শেষ তাশাহুদ পাঠের পর এবং সালাম ফেরানোর পূর্বে তিনি দু’আ করতেন। আবু হুরায়রা ও ফুযালা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীছে তিনি তা পড়ার আদেশ দিয়েছেন।[1]
সালামের পর কিবলামুখী হয়ে কিংবা মুসল্লিদের দিকে ফিরে দু’আ করা কখনই রসূল (ﷺ) এর সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। সলাতের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল দু’আ তিনি সলাতের ভিতরেই করতেন এবং সলাতের মধ্যেই দু’আ করার আদেশ দিয়েছেন। এটিই মুসল্লির অবস্থার সাথে খুবই সামঞ্জস্যপূর্ণ। কেননা মুসল্লি যতক্ষণ সলাতে থাকে ততক্ষণ তার প্রভুর দিকে মনোনিবেশ রত থাকে (এ অবস্থায় দু’আ কবুল হওয়ার বিরাট একটি সুযোগ)। সালাম ফেরানোর পর এই অবস্থার অবসান হয়ে যায়।
অতঃপর তিনি ডান দিকে মুখ ফিরিয়ে সালাম ফেরানোর সময় বলতেন-
السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ
বাম দিকে সালাম ফেরানোর সময়ও তিনি তা করতেন। এটিই ছিল রসূল (ﷺ)এর সার্বক্ষণিক আমল। হাদীছে সামনের দিকে শুধু একবার সালাম ফিরানোর কথাও বর্ণনা করা হয়। কিন্তু তা বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত নয়। এ ব্যাপারে সুনানের কিতাবসমহে আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসটিই সর্বোত্তম।
তবে তা তাহাজ্জুদ সলাতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আর এই হাদীসটিও মা’লুল (দুর্বল)। তারপরও এখানে এ কথা সুস্পষ্ট নয় যে, রসূল (ﷺ) একবার সালাম ফিরানোকে যথেষ্ট মনে করতেন।
তিনি সলাতে তথা শেষ বৈঠকে এই দু’আ পাঠ করতেনঃ
اللّٰهُمَّ إِنِّى أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَفِتْنَةِ الْمَمَاتِ اللّٰهُمَّ إِنِّى أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْمَأْثَمِ وَالْمَغْرَمِ
‘‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি কবরের আযাব হতে, জাহান্নামের শাস্তি হতে, জীবনের ও মরন কালীন ফিতনা (কঠিন পরীক্ষা) হতে, এবং মসীহ দাজ্জালের ফিতনা হতে। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি গুনাহ ও ঋণগ্রস্ত হওয়া থেকে’’[2]। তিনি এ দু’আও পাঠ করতেনঃ
اللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِى ذَنْبِى وَوَسِّعْ لِى فِى دَارِيْ وَبَارِكْ لِى فِيمَا رَزَقْتَنِى
‘‘হে আল্লাহ! তুমি আমার গুনাহ ক্ষমা করো, আমার ঘরবাড়ি প্রশস্ত করে দাও এবং আমার রিযিকে বরকত দান করো’’।[3] তিনি আরও বলতেন-
اللّٰهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الثَّبَاتَ فِي الْأَمْرِ وَالْعَزِيمَةَ عَلَى الرُّشْدِ وَأَسْأَلُكَ شُكْرَ نِعْمَتِكَ وَحُسْنَ عِبَادَتِكَ وَأَسْأَلُكَ قَلْبًا سَلِيمًا وَلِسَانًا صَادِقًا وَأَسْأَلُكَ مِنْ خَيْرِ مَا تَعْلَمُ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا تَعْلَمُ وَأَسْتَغْفِرُكَ لِمَا تَعْلَمُ و أستغفرك لما تعلم إنك أنت علام الغيوب
‘‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে দ্বীনের উপর দৃঢ়তা এবং কল্যাণ ও হিদায়াতের পথে প্রতিষ্ঠিত রাখার প্রার্থনা করছি। তোমার নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় এবং উত্তমভাবে তোমার ইবাদত করার তাওফীক চাচ্ছি। আরও চাচ্ছি পরিশুদ্ধ আত্মা ও সত্যবাদী জবান। যেই কল্যাণ সম্পর্কে তুমি অবগত আছো, আমি তোমার কাছে তা প্রার্থনা করছি এবং যেই অকল্যাণ সম্পর্কে তুমি অবগত আছো তা থেকে আমি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। তুমি আমার যে সমস্ত গুনাহ সম্পর্কে অবগত আছ, তা থেকে আমি তোমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি, নিশ্চয়ই তুমি অদৃশ্য জগতের সকল বস্ত্ত সম্পর্কে অবগত।[4] রসূল (ﷺ) সলাতের সকল দু’আয় একবচনের শব্দ অর্থাৎ আমি / আমার / আমাকে ইত্যাদি একবচনের ব্যবহার করেছেন; আমরা / আমাদের / আমাদেরকে ইত্যাদি বহুবচনের শব্দ ব্যবহার করেননি।
هو أن ينصب الرجل اليمنى ويخرج اليسرى من الجانب الأيمن ويمكن مقعدته من الأرضগ্ধ
ডান পা খাড়া রেখে ডান দিক দিয়ে বাম পা-কে বের করে দিয়ে যমীনে নিতম্ব লাগিয়ে বসাকে তাওয়ার্রম্নক বলা হয়।
অনুরূপভাবে লেখক শেষ বৈঠকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর উপর দরূপ পাঠ করার কথাও সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন নি। তিনি শুধু বলেছেন যে, সালামের আগে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনেক দুআ পাঠ করতেন। অন্যান্য সহীহ হাদীছে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর সালাম পেশ করার কথা বর্ণিত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে দুরূদে ইবরাহীমি হচ্ছে সর্বোত্তম। দরূদে ইবরাহীমি নিম্নরূপঃ
اللّٰهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ اللّٰهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ ، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍكَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌগ্ধ
‘‘হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিবারের উপর ঐ রূপ রহমত নাযিল কর যে রূপ নাযিল করেছিলে ইবরাহীম আঃ) ও তাঁর পরিবারের উপর নিশ্চয় তুমি প্রশংসনীয় ও সম্মানিত। হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মদ ও তাঁর পরিবারের উপর বরকত নাজিল কর যেমনটি বরকত নাযিল করেছিলে ইবরাহীম ও তাঁর পরিবারের উপর। নিশ্চয় তুমি প্রশংসনীয় ও সম্মানিত। বুখারী, তাও. হা/৩৩৭০, আপ্র. হা/ ৩১২০, ইফা. হা/৩১২, মুসলিম, মিশকাত,হাএ. হা/৯১৯
[2]. বুখারী, তাও. হা/৮৩২, মুসনাদে আহমাদ হা/২৪৬২২, মিশকাত,হাএ. হা/৯৩৯
[3]. ইমাম সুন্নী রহঃ) দিবা-রাত্রির আমলে হাদীসটি র্বণনা করেছেন। ইমাম নববী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। তিরমিযীও হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।, মুসনাদে আহমাদ হা/১৬৬৫০, ইমাম আলবানী রহঃ) বলেনঃ হাদীসটি যঈফ, তবে দুআটি সুন্দর। গায়াতুল মুরাম, হা/ ১১২।
[4]. তিরমিযী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত দাওয়াত। ইমাম আলবানী রহঃ) বলেনঃ হাদীসটির সনদ দুর্বল। আলকালিমুত তায়্যিব, হা/১০৫।