আবু নু‘আইম তাঁর ‘হিলইয়াতুল আউলিয়া’ গ্রন্থে আছহাবে ছুফফাহর একশ’র অধিক নাম লিপিবদ্ধ করেছেন। যাদের মধ্যে প্রসিদ্ধ ছিলেন, হযরত আবু হুরায়রা দাওসী, আবু যার গিফারী আনছারী, যিনি স্বেচ্ছায় সেখানে অবস্থান করতেন। ওয়াছেলা বিন আসক্বা‘, কা‘ব বিন মালেক, সালমান ফারেসী, হানযালা বিন আবু ‘আমের, হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান, রিফা‘আহ আবু লুবাবাহ আনছারী, আব্দুল্লাহ যুল-বাজাদাইন, খাববাব ইবনুল আরাত, আব্দুল্লাহ বিন মাস‘ঊদ, ছুহায়েব বিন সিনান রূমী, রাসূল (ছাঃ)-এর মুক্তদাস শুক্বরান, সাফীনাহ ও ছাওবান। বেলাল বিন রাবাহ, ইরবায বিন সারিয়াহ, আবু সাঈদ খুদরী প্রমুখ।
আছহাবে ছুফফাহর সদস্যগণ অধিকাংশ সময় ই‘তিকাফ, ইবাদত ও তেলাওয়াতে লিপ্ত থাকতেন। একে অপরকে কুরআন শিক্ষা দিতেন ও লেখা-পড়া শিখাতেন। তাদের কেউ কেউ বিভিন্ন বিষয়ে প্রসিদ্ধি অর্জন করেন। যেমন আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হাদীছ বর্ণনার ক্ষেত্রে এবং হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান ফিৎনা সম্পর্কিত হাদীছসমূহ বর্ণনার ক্ষেত্রে।
অধিকাংশ সময় সমাজ থেকে দূরে থাকলেও তাদের কেউ কেউ বিভিন্ন জিহাদে অংশগ্রহণ করেছেন। এমনকি শহীদ হয়েছেন। যেমন বদরে শহীদদের মধ্যে ছিলেন ছাফওয়ান বিন বায়যা, খুরাইম বিন ফাতেক আসাদী, খোবায়েব বিন ইয়াসাফ, সালেম বিন উমায়ের প্রমুখ। ওহোদের শহীদদের মধ্যে ছিলেন হানযালা ‘গাসীলুল মালায়েকাহ’। কেউ হোদায়বিয়ার সন্ধিকালে উপস্থিত ছিলেন। যেমন জারহাদ বিন খুওয়াইলিদ, আবু সারীহাহ গিফারী। তাদের মধ্যে কেউ খায়বরে শহীদ হয়েছিলেন। যেমন ছাক্বফ বিন আমর। কেউ তাবূকে শহীদ হয়েছিলেন। যেমন আব্দুল্লাহ যুল বিজাদায়েন। কেউ ভন্ডনবীদের বিরুদ্ধে ইয়ামামাহর যুদ্ধে শহীদ হন। যেমন আবু হুযায়ফাহর মুক্তদাস সালেম ও যায়েদ ইবনুল খাত্ত্বাব (রাযিয়াল্লাহু ‘আনহুম)। প্রকৃত প্রস্তাবে তারা ছিলেন রাতের বেলা ইবাদত গুযার ও দিনের বেলায় ঘোড় সওয়ার।
তাদের সম্পর্কে বিশেষভাবে কুরআনে কয়েকটি আয়াত নাযিল হয়। যেমন সূরা বাক্বারাহ ২৭৩ আয়াত ও সূরা তওবাহ ৯১ আয়াত। তাঁদের সম্পর্কে ওয়াক্বেদী, ইবনু সা‘দ, আবু নাঈম, তাক্বিউদ্দীন সুবকী, সামহূদী প্রমুখ বিদ্বানগণ পৃথক পৃথক গ্রন্থ সংকলন করেছেন (সীরাহ ছহীহাহ ১/২৫৭-৭১)। আয়াত দু’টি নিম্নরূপ:
لِلْفُقَرَاءِ الَّذِينَ أُحْصِرُوا فِي سَبِيلِ اللهِ لاَ يَسْتَطِيعُونَ ضَرْبًا فِي الْأَرْضِ يَحْسَبُهُمُ الْجَاهِلُ أَغْنِيَاءَ مِنَ التَّعَفُّفِ تَعْرِفُهُمْ بِسِيمَاهُمْ لاَ يَسْأَلُونَ النَّاسَ إِلْحَافًا وَمَا تُنْفِقُوا مِنْ خَيْرٍ فَإِنَّ اللهَ بِهِ عَلِيمٌ
‘তোমরা ব্যয় কর ঐসব অভাবীদের জন্য, যারা আল্লাহর পথে আবদ্ধ হয়ে গেছে, যারা ভূ-পৃষ্ঠে বিচরণে সক্ষম নয়। না চাওয়ার কারণে অজ্ঞ লোকেরা তাদের অভাবমুক্ত মনে করে। তুমি তাদের চেহারা দেখে চিনতে পারবে। তারা মানুষের কাছে নাছোড়বান্দার মত প্রার্থী হয় না। আর তোমরা উত্তম মাল হ’তে যা কিছু ব্যয় কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা সম্যকভাবে অবহিত’ (বাক্বারাহ ২/২৭৩)।
দ্বিতীয় আয়াতটি হ’ল,
لَيْسَ عَلَى الضُّعَفَاءِ وَلاَ عَلَى الْمَرْضَى وَلاَ عَلَى الَّذِينَ لاَ يَجِدُونَ مَا يُنْفِقُونَ حَرَجٌ إِذَا نَصَحُوا لِلَّهِ وَرَسُولِهِ مَا عَلَى الْمُحْسِنِينَ مِنْ سَبِيلٍ وَاللهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ ‘কোন অভিযোগ নেই দুর্বলদের উপর, রোগীদের উপর ও ব্যয়ভার বহনে অক্ষমদের উপর, যদি তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি খালেছ ঈমান রাখে। বস্ত্ততঃ সৎকর্মশীলদের বিরুদ্ধে কোনরূপ অভিযোগ নেই। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ (তওবাহ ৯/৯১)।