কতিপয় গবেষক নিশ্চিতভাবে বলেছেন যে, হুসাইন হুতী শিয়াদের ইমামী ইসনা আশারিয়া মতবাদে দীক্ষিত হয়েছিলেন। তার লিখিত বই-পুস্তক এবং বক্তৃতার বিভিন্ন ক্যাসেট দ্বারা তাই প্রমাণিত হয়।
হুতীদের বিভিন্ন প্রবন্ধ, বক্তৃতা এবং কার্যক্রম বিশ্লেষণ করে তাদের বেশ কিছু আকীদা ও মতবাদ স্পষ্ট হয়। সেগুলোর সারাংশ নিম্নরূপ:
১) তাদের দাওয়াতের মূল কথা হল,
ক) ইমামিয়া আকীদাকে মজবুত করা।
খ) এই আকীদা পোষণ করা যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার পরে আলী (রা.) কে খলীফা হিসেবে নির্ধারণ করেছিলেন।
গ) আলী (রা.) এর পরে ইমাম হবেন হাসান (রা.) এবং হুসাইন (রা.)।
ঘ) ইমাম হওয়ার পরম্পরা হাসান-হুসাইন (রা.) এর বংশধর থেকে কখনো বাইরে যাবে না।
ঙ) কোন ব্যক্তি এর ব্যতিক্রম আকীদা পোষণ করলে সে কাফের।
২) খুলাফায়ে রাশেদীন-বিশেষ করে তিন খলীফা (আবু বকর (রা),উমর (রা.),এবং উসমান (রা.) থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং অন্যান্য সাহাবীদেরকে কাফের মনে করা। কারণ,তাদের আকীদা হল,মুসলিম বিশ্বে আজ পর্যন্ত যত ফেতনা-ফ্যাসাদ আর সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে তার মূল কারণ হল,এই তিন খলীফা সহ অন্য সাহাবীগণ।
বদরুদ্দীন হুতী বলেন,“আমি বিশ্বাস করি,তারা (অর্থাৎ সাহাবীরা) কাফের। কারণ,তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নির্দেশ লঙ্ঘন করেছে।”
হুসাইন হুতী নিশ্চিত করে বলেন,
“আবু বকর এর বাইয়াত গ্রহণের অনিষ্ট এবং কুপ্রভাব এখন পর্যন্ত বিদ্যমান রয়েছে। এ কারণেই মুসলিম বিশ্বের সকল সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে এবং শত্রুরা মুসলিম জাতির উপর চড়াও হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন যে,আবু বকর,উসমান এবং মুয়াবিয়া সকলেই উমরের অন্যায় কার্যক্রমের ফসল।
৩) এ মর্মে দাওয়াত দেয়া যে,কেবল কুরআন অনুসরণ করতে হবে এবং কুরআন ছাড়া ইসলামী শরীয়ার অন্য সকল বিষয় বর্জন করতে হবে। কারণ তাদের মতে, হাদীস সাহাবী ও তাবেঈদের মাধ্যমে বিশ্বস্ততার সাথে বর্ণিত হয় নি। ফলে যে হাদীস মুসলিম বিশ্বের কাছে যুগ পরিক্রমায় পরম নির্ভরতার সাথে গ্রহণীয় হয়ে আসছে তা তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য শরঈ উৎস নয়। এ কারণে, তারা সহীহ বুখারী ও মুসলিমকে সরাসরি কটাক্ষ করে থাকে।
৪) তাদের দাবী হল,তাফসীর এবং উসূলে ফিকহের ক্ষেত্রে হাদীসকে উৎস হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না। এর মূল উদ্দেশ্য হল,এই মতবাদে বিশ্বাসীরা যেন অজ্ঞতার অন্ধকারে ডুবে থেকে অন্ধভাবে তাদেরকে অনুসরণ করে। এভাবে অনুসারীদেরকে মূল রহস্য সম্পর্কে অন্ধকারে রেখে তাদের উপর প্রভাব বিস্তার করা যাবে এবং অন্যান্য রাফেযিয়া আকীদা গ্রহণ করানো সহজ হবে।
৫) জনগণকে উত্তেজিত করে সেই জালিম শাসকদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করার আহবান জানানো যাদের মধ্যে ইমাম হওয়ার শর্তাবলী বিদ্যমান নয়। তাদের মতে ইমাম হওয়ার অন্যতম শর্ত হল,হাসান ও হুসাইন (রা.) এর বংশোদ্ভূত হওয়া।
এ ধরণের শাষকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করাকে তারা আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের মাধ্যম মনে করে। কারণ, প্রকৃতপক্ষে তারা আল্লাহর শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে।
সংগঠনের সদস্য ও সহযোগী লোকজনকে নিশ্চিত যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করা এবং অস্ত্র-শস্ত্র ক্রয় করে ব্যাপক অস্ত্র ভাণ্ডার গড়ে তোলার আহবান জানানো।
৬) আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের লোকদেরকে এই যুক্তিতে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করা যে, তারা তাদের সন্তানদেরকে বাতিল আকীদা শিক্ষা দিচ্ছে। যে কারণে ইতিহাস পরিক্রমায় মুসলিম জাতিকে খেসারত দিতে হচ্ছে।
আহলে সুন্নাহর লোকদেরকে বয়কট করা। কারণ, তারা আবু বকর (রা.), উমর (রা.) ও উসমান (রা.)কে ভালবাসে এবং তাদেরকে আলী এর উপর অগ্রাধিকার দেয়।
৭) ইরানের খোমেনী বিপ্লব এবং লেবাননের হিযবুল্লাহকে অত্যন্ত সম্মানের দৃষ্টিতে দেখা। কারণ, তারা মনে করে সম্মান, মর্যাদা এবং মুক্তির জন্য এগুলোকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করা কর্তব্য।
৮) মানুষের অনুভূতি ও চেতনায় উত্তেজনা সৃষ্টি করার জন্য ইরান থেকে আমদানি করা কিছু অন্তঃসারশূন্য শ্লোগান দেয়া। যেমন,আমেরিকা ধ্বংস হোক,ইসরাইল ধ্বংস হোক,ইহুদীদের উপর লানত,ইসলামের বিজয়...ইত্যাদি।
৯) তাদের শিয়া যায়দিয়া সম্প্রদায়ের বর্তমান শোচনীয় অবস্থার জন্য সমালোচনা ও কান্নাকাটি করা এবং সব জড়তা ঝেড়ে ফেলে তাদেরকে বিপ্লবের প্রতি উদ্ধুব্ধ করা।
১০) তাদের অনুসারীদেরকে আহলে সুন্নতের তথাকথিত ‘ওয়াহাবী’দের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং হারামাইনের দেশকে তাদের কবল থেকে মুক্ত করার আহ্বান জানানো।
আহলে সুন্নাহর সাথে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চিন্তাকে বোকামি প্রসূত চিন্তা বলে আখ্যায়িত করা।
১১) গাদ্দারী,বিশ্বাস ঘাতকতা এবং অঙ্গীকার ভঙ্গ ইত্যাদি অপকর্মে হুতীদের খ্যাতি রয়েছে।