১। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেছেন,
قُلْ هَذِهِ سَبِيلِي أَدْعُو إِلَى اللَّهِ عَلَى بَصِيرَةٍ (يوسف: 108)
‘‘(হে মুহাম্মদ) আপনি বলে দিন, এটাই আমার পথ। পূর্ণ জ্ঞান ও প্রজ্ঞার সাথে আমি আল্লাহর দিকে আহবান জানাই।’’ (ইউসুফঃ ১০৮)
২। সাহাবী ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূল (স:) যখন মুআ’য বিন জাবাল (রাঃ) কে ইয়ামানের শাসনকর্তা নিয়োগ করে পাঠালেন তখন [রাসূল (স:) মুআ’যকে লক্ষ্য করে] বললেন,
أنك تأتي قوما من أهل الكتاب فليكن أول ما تدعوهم إليه شهادة أن لا إله إلا الله فإن هم أطاعوك لذلك فاعلمهم إن الله افترض عليهم خمس صلوات فى كل يوم وليلة فإن هم أطاعوك لذلك فاعلمهم إن الله افترض عليهم صدقة تؤخذ من أغنياءهم فترد على فقراءهم فإن هم أطاعوك لذلك فإياك وكرائم أموالهم واتق دعوة المظلوم. فإنه ليس بينها وبين الله حجاب (أخرجاه)
‘‘তুমি এমন এক কাওমের কাছে যাচ্ছ যারা আহলে কিতাব। [যারা কোন আসমানী কিতাবে বিশ্বাসী] সর্ব প্রথম যে জিনিসের দিকে তুমি তাদেরকে আহবান জানাবে তা হচ্ছে, ‘‘লা-ইলাহ ইল্লাল্লাহুর সাক্ষ্য দান’’। অন্য বর্ণনায় আছে, আল্লাহর ওয়াহদানিয়্যাত বা একত্ববাদের স্বীকৃতি প্রদান। এ বিষয়ে তারা যদি তোমার আনুগত্য করে তবে তাদেরকে জানিয়ে দিও যে, আল্লাহ তাআলা তাদের উপর দিনে-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে তারা যদি তোমার কথা মেনে নেয় তবে তাদেরকে জানিয়ে দিও যে, আল্লাহ তাআলা তাদের উপর যাকাত ফরজ করে দিয়েছেন, যা বিত্তশালীদের কাছ থেকে নিয়ে গরীবদেরকে দেয়া হবে। তারা যদি এ ব্যাপারে তোমার আনুগত্য করে তবে তাদের উৎকৃষ্ট মালের ব্যাপারে তুমি খুব সাবধানে থাকবে। আর মজলুমের ফরিয়াদকে ভয় করে চলবে। কেননা মজলুমের ফরিয়াদ এবং আল্লাহ তাআলার মাঝখানে কোন পর্দা নেই।’’ (বুখারি ও মুসলিম)
৩। সাহাল বিন সাআদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল (স:) খাইবারের [যুদ্ধের] দিন বললেন,
" لأعطين الراية غدا رجلا يفتح على يديه، يحب الله ورسوله، ويحبه الله ورسوله ". فبات الناس ليلتهم أيهم يعطى فغدوا كلهم يرجوه فقال " أين علي ". فقيل يشتكي عينيه، فبصق في عينيه ودعا له، فبرأ كأن لم يكن به وجع، فأعطاه فقال أقاتلهم حتى يكونوا مثلنا. فقال " انفذ على رسلك حتى تنزل بساحتهم، ثم ادعهم إلى الإسلام، وأخبرهم بما يجب عليهم، فوالله لأن يهدي الله بك رجلا خير لك من أن يكون لك حمر النعم ".
‘‘আগামীকাল এমন ব্যক্তির কাছে আমি ঝান্ডা প্রদান করবো যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তাকে ভালবাসে। তার হাতে আল্লাহ তাআলা বিজয় দান করবেন। কাকে ঝান্ডা প্রদান করা হবে এ উৎকণ্ঠা ও ব্যাকুলতার মধ্যে লোকজন রাত্রি যাপন করলো। যখন সকাল হয়ে গেলো তখন লোকজন রাসূল (স:) এর নিকট গেলো তাদের প্রত্যেকেই আশা পোষণ করছিলো যে ঝান্ডা তাকেই দেয়া হবে, তখন তিনি বললেন, আলী বিন আবি তালিব কোথায়? বলা হলো, তিনি চক্ষুর পীড়ায় ভোগছেন। তাদেরকে
এ অধ্যায় থেকে নিম্বোক্ত বিষয়গুলো জানা যায়,
১। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অনুসরণকারীর নীতি ও পথ হচ্ছে আল্লাহর দিকে মানুষকে আহবান করা।
২। ইখলাসের ব্যাপারে শতর্কতা অবলম্বন করা। কেননা অনেক লোক হকের পথে মানুষকে আহবান জানালেও মূলতঃ তারা নিজের নফস বা স্বার্থের দিকেই আহবান জানায়।
৩। তাওহীদের দাওয়াতের জন্য অন্তর দৃষ্টি সম্পন্ন জ্ঞান ও প্রজ্ঞা অপরিহার্য্য।
৪। উত্তম তাওহীদের প্রমাণ হচ্ছে, আল্লাহ তাআলার প্রতি গাল-মন্দ আরোপ করা থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র থাকা।
৫। আল্লাহ তাআলার প্রতি গাল-মন্দ আরোপ করা নিকৃষ্ট এবং শিরকের অন্তর্ভূক্ত।
৭। তাওহীদই হচ্ছে সর্ব প্রথম ওয়াজিব।
৮। সর্বাগ্রে এমন কি নামাযেরও পূর্বে তাওহীদের দায়িত্ব পালন করতে হবে।
৯। আল্লাহর ওয়াহদানিয়াতের অর্থ হচ্ছে, ‘‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’’ এর সাক্ষ্য প্রদান করা। অর্থাৎ ‘‘আল্লাহ তাআলা ব্যতীত কোন ইলাহ নেই’’ এ ঘোষণা দেয়া।
১০। একজন মানুষ আহলে কিতাবের অন্তর্ভূক্ত হওয়া সত্ত্বেও সে তাওহীদ সম্পর্কে অজ্ঞ থাকতে পারে কিংবা তাওহীদের জ্ঞান থাকলেও তা দ্বারা আমল নাও করতে পারে।
১১। শিক্ষা দানের প্রতি পর্যায়ক্রমে গুরুত্বারোপ।
১২। সর্ব প্রথম অপেক্ষাকৃত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শুরু করা।
১৩। যাকাত প্রদানের খাত সম্পর্কিত জ্ঞান।
১৪। শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রের সংশয় ও দ্বিধা-দ্বন্দ্ব উন্মোচন করা বা নিরসন করা।
১৫। যাকাত আদায়ের সময় বেছে বেছে উৎকৃষ্ট মাল নেয়ার প্রতি নিষেধাজ্ঞা।
১৬। মজলুমের বদ দোয়া থেকে বেঁচে থাকা।
১৭। মজলুমের ফরিয়াদ এবং আল্লাহ তাআলার মধ্যে কোন প্রতিবন্ধকতা না থাকার সংবাদ।
১৮। সাইয়্যিদুল মুরসালীন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বড় বড় বজুর্গানে দ্বীনের উপর যে সব দুঃখ- কষ্ট এবং কঠিন বিপদাপদ আপতিত হয়েছে তা তাওহীদেরই প্রমাণ পেশ করে।
১৯। ‘‘আমি আগামীকাল এমন একজনের হাতে পতাকা প্রদান করবো যার হাতে আল্লাহ বিজয় দান করবেন।’’ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এ উক্তি নবুয়তেরই একটি নিদর্শন।
২০। আলী রা. এর চোখে থু থু প্রদানে চোখ আরোগ্য হয়ে যাওয়াও নবুয়্যতের একটি নিদর্শন।
২১। আলী রা. এর মর্যাদা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ।
২২। আলী রা. এর হাতে পতাকা তুলে দেয়ার পূর্বে রাতে পতাকা পাওয়ার ব্যাপারে সাহাবায়ে কেরামের উদ্বেগ ও ব্যাকুলতার মধ্যে রাত্রি যাপন এবং বিজয়ের সুসংবাদে আশ্বস্ত থাকার মধ্যে তাদের মর্যাদা নিহিত আছে।
২৩। বিনা প্রচেষ্টায় ইসলামের পতাকা তথা নেতৃত্ব লাভ করা আর চেষ্টা করেও তা লাভে ব্যর্থ হওয়া, উভয় অবস্থায়ই তাকদীরের প্রতি ঈমান রাখা।
২৪। ‘‘বীর পদক্ষেপে এগিয়ে যাও’’ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এ উক্তির মধ্যে ভদ্রতা ও শিষ্ঠাচার শিক্ষা দানের ইঙ্গিত রয়েছে।
২৫। যুদ্ধ শুরু করার পূর্বে ইসলামের দাওয়াত পেশ করা।
২৬। ইতিপূর্বে যাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দেয়া হয়েছে এবং যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হয়েছে তাদেরকেও যুদ্ধের আগে ইসলামের দাওয়াত দিতে হবে।
২৭। أخبرهم بمايجب عليهم রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী হিকমত ও কৌশলের সাথে দাওয়াত পেশ করার ইঙ্গিত বহন করে।
২৮। দীন ইসলামে আল্লাহর হক সম্পর্কে জ্ঞানার্জন।
২৯। আলী রা. এর হাতে একজন মানুষ হেদায়াত প্রাপ্ত হওয়ার সওয়াব।
৩০। ফতোয়ার ব্যাপারে কসম করা।