(১) হিজরতের প্রাক্কালে আসমা সফরের মাল-সামান ও খাদ্য-সামগ্রী বাঁধার জন্য রশিতে কম পড়ায় নিজের কোমরবন্দ খুলে তা ছিঁড়ে দু’টুকরা করে এক টুকরা দিয়ে থলির মুখ বাঁধেন ও বাকী টুকরা দিয়ে নিজের কোমরবন্দের কাজ সারেন। এ কারণে তিনি ذَاتُ النِّطَاقَيْنِ বা দুই কোমরবন্দের অধিকারিণী উপাধিতে ভূষিত হন’ (বুখারী হা/২৯৭৯)। উল্লেখ্য যে, আসমা (রাঃ) প্রতি রাতে তাঁদের জন্য খাবার রান্না করে নিয়ে যেতেন (ইবনু হিশাম ১/৪৮৫) বলে যা প্রসিদ্ধ আছে, তা সঠিক নয় (মা শা-‘আ ৭৮ পৃঃ)।
(২) বাসায় রক্ষিত পাঁচ/ছয় হাযার মুদ্রার সবই পিতা আবুবকর যাবার সময় সাথে নিয়ে যান। তাঁরা চলে যাবার পর আসমার বৃদ্ধ ও অন্ধ দাদা আবু ক্বোহাফা এসে আসমাকে বললেন, বেটি! আমি মনে করি, আবুবকর তোমাদের দ্বিগুণ কষ্টে ফেলে গেল। সে নিজে চলে গেল এবং নগদ মুদ্রা সব নিয়ে গেল। একথা শুনে উপস্থিত বুদ্ধি খাটিয়ে আসমা একটা পাথর কাপড়ে জড়িয়ে টাকা রাখার গর্তে রেখে এসে দাদাকে সেখানে নিয়ে গেল এবং দাদার হাত উক্ত গর্তের মধ্যে কাপড়ের গায়ে ধরিয়ে দিয়ে বলল, এই দেখ দাদু! আববা সব মুদ্রা রেখে গেছেন’। অন্ধ দাদু তাতে মহা খুশী হয়ে বললেন, أَمَّا إِذَا تَرَكَ هَذَا فَنَعَمْ ‘যাক! এগুলো ছেড়ে গিয়ে সে খুব ভাল কাজ করেছে’ (হাকেম হা/৪২৬৭ সনদ ছহীহ)। উল্লেখ্য যে, আবুবকর (রাঃ)-এর পিতা আবু ক্বোহাফা ঐ সময় কাফের ছিলেন। পরে তিনি মক্কা বিজয়ের দিন মুসলমান হন।
(৩) তাছাড়া আসমার ছোট বোন আয়েশা আসমার সাথে সকল কাজে সাহায্য করেন। (৪) তাঁর ভাই আব্দুল্লাহ পিতার সাথে রাতে গুহায় কাটাতেন ও ভোর রাতে বাড়ি ফিরে আসতেন। অতঃপর শত্রুপক্ষের খবরাখবর নিয়ে রাতের বেলা পুনরায় গুহায় চলে যেতেন’ (বুখারী হা/৩৯০৫)।
(৫) আবুবকরের মুক্তদাস ‘আমের বিন ফুহায়রা ছওর পর্বতের পার্শ্ববর্তী ময়দানে দিনের বেলা ছাগল চরাতো। তারপর রাতের একাংশ অতিবাহিত হ’লে সে ছাগপাল নিয়ে ছওর পাহাড়ের পাদদেশে চলে আসত এবং রাসূল (ছাঃ) ও আবুবকরকে দুধ পান করাত। তারপর সেখানে অবস্থান করে ভোর হবার আগেই ছাগপাল নিয়ে পুনরায় দূরে চলে যেত’ (বুখারী হা/৩৯০৫)।
এইভাবে দেখা যায় যে, আবুবকর (রাঃ)-এর পুরো পরিবার হিজরতের প্রস্ত্ততিতে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। উল্লেখ্য যে, ছাহাবীগণের মধ্যে একমাত্র আবুবকর (রাঃ) এই বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ছিলেন যে, তাঁর চার পুরুষ মুসলমান ও ছাহাবী ছিলেন। অর্থাৎ তিনি, তাঁর পিতা-মাতা, তাঁর সন্তানগণ এবং তাদের সন্তানগণ। তন্মধ্যে সবচেয়ে খ্যাতনামা ছিলেন তাঁর কন্যা আসমার পুত্র ও আয়েশার পালিত পুত্র হযরত আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের (১-৭৩ হিঃ)। যিনি ছিলেন হিজরতের পরপরই ক্বোবায় জন্মগ্রহণকারী প্রথম মুহাজির সন্তান। তাঁর সহোদর ছোট ভাই উরওয়া বিন যুবায়ের (২৩-৯৪ হিঃ) ছিলেন রাসূল চরিত বর্ণনায় শ্রেষ্ঠ ও বিশ্বস্ত রাবী এবং মদীনার শ্রেষ্ঠ ফক্বীহ সপ্তকের অন্যতম (সৈয়ূত্বী, ত্বাবাক্বাতুল হুফফায ক্রমিক ৪৯)।
আল্লাহ বলেন,رَبِّ أَوْزِعْنِيْ أَنْ أَشْكُرَ نِعْمَتَكَ الَّتِيْ أَنْعَمْتَ عَلَيَّ وَعَلَى وَالِدَيَّ وَأَنْ أَعْمَلَ صَالِحًا تَرْضَاهُ وَأَصْلِحْ لِيْ فِيْ ذُرِّيَّتِيْ إِنِّيْ تُبْتُ إِلَيْكَ وَإِنِّيْ مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ ‘হে আমার পালনকর্তা! আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে যে নে‘মত তুমি দান করেছ, তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার শক্তি আমাকে দাও! আর আমি যেন এমন সৎকর্ম করতে পারি, যা তুমি পসন্দ কর এবং আমার জন্য আমার সন্তানদের মধ্যে তুমি কল্যাণ দান কর। আমি তোমার দিকে ফিরে গেলাম এবং আমি তোমার একান্ত আজ্ঞাবহদের অন্তর্ভুক্ত’ (আহক্বাফ ৪৬/১৫)।
আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, উক্ত দো‘আটি আবুবকর ছিদ্দীক (রাঃ) করেছিলেন, যখন তিনি ৪০ বছর বয়সে উপনীত হন। ফলে তিনিই ছিলেন একমাত্র ব্যক্তি, যার সকল সন্তান ও পিতা-মাতা ইসলাম কবুল করেছিলেন’ (কুরতুবী)। উল্লেখ্য যে, হযরত আবুবকর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর চাইতে বয়সে দু’বছরের ছোট ছিলেন।