কথা মনেও আনলো না, সে ব্যক্তি মুনাফেকীর একটি শাখার উপর মৃত্যুবরণ করল’।[2] সেকারণ জিহাদের গুরুত্ব সর্বাধিক। এতে যুদ্ধের ময়দানে এমনকি বিছানায় মরলেও সে শহীদ হবে’।[3] জিহাদ ব্যতীত মুসলমান তার জান-মাল ও ইয্যত নিয়ে দুনিয়ায় সম্মানের সাথে বেঁচে থাকতে পারে না এবং আখেরাতেও মুক্তি পেতে পারে না।
বস্ত্ততঃ জিহাদ হয়ে থাকে সন্ত্রাস দমনের জন্য এবং সমাজে আল্লাহর বিধান কায়েমের মাধ্যমে শান্তি ও শৃংখলা প্রতিষ্ঠার জন্য। আল্লাহ বলেন, تِلْكَ الدَّارُ الْآخِرَةُ نَجْعَلُهَا لِلَّذِينَ لاَ يُرِيدُونَ عُلُوًّا فِي الْأَرْضِ وَلَا فَسَادًا وَالْعَاقِبَةُ لِلْمُتَّقِينَ ‘আখিরাতের ঐ গৃহ আমরা প্রস্ত্তত করেছি তাদের জন্য, যারা পৃথিবীতে ঔদ্ধত্য ও বিশৃংখলা কামনা করেনা। আর শুভ পরিণাম হ’ল আল্লাহভীরুদের জন্য’ (ক্বাছাছ ২৮/৮৩)। বাস্তবিক পক্ষে জিহাদের মধ্যেই নিহিত রয়েছে মুসলমানদের শ্রেষ্ঠ উম্মত হওয়ার চাবিকাঠি। যেখানে আল্লাহ বলেছেন, كُنْتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللهِ ‘তোমরাই হ’লে শ্রেষ্ঠ জাতি। যাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে মানবজাতির কল্যাণের জন্য। তোমরা সৎকাজের আদেশ দিবে ও অন্যায় কাজে নিষেধ করবে এবং আল্লাহর উপর বিশ্বাস রাখবে’ (আলে-ইমরান ৩/১১০)।
বস্ত্ততঃ আমর বিল মা‘রূফ ও নাহি ‘আনিল মুনকার-এর দায়িত্ব পালনের মাধ্যমেই মুসলমান বিশ্বজয়ী শক্তিতে পরিণত হবে। যা তরবারীর জোরে নয় বরং প্রতিষ্ঠিত হবে তার অন্তর্নিহিত তাওহীদী চেতনার অজেয় শক্তির জোরে। একদিন যা পৃথিবীর সকল প্রান্তে মাটির ঘরে ও গরীবের পর্ণকুটিরেও প্রবেশ করবে। সম্মানিত ব্যক্তির ঘরে (ইসলাম কবুলের মাধ্যমে) সম্মানের সাথে অথবা অসম্মানিত ব্যক্তির ঘরে (জিযিয়া প্রদানের মাধ্যমে) অসম্মানের সাথে’।[4] (বিস্তারিত পাঠ করুন ‘জিহাদ ও ক্বিতাল’ বই)।
[2]. মুসলিম হা/১৯১০; মিশকাত হা/৩৮১৩ ‘জিহাদ’ অধ্যায়।
[3]. মুসলিম হা/১৯১৫; মিশকাত হা/৩৮১১।
[4]. আহমাদ হা/১৬৯৯৮; ছহীহাহ হা/৩; মিশকাত হা/৪২।