নাবী (ﷺ) হজ্জের কুরবানীতে ছাগল ও উট যবেহ করেছেন। তাঁর স্ত্রীদের পক্ষ হতে গরু কুরবানী করেছেন। তিনি মদ্বীনাতে থাকা অবস্থায়, হজ্জের সফরে এবং উমরার সফরে হাদী (কুরবানী) প্রেরণ করেছেন। তিনি ছাগলের গলায় কেলাদা (কুরবানীর নিদর্শন হিসেবে মালা) পরাতেন। দাগ দিয়ে নিশানা লাগাতেন না। তিনি যদি কাবায় হাদী (কুরবানীর জানোয়ার) পাঠাতেন তাহলে তিনি নিজের উপর কোন হালাল বস্ত্তকেই হারাম মনে করতেন না।
আর তিনি যখন কুরবানীর জন্য মক্কায় উট পাঠাতেন তখন উটের গলায় মালা পরাতেন এবং উটের গায়ে নিশানাও লাগাতেন। তিনি উটের কুঁজের ডান পাশে সামান্য চিরে রক্ত প্রবাহিত করতেন। তিনি যখন হাদী (কুরবানীর জন্তু) পাঠাতেন তখন প্রেরিত ব্যক্তিকে বলে দিতেন, জন্তুটি মরে যাওয়ার উপক্রম হলে সেটিকে যেন যবেহ করে দেয়া হয়। অতঃপর স্বীয় জুতায় জন্তুটির রক্ত মাখিয়ে যেন জন্তুর পৃষ্ঠদেশে রেখে দেয়া হয়। প্রেরিত ব্যক্তিকে আদেশ দিতেন যে, সে এবং তার সাথীগণ সেখান থেকে যেন কিছু না খায়। বরং অন্যদের মাঝে যেন তা বিতরণ করে দেয়া হয়। তাকে খেতে এই জন্য নিষেধ করা হয়েছে যে, যাতে পশুটির যত্ন নিতে সে যেন কোন প্রকার অলসতা না করে। অর্থাৎ এই সন্দেহ যাতে না হয় যে, অযত্ন ও অবহেলার কারণে পশুটি মরে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। ফলে সে যবেহ করে নিজে এবং তার সাথীগণ মাংস খেয়ে নিয়েছে।
নাবী (ﷺ) একটি উট ও একটি গরুর মধ্যে সাতজনের অংশ গ্রহণকে বৈধ বলেছেন। কুরবানীর জন্তু মক্কার উদ্দেশ্যে চালিয়ে নেয়ার সময় চালককে তার উপর আরোহন করার অনুমতি দিয়েছেন। তবে শর্ত হচ্ছে, যদি আরোহনের জন্য অন্য কোন বাহন না পাওয়া যায় এবং যাতে পশুর কষ্ট না হয়। আলী (রাঃ) বলেন- উটনীর যদি বাচ্চা থাকে, তাহলে বাচ্চা পান করার পর অবশিষ্ট দুধ পান করা চালকের জন্য জায়েয আছে।
বাম পা বেঁধে তিন পা-এর উপর খাড়া রেখে উটকে নহর করা (সামনের দু’পা বরাবর বুকে ধাঁরালো অস্ত্র ঢুকিয়ে রক্ত প্রবাহিত করা) তাঁর পবিত্র সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত ছিল। নহর করার সময় ‘আল্লাহু আকবার’ বলতেন। তিনি নিজ হাতে কুরবানীর পশু যবেহ করতেন। কখনও তিনি এই কাজের জন্য অন্য কাউকে নিয়োগ করতেন। তিনি যখন ছাগল যবেহ করতেন স্বীয় ছাগলের চেহারার এক পার্শ্বে ‘পা’ রাখতেন এবং বিসমিল্লাহ্ ‘আল্লাহু আকবার’ বলে ছুরি চালাতেন। তিনি তাঁর উম্মাতের জন্য হজ্জের ও ঈদের কুরবানীর মাংস খাওয়া বৈধ করেছেন এবং তা রেখে দিয়ে পরবর্তীতে সফর সামগ্রী হিসেবে সাথে বহন করার অনুমতি দিয়েছেন। একবার মদ্বীনায় অভাব দেখা যাওয়ার কারণে তিন দিনের বেশী জমা করে রাখতে নিষেধ করেছিলেন। কখনও তিনি কুরবানীর মাংস বিলিয়ে দিতেন। কখনও তিনি বলতেন- যে চায় সে যেন এ রকম করে এবং যে চায় সে যেন কেটে নিয়ে যায়। এ থেকে দলীল পাওয়া যায় যে, বিয়ের অলীমা, ঈদের দিন বা অন্য কোন অনুষ্ঠানে যে সমস্ত বস্ত্ত সকলের জন্য ছিটিয়ে দেয়া হয় বা ফেলে রাখা হয় তা থেকে লুটে নেওয়া জায়েয। অনেকেই কুরবানীর মাংস ও বিবাহের অনুষ্ঠানে ছিটিয়ে রাখা বস্ত্ত থেকে লুটে নেওয়ার মধ্যে পার্থক্য করেছেন। অথচ তা সঠিক নয়। তিনি উমরার হাদী (কুরবানী) মারওয়ার নিকট যবেহ করতেন আর হজ্জে কিরানের হাদী মিনাতে যবেহ করতেন। হালাল না হয়ে তথা ইহরাম না খুলে তিনি কখনও কুরবানীর পশু জবাই করতেন না। সূর্য উদয়ের আগে এবং জামারায়ে কুবরায় পাথর নিক্ষেপ করার পূর্বে তিনি হাদী যবেহ করেন নি। কুরবানীর দিন তথা যুল-হাজ্জ মাসের ১০ তারিখে চারটি কাজ তিনি ধারাবাহিকভাবে করতেন। প্রথমে তিনি পাথর নিক্ষেপ করতেন, অতঃপর কুরবানী করতেন, অতঃপর মাথা মুন্ডাতেন এবং সর্বশেষে তাওয়াফ করতেন। সূর্য উঠার পূর্বে কুরবানী করার অনুমতি দেন নি।