এই প্রকার লোকদের সাথে জিহাদের তিনটি স্তর রয়েছে। (১) ক্ষমতা থাকলে তাদের বিরুদ্ধে হাত দিয়ে জিহাদ করতে হবে। (২) হাত দিয়ে করতে অক্ষম হলে জবান দিয়ে করতে হবে। (৩) আর তাতেও অক্ষম হলে অন্তর দিয়ে করতে হবে।
উপরের আলোচনা থেকে আমরা জিহাদের সর্বমোট ১৩টি স্তর খুঁজে পাচ্ছি। নাবী (ﷺ) বলেন-
مَنْ مَاتَ وَلَمْ يَغْزُ وَلَمْ يُحَدِّثْ نَفْسَهُ بِالغَزْوِ، مَاتَ عَلَى شُعْبَةٍ مِنَ النَّفَاقِ
‘‘যে ব্যক্তি জিহাদ না করে কিংবা নিজের মনের মধ্যে জিহাদের আকাঙ্খা না রেখেই মারা গেল সে নিফাকীর একটি বৈশিষ্ট্য নিয়ে মারা গেল’’।[1]
হিজরত ব্যতীত জিহাদ পূর্ণ হয় না। ঈমান ব্যতীত জিহাদ ও হিজরত উভয়টিই মূল্যহীন। আল্লাহর রহমতকামীগণই এই তিনটি গুণে গুণান্বিত হয় এবং তা অর্জন করতে সচেষ্ট হয়। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন-
إنَّ الَّذِينَ آمَنُواْ وَالَّذِينَ هَاجَرُواْ وَجَاهَدُواْ فِى سَبِيلِ اللهِ أُولَئِكَ يَرْجُونَ رَحْمَتَ اللهِ، وَاللهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
‘‘আর এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই যে, যারা ঈমান এনেছে এবং যারা হিজরত করেছে আর আল্লাহর পথে লড়াই (জিহাদ) করেছে, তারা আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশী। আর আল্লাহ্ হচ্ছেন ক্ষমাকারী, করুণাময়’’। (সূরা বাকারা-২:২১৮)
ঈমান আনয়ন করা যেমন প্রতিটি মানুষের উপর ফরয ঠিক তেমনই প্রত্যেক মুমিনের উপর প্রতি মুহূর্তে দু’টি হিজরত করা আবশ্যক। এককভাবে ও ইখলাসের সাথে আল্লাহর ইবাদত, আল্লাহর দিকে ফিরে আসা, আল্লাহর উপর ভরসা করা, আল্লাহকে ভয় করা, আল্লাহর কাছেই আশা-আকাঙ্খা করা, আল্লাহকে ভালবাসা এবং একনিষ্টভাবে তাওবা করার মাধ্যমেই আল্লাহর দিকে হিজরত করতে হবে। আর রসূলের অনুসরণ, তাঁর আদেশের সামনে নত হওয়া, তিনি যেই সংবাদ দিয়েছেন তা বিশ্বাস করা এবং তাঁর আদেশকে অন্যদের আদেশের উপর প্রাধান্য দেয়ার মাধ্যমে রসূলের দিকে হিজরত করতে হবে। রসূল (ﷺ) বলেন-
فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلَى اللهِ وَرَسُولِهِ فَهِجْرَتُهُ إِلَى اللهِ وَرَسُولِهِ ومَن كانت هِجْرتُهُ إلى دُنيا يُصيبها أو امرأةٍ يتزوَّجُهَا فَهِجْرته إلى ما هاجر إليه
‘‘কারো হিজরত যদি আল্লাহ্ এবং তাঁর রসূলের উদ্দেশ্যে হয়, তাহলে তা আল্লাহ্ এবং তাঁর রসূল (ﷺ) এর উদ্দেশ্যেই হিজরত বলে গণ্য হবে। আর কারো হিজরত যদি দুনিয়া অর্জন অথবা কোন নারীকে বিবাহের উদ্দেশ্যে হয়, তাহলে তার হিজরত সেভাবেই গৃহীত হবে যে উদ্দেশ্যে সে হিজরত করেছে।[2]
ঠিক তেমনই আল্লাহর আনুগত্যে নফসকে বাধ্য রাখতে এবং শয়তানের ধোঁকা ও প্রতারণা থেকে বাঁচার জন্য জিহাদ করা প্রত্যেক ব্যক্তির উপর ফরজে আইন। এখানে একজন অন্যজনের স্থলাভিষিক্ত হবে না।
কাফের ও মুনাফেকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার বিষয়টি সম্পূর্ণ আলাদা। এখানে উম্মাতের কোন একটি দল এই প্রকারের জিহাদে আঞ্জাম দিলে এবং তাদের দ্বারা উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়ে গেলে অন্যদের উপর হতে ফরযিয়াত উঠে যাবে।
[2]. বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল অহী।