ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
নবীদের কাহিনী ২৫. হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) - মাক্কী জীবন ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
মক্কার অবস্থান (موضع مكة)

মক্কাকে পৃথিবীর নাভিস্থল (وَسَطُ الْأَرْضِ) বলা হয়। কুরআনে একে ‘উম্মুল ক্বোরা’ (أُمُّ الْقُرَى) বা ‘আদি জনপদ’ বলা হয়েছে (আন‘আম ৬/৯২; শূরা ৪২/৭)। مَكَّة অর্থ ধ্বংসকারী। مَكَّ يَمُكُّ مَكًّا অর্থ ধ্বংস করা। মক্কাকে মক্কা বলার কারণ দু’টি। এক- জাহেলী যুগে এখানে কোন যুলুম ও অনাচার টিকতে পারতনা। যেই-ই কোন যুলুম করত, সেই-ই ধ্বংস হয়ে যেত। এজন্য এর অন্য একটি নাম ছিল ‘না-সসাহ’ (النَّاسَّةَ) অর্থ বিতাড়নকারী, বিশুদ্ধকারী। কোন রাজা-বাদশা যখনই একে ধ্বংস করতে গিয়েছে, সেই-ই ধ্বংস হয়েছে। এর অন্য একটি নাম হ’ল বাক্কা (بَكَّةٌ)। যার দু’টি অর্থ রয়েছে। এক- بَكَّ يَبُكُّ بَكًّا اى كَسَرَ ভেঙ্গে দেওয়া। সেকারণেই বলা হয়, لِأَنَّهَا تَبُكُّ أَعْنَاقَ الْجَبَابِرَةِ إذَا أَحْدَثُوا فِيْهَا شَيْئًا ‘এটি প্রতাপশালী অহংকারীদের ঘাড় মটকিয়ে দেয়, যখন তারা এখানে কিছু অঘটন ঘটাতে চায়’। দুই- এর অর্থ اِزْدَحَمَ ভিড় করা ও কান্নাকাটি করা। কেননা মানুষ এখানে এসে জমা হয় এবং আল্লাহর নিকট কান্নাকাটি করে’ (ইবনু হিশাম ১/১১৪)।

জাহেলী যুগে হামলাকারী কাফের নেতা ইয়ামনের খ্রিষ্টান গভর্ণর আবরাহাকে আল্লাহ সঙ্গে সঙ্গে ধ্বংস করেছেন। কিন্তু ইসলামী যুগে মুসলিম যালেমদের আল্লাহ সাথে সাথে ধ্বংস করেননি তাদের ঈমানের কারণে। তাদের কঠিন শাস্তি পরকালে হবে, যদি নাকি তারা তওবা না করে মৃত্যুবরণ করে। আজও যদি কোন কাফের শক্তি কা‘বা ধ্বংস করতে চায়, সে আল্লাহর গযবে সাথে সাথেই ধ্বংস হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। যেমন আল্লাহ বলেন, أَوَلَمْ يَرَوْا أَنَّا جَعَلْنَا حَرَمًا آمِنًا وَيُتَخَطَّفُ النَّاسُ مِنْ حَوْلِهِمْ ‘তারা কি দেখেনা যে, আমরা হারামকে নিরাপদ করেছি। অথচ তাদের চতুষ্পার্শ্বে যারা আছে তারা উৎখাত হয়’ (আনকাবূত ২৯/৬৭)। তিনি আরও বলেন, وَمَنْ يُرِدْ فِيْهِ بِإِلْحَادٍ بِظُلْمٍ نُذِقْهُ مِنْ عَذَابٍ أَلِيْمٍ ‘যে ব্যক্তি এখানে (হারামে) সীমালংঘনের মাধ্যমে পাপকার্যের সংকল্প করে, আমরা তাকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির স্বাদ আস্বাদন করাবো’ (হজ্জ ২২/২৫)।[1]

চারপাশে পাহাড় ঘেরা উপত্যকায় অবস্থিত মক্কা নগরী। পূর্ব দিকে আবু কুবাইস (أبو قُبَيس) পাহাড় এবং পশ্চিম দিকে কু‘আইক্বা‘আন (قُعَيْقَعان) পাহাড় নতুন চাঁদের মত মক্কাকে বেষ্টন করে রেখেছে। এর নিম্নভূমিতে কা‘বাগৃহ অবস্থিত। যার চারপাশে কুরায়েশদের জনবসতি। নবচন্দ্রের দুই কিনারায় গরীব বেদুঈনদের আবাসভূমি। যারা যুদ্ধ-বিগ্রহে পটু ছিল।

কুরায়েশ বংশ কিনানাহর দিকে সম্পর্কিত। যারা মক্কার অনতিদূরে বসবাস করত। এভাবে এখানকার অধিবাসীরা পরস্পরে সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ থাকায় মক্কা একটি সুরক্ষিত দুর্গের শহরে পরিণত হয়। সেকারণ মক্কায় আগত কাফেলা সমূহ সর্বদা নিরাপদ থাকত।

[1]. এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা দ্রষ্টব্য : লেখক প্রণীত তাফসীরুল কুরআন ৩০তম পারা, সূরা ফীল, শিরোনাম : ‘সংশয় নিরসন’ পৃঃ ৪৮৯-৯০।