ঋণের নিম্নরূপ সংজ্ঞা করা হয়েছে,
دفع مال لمن ينتفع به ويرد بدله
অর্থাৎ এক ব্যক্তির অপর ব্যক্তিকে কোন মাল (ধার) দেওয়া, যাতে সে (বর্তমানে) নিজের প্রয়োজন মিটাতে পারে এবং পরে সে তার এ (দেনার) পরিবর্ত ফিরিয়ে দেয়।
কর্জ বা ঋণ লেন-দেন করার সময় ঋণের নির্দিষ্ট পরিমাণ, তার গুণ ও বৈশিষ্ট্য (কোয়ানটিটি ও কোয়ালিটি) জেনে রাখা একান্ত জরুরী।
সমাজের মানুষের সুবিধার্থে ইসলামী শরীয়তে কর্জ নেওয়া-দেওয়াকে বৈধ করা হয়েছে। কিন্তু এ ঋণ ব্যবস্থা অর্থ উপার্জনের কোন প্রকার অসীলা বা উপায় বলে বিবেচিত নয় এবং নিজের মাল বৃদ্ধি করার পথসমূহের মধ্যে কোন (বৈধ) পথও নয়। তাই তো ঋণ দেওয়ার পর ঋণগ্রহীতাকে কেবল সেই পরিমাণ মালই পরিশোধ করতে হয় যে পরিমাণ মাল সে ঋণদাতার নিকট থেকে গ্রহণ করেছে। নতুবা তাকে এ নেওয়া মালের অনুরূপ মাল ফেরৎ দিতে হয়। তার চেয়ে অধিক মাল কোনক্রমেই ফেরৎ দিতে হয় না।
কারণ ফিক্হের নীতিগত আইন এই যে,
أي قرض جر منفعا فهو ربا.
অর্থাৎ, যে ঋণ কোন প্রকার মুনাফা আনয়ন করে তা (এ মুনাফা) সুদ বলে গণ্য।
তবে হ্যাঁ, ঋণের উপর এ মুনাফা কেবল তখনই ঋণদাতার জন্য হারাম ও সুদ বলে বিবেচিত হবে, যখন ঋণ দেওয়ার সাথে এ মুনাফা দেওয়ার শর্ত ও চুক্তি আরোপ করা হবে। অথবা এমন দেওয়া-নেওয়া তাদের মাঝে পরিচিত থাকবে।[1]
নচেৎ যদি ঋণের উপর এ মুনাফার শর্ত আরোপ করা না হয় অথবা তাদের মাঝে এরূপ লেনদেন পরিচিত না হয়, তাহলে ঋণগ্রহীতা ঋণদাতাকে তার ঋণ পরিশোধের সময় সুন্দর ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ হয়ে নেওয়া বস্ত্ত অপেক্ষা উত্তম বস্ত্ত প্রদান করতে পারে।
আবু রাফে’ (রাঃ) বলেন, একদা আল্লাহর রসূল (ﷺ) এক ব্যক্তির নিকট থেকে একটি উটের বাচ্চা ধার নিয়েছিলেন। অতঃপর তাঁর নিকট যখন সদকার উট এল, তখন তিনি এ লোকটির উটের বাচ্চা পরিশোধ করতে আমাকে আদেশ করলেন। আমি বললাম, ‘উটগুলোর মধ্যে সবগুলোই বড় বড় উট, উটের কোন বাচ্চা ওদের মধ্যে নেই।’
তখন নবী করীম (ﷺ) বললেন,
أعطه إياه، فإن خيركم أحسنكم قضاء.
অর্থাৎ, এ বড় উটই দিয়ে দাও। কারণ, তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি শ্রেষ্ঠ যে (ঋণ) পরিশোধের ব্যাপারে উত্তম।’’[2]
কর্জ ও ঋণের উপরোক্ত আলোচনা থেকে একথাই প্রমাণিত হয় যে, ব্যাংক সুদের উপর যে ঋণ দেয় ও নেয় তা অবৈধ। সুতরাং আবশ্যক হল (ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠাকরণ এবং) ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক লোকেদের সুবিধার্থে বিনা সুদে ঋণ প্রদান। (আল বুনূকুল ইসলামিয়্যাহ বাইনান নাযারিয়্যাতি অত্তাত্ববীক্ব ১১৭পৃঃ)
[2] (মুসলিম ৫/৪৫, হাদীস নং ১৬০০, উক্ত হাদীস ইমাম বুখারী আবু হুরাইরা কর্তৃক বিভিন্নসূত্রে বিভিন্ন জায়গায় বর্ণনা করেছেন, দেখুন, বুখারী ৩য় খন্ড ২৫৩ পৃঃ, হাদীস নং ২৩০৫, মুসলিম ১৬০১ নং)