উত্তর: আকীদা ও দীনের অন্যান্য বিষয়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের মূলনীতি হলো আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাত এবং খোলাফায়ে রাশেদীনের আদর্শ ও সুন্নাতকে পরিপূর্ণরূপে আঁকড়ে ধরা। কারণ আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿قُلۡ إِن كُنتُمۡ تُحِبُّونَ ٱللَّهَ فَٱتَّبِعُونِي يُحۡبِبۡكُمُ ٱللَّهُ﴾ [ال عمران: ٣١]
“হে নবী! আপনি বলুন যে, তোমরা যদি আল্লাহর ভালোবাসা পেতে চাও, তাহলে আমার অনুসরণ কর। তবেই আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন।”[সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৩১]
তাছাড়া আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿مَّن يُطِعِ ٱلرَّسُولَ فَقَدۡ أَطَاعَ ٱللَّهَۖ وَمَن تَوَلَّىٰ فَمَآ أَرۡسَلۡنَٰكَ عَلَيۡهِمۡ حَفِيظٗا ٨٠﴾ [النساء: ٨٠]
“যে ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ করল সে স্বয়ং আল্লাহর অনুসরণ করল। আর যারা মুখ ফিরিয়ে নিবে, আমি তাদের জন্য আপনাকে সংরক্ষণকারী হিসাবে প্রেরণ করি নি।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৮০]
আল্লাহ আরো বলেন,
﴿وَمَآ ءَاتَىٰكُمُ ٱلرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَىٰكُمۡ عَنۡهُ فَٱنتَهُواْۚ﴾ [الحشر: ٧]
“এবং আল্লাহর রাসূল তোমাদেরকে যা প্রদান করেন, তা তোমরা গ্রহণ কর আর যা থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করেন, তা থেকে তোমরা বিরত থাক।” [সূরা আল-হাশর, আয়াত: ৭] যদিও আয়াতটি গণীমতের মাল বন্টনের ক্ষেত্রে নাযিল হয়েছে, তবে শরী‘আতের অন্যান্য মাসায়েলের ক্ষেত্রেও উত্তমভাবে প্রযোজ্য হবে।
তাছাড়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমু‘আর সালাতের খুৎবায় বলতেন,
«أَمَّا بَعْدُ فَإِنَّ خَيْرَ الْحَدِيثِ كِتَابُ اللَّهِ وَخَيْرُ الْهُدَى هُدَى مُحَمَّدٍ eوَشَرُّ الْأُمُورِ مُحْدَثَاتُهَا وَكُلُّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ وكل ضلالة فى النار»
“অতঃপর সর্বোত্তম বাণী হচ্ছে আল্লাহর কিতাব, সর্বোত্তম নির্দেশনা হচ্ছে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশনা। সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হচ্ছে দীনের ভিতরে নতুন বিষয় আবিষ্কার করা। প্রতিটি বিদ‘আতই গোমরাহী। আর প্রতিটি গোমরাহীর পরিণাম জাহান্নাম।”[1]
অনুরূপভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«عَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الْمَهْدِيِّينَ الرَّاشِدِينَ تَمَسَّكُوا بِهَا وَعَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ»
“তোমরা আমার সুন্নাত এবং আমার পরে হিদায়াত প্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নাতের অনুসরণ করবে এবং সেটাকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরবে। আর তোমরা দীনের বিষয়ে নতুন আবিস্কৃত বিষয় থেকে সাবধান থাকবে। কারণ, প্রতিটি নব আবিস্কৃত বিষয়ই বিদ‘আত আর প্রতিটি বিদ‘আতই গোমরাহী।”[2] এ সম্পর্কে আরো অসংখ্য দলীল-প্রমাণ রয়েছে।
সুতরাং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের পথ হলো, আল্লাহর কিতাব, রাসূলের সুন্নাত এবং খোলাফায়ে রাশেদীনের পথকে আকঁড়ে ধরা। তাছাড়া তাদের পথের অন্যতম দিক হলো, তারা সদাসর্বদা দীন কায়েমের প্রচেষ্টা করেন, এর ভিতর বিভেদ সৃষ্টি করেন না। এর মাধ্যমে তারা আল্লাহর নিম্নোক্ত নির্দেশনা পালন করে থাকেন,
﴿شَرَعَ لَكُم مِّنَ ٱلدِّينِ مَا وَصَّىٰ بِهِۦ نُوحٗا وَٱلَّذِيٓ أَوۡحَيۡنَآ إِلَيۡكَ وَمَا وَصَّيۡنَا بِهِۦٓ إِبۡرَٰهِيمَ وَمُوسَىٰ وَعِيسَىٰٓۖ أَنۡ أَقِيمُواْ ٱلدِّينَ وَلَا تَتَفَرَّقُواْ فِيهِۚ﴾ [الشورا: ١٣]
“তিনি তোমাদের জন্য বিধিবদ্ধ করেছেন এমন দীনকে, যার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি নূহকে আর যা আমি অহী করেছিলাম তোমাকে এবং যার নির্দেশ দিয়েছিলাম ইবরাহীম, মূসা ও ঈসাকে এই বলে যে, তোমরা দীনকে প্রতিষ্ঠিত কর এবং ওতে বিভেদ সৃষ্টি করো না।” [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ১৩] আর তাদের মাঝে কখনো মতবিরোধ হয়ে থাকলে তা হয়েছে কেবল এমন ক্ষেত্রে, যাতে ইজতেহাদ[3] করা বৈধ আছে। এ ধরণের মতবিরোধ অন্তরে বিভেদ সৃষ্টি করে না। ইজতেহাদী বিষয়ে আলিমদের মাঝে মতবিরোধ হওয়া সত্বেও আপনি তাদের মাঝে একতা এবং একে অপরের প্রতি ভালোবাসা দেখতে পাবেন।
>[2] আবু দাউদ, অধ্যায়: কিতাবুস সুন্নাহ।
[3] কুরআন ও সুন্নাহ থেকে মাসআলা বের করার জন্য প্রচেষ্টা চালানোকে ইজতেহাদ বলে। আর যে আলেম ইজতেহাদ করার যোগ্য, তাঁকে মুজতাহেদ বলা হয়।