সহীহ বুখারীতে নাবী (ﷺ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেছেন-
إِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْعُطَاسَ وَيَكْرَهُ التَّثَاؤُبَ فَإِذَا عَطَسَ فَحَمِدَ اللهَ؛ فَحَقٌّ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ سَمِعَهُ أَنْ يُشَمِّتَهُ، وَأَمَّا التَّثَاؤُبُ؛ فَإِنَّمَا هُوَ مِنَ الشَّيْطَانِ فَلْيَرُدَّهُ مَا اسْتَطَاعَ، فَإِذَا قَالَ: هَا ضَحِكَ مِنْهُ الشَّيْطَانُ
‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ হাঁচি দেয়া পছন্দ করেন এবং হাই তোলা অপছন্দ করেন। সুতরাং তোমাদের কেউ যখন হাঁচি দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ্ বলবেঃ তখন যে সকল মুসলমান তা শুনবে, তাদের প্রত্যেকের কর্তব্য হচ্ছে, ইয়ারহামুকাল্লাহ বলে তার জবাব দেয়া। আর হাই তোলা শয়তানের পক্ষ থেকে। তোমাদের কেউ যখন হাই তুলবে, তখন সে যেন সাধ্যানুযায়ী তা প্রতিহত করার চেষ্টা করে। কেননা তোমাদের কেউ যখন হাই তোলার সময় হা বলে আওয়াজ করে তখন তার এ কাজে শয়তান হাসে’’।[1] সহীহ বুখারীতে আরও উল্লেখ আছে, তোমাদের কেউ যখন হাঁচি দিবে, তখন সে যেন বলে ‘আলহামদু লিল্লাহ’। তার ভাই বা সাথী (যে তা শুনবে সে) যেন বলে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’। যখন হাঁচি দাতার উদ্দেশ্যে ‘ইয়ারহাকামুল্লাহ্’ বলবে, তখন হাঁচি দাতা যেন বলেঃ يَهْدِيْكُمُ الله وَيُصْلِحْ بَالَكُمْ অর্থাৎ আল্লাহ তোমাদের হিদায়াত করুন এবং তোমাদের অবস্থা সংশোধন করুন।[2]
সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে, রসূল (ﷺ) বলেন- তোমাদের কেউ যদি হাঁচি দিয়ে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে তখন তোমরা তার উত্তর দাও। সে যদি আলহামদু লিল্লাহ না বলে তাহলে তোমরা তার উত্তর দিওনা। সহীহ মুসলিমে আরও বর্ণিত হয়েছে যে, এক মুসলিমের উপর অন্য মুসলিমের ছয়টি হক রয়েছে। যখন তুমি তার সাথে সাক্ষাৎ করবে তখন তাকে সালাম দাও, যখন সে তোমাকে দাওয়াত দিবে তখন তার দাওয়াত গ্রহণ কর, তোমার কাছে উপদেশ চাইলে তাকে উপদেশ দাও, হাঁচি দিয়ে আলহামদু লিল্লাহ্ বললে তার জবাব দাও, কোন মুসলিম ভাই মারা গেলে তার জানাযায় শরীক হও এবং সে অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাও। তিরমিযীতে আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমার (রাঃ) হতে আরও বর্ণিত হয়েছে যে, আমাদেরকে রসূল (ﷺ) হাঁচি দিয়ে الْحَمْدُ لِلهِ عَلَى كُلِّ حَالٍ (সর্বাবস্থায় সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য) বলতে শিক্ষা দিয়েছেন। ইমাম মালেক নাফে থেকে আর নাফে আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তোমাদের কেউ হাঁচি দিলে যখন তাকে বলা হবে يَرْحَمُكَ اللهُ (আল্লাহ্ তোমার উপর রহম করুন) তখন সে যেন বলে يَرْحَمُنَا اللهُ وَإِيَّاكُمْ وَيَغْفِرُ لَنَا وَلَكُمْ অর্থাৎ আল্লাহ্ তা‘আলা আমাদের ও তোমাদের উপর রহম করুন এবং আমাদেরকে এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করুন।
এই অধ্যায়ের শুরুতে যে হাদীস বর্ণিত হয়েছে, তাতে বুঝা যায় হাঁচির জবাব দেয়া ফরজে আইন। ইবনে আবু যাইদ (রহঃ) এ মতকেই পছন্দ করেছেন। কোন আলেমই এ মতের বিরোধীতা করেন নি।
[2]. ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ) খাত্তাবীর সূত্রে বর্ণনা করে বলেনঃ আল্লাহ্ তা‘আলা হাঁচিকে পছন্দ করেন ও ভালবাসেন। এর কারণ হল হাঁচির মাধ্যমে শরীর হালকা হয় এবং তাতে কর্মদ্যোগ সৃষ্টি হয়। এর মাধ্যমে ইবাদতের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়। তাই আল্লাহ্ তা‘আলা এটিকে ভালবাসেন। এ জন্যই আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া স্বরূপ হাঁচি দিয়ে আলহামদু লিল্লাহ বলার আদেশ করা হয়েছে। অপর পক্ষে হাই এর বিপরীত। প্রচুর খাদ্য গ্রহণের কারণে শরীরে জড়বদ্ধতা সৃষ্টি হয়, শরীর ভারী হয়ে যায় এবং শরীরে অলসতা সৃষ্টি হয়। এর ফলশ্রম্নতিতে হাই আসে। পরিণামে ইবাদতের প্রতি অনাগ্রহ দেখা দেয়। এ কারণেই আল্লাহ্ তা‘আলা হাইকে অপছন্দ করেন। শয়তানও এতে খুশী হয়। তাই হাই আসলে যথা সম্ভব হাত বা রুমাল দিয়ে তা আটকিয়ে রাখতে বলা হয়েছে।