ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
মুখতাসার যাদুল মা‘আদ অনুচ্ছেদ সমুহের সূচী ও বিবরন ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রহঃ)
আয়িশা (রাঃ) এর চারিত্রিক পবিত্রতা সম্পর্কে অবগত হওয়া সত্ত্বেও নাবী (সাঃ) এ ব্যাপারে মানুষকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন কেন?

এখন কেউ যদি প্রশ্ন করে যে, আয়িশা (রাঃ) এর চারিত্রিক পবিত্রতা সম্পর্কে নাবী (ﷺ) সর্বাধিক অবগত হওয়া সত্ত্বেও অপবাদের ঘটনায় তিনি এত তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদ করলেন কেন? এর উত্তর হল আল্লাহ্ তা‘আলা এই ঘটনার মাধ্যমে সেই হিকমতগুলো প্রকাশ করতে চেয়েছেন, যা এতে লুকায়িত ছিল। সেই সাথে এটি ছিল নাবী (ﷺ) এবং তাঁর সকল উম্মাতের জন্য কিয়ামত পর্যন্ত একটি পরীক্ষা স্বরূপ। এর মাধ্যমে আল্লাহ্ তা‘আলা একদল লোকের মর্যাদা বৃদ্ধি করেন এবং অন্য একদল লোকের পতন ঘটান।

যাতে করে আল্লাহ্ তা‘আলার হিকমত পরিপূর্ণরূপে প্রকাশিত হয় এবং নাবী (ﷺ) এর পরীক্ষা পূর্ণতা লাভ করে। তাই পূর্ণ একমাস অহী বন্ধ রাখা হয়েছিল। সেই সাথে সত্যবাদীদের ঈমান যাতে বৃদ্ধি পায় এবং তারা যেন ন্যায়পরায়ণতা ও মুমিনদের প্রতি ভাল ধারণা পোষণ করেন। মুনাফিকদের নিফাকী ও মিথ্যাচারিতা যেন আরও বৃদ্ধি পায় এবং তাদের অন্তরের গোপন অবস্থা যেন সকলের সামনে প্রকাশিত হয়ে যায়। সেই সাথে আয়িশা (রাঃ) ও তাঁর পিতা-মাতার দ্বীনদারী যেন পূর্ণতা লাভ করে এবং আবু বকরের পরিবারের উপর যেন আল্লাহর নিয়ামত পূর্ণতা লাভ করে, তারা যেন নিজেদের প্রয়োজন পূর্ণ করতে বিনীত হয়ে কেবল আল্লাহর দিকেই ধাবিত হয়, তাঁর কাছেই আশা করে এবং সৃষ্টির উপর ভরসা না করে কেবল আল্লাহর আশা-ভরসা করে।

সুতরাং আয়িশা (রাঃ) এর পিতা-মাতা যখন বললেন- উঠ! আল্লাহর রসূল (ﷺ) এর কাছে যাও এবং তাঁর শুকরিয়া আদায় কর। কারণ আল্লাহ্ তা‘আলা তোমার পবিত্রতায় অহী নাযিল করেছেন তখন তিনি বললেন- এটা হতেই পারেনা। তিনি বলেছিলেন- আল্লাহর শপথ! আমি এ ব্যাপারে কখনই তাঁর শুকরিয়া আদায় করবনা। আমি শুধু সেই আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করব, যিনি আমার পবিত্রতায় কুরআন নাযিল করেছেন।

আল্লাহ্ তা‘আলা যদি তৎক্ষণাৎ তাঁর রসূলকে ইফকের ঘটনার প্রকৃত অবস্থা জানিয়ে দিতেন, তাহলে এই হিকমত ও আহকামগুলো জানা যেতনা এবং এ ব্যাপারে কারও পক্ষে কিছুই জানা সম্ভব হতনা।

সেই সাথে আল্লাহ্ তা‘আলা আরও চেয়েছিলেন যে, স্বীয় রসূল এবং তাঁর পরিবারের মর্যাদা প্রকাশ করবেন, নিজেই তাদের উপর আরোপিত অভিযোগের প্রতিবাদ করবেন এবং শত্রুদের দোষারোপের জবাব দিবেন। কেননা তারা নাবী পরিবারের প্রতি একটি অশুভনীয় ও ভিত্তিহীন কথা চালিয়ে দিচ্ছিল।

মুনাফেকরা যেহেতু নাবী (ﷺ) কে কষ্ট দেয়ার উদ্দেশ্যেই অপবাদ রটিয়েছিল, সেই হিসাবে তাঁর পক্ষে আয়িশা (রাঃ) এর আরোপিত অপবাদের জবাব দেয়া সমীচিন ছিল না। অথচ তাঁর কাছে আয়িশা (রাঃ) এর পবিত্রতার ব্যাপারে কোন সন্দেহ ছিলনা এবং অন্যান্য মুমিনদের তুলনায় তাঁর কাছে আয়িশা (রাঃ) এর দোষমুক্ত থাকার প্রমাণাদি অধিক পরিমাণে ছিল। তবে সীমাহীন ধৈর্যের পরিচয় দিতে গিয়ে এবং সত্যের উপর অবিচল থাকতে গিয়ে আল্লাহর ফয়সালা আসা পর্যন্ত চুপ থেকেছেন।

কিন্তু যখন অহী আগমণ করল, তখন অপবাদ আরোপকারীদেরকে দুর্রা মারার হুকুম করলেন। তবে মুনাফেক নেতা আব্দুল্লাহ্ ইবনে উবাইকে তা থেকে রেহাই দেয়া হল।