শুরুতে আপনি ক্ষৌরকর্ম অর্থাৎ বগল ও নাভির নীচের চুল পরিষ্কার করুন। নখ কাটুন। মাথার চুল ছোট না করে যেভাবে আছে সেভাবেই রেখে দিন, কেননা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)ও সাহাবায়ে কেরাম এহরামের পূর্বে মাথার চুল কেটেছেন বা মাথা মুন্ডন করেছেন বলে কোনো বর্ণনায় পাওয়া যায় না। ধুলো-বালি লেগে অতিমাত্রায় উসকোখুসকো হওয়ার আশঙ্কা থাকলে— বর্তমান যুগের যন্ত্র-চালিত সফরে এ ধরনের আশঙ্কা নেই বললেই চলে—বিশেষ পদার্থ ব্যবহার করে চুলকে স্থিরকৃত আকারে রাখার জন্য হাদিসে ‘তালবিদ’ করার কথা আছে।[1] তবে এহরামের পূর্বে মাথা মুন্ডন করে ফেলা বা চুল ছোট করে ফেলার কথা নেই।
ক্ষৌরকর্ম সেরে সাবান মাখিয়ে গোসল করুন। গোসল করা সম্ভব না হলে ওজু করুন। ওজু-গোসল কোনটাই যদি করার সুযোগ না থাকে তাহলেও কোনো সমস্যা নেই। এক্ষেত্রে তায়াম্মুম করতে হবে না। এরপর শরীরে, মাথায় ও দাঁড়িতে উত্তম সুগন্ধি মাখুন।[2] স্বাভাবিক সেলাই করা কাপড় পরে এহরামের কাপড় আলাদা একটি ব্যাগে ঢুকিয়ে হজ্জ ক্যাম্প অথবা বিমান বন্দরে চলে যান। আপনার ফ্লাইটের সময়সূচি জেনে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সেরে গাড়িতে ওঠার আগে এহরামের কাপড় পরে নিন। ফরজ নামাজের সময় হলে এহরাম পরার পর নামাজ আদায় করুন। আর ফরজ সালাতের সময় না হলে তাহিয়াতুল ওজুর দু’রাকাত সালাত আদায় করুন। সালাতের পর এহরামের নিয়ত না করে বিমানে আরোহণ করুন। যেহেতু নিয়ত করেননি তাই তালবিয়া পাঠ করা থেকেও বিরত থাকুন। জেদ্দা বিমান বন্দরে পৌঁছার পূর্বে যখন মীকাতের ব্যাপারে ঘোষণা হবে তখন মনে মনে উমরার নিয়ত করুন ও মুখে বলুন لَبَّيْكَ عُمْرةً (লাববাইকা উমরাতান্), এরপর পুরা তালবিয়া-
لَبَّيْكَ اَللّهُمَّ لّبَّيْكْ ، لَبَّيْكّ لا شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكْ ، ِإنَّ الْحّمْدّ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكْ، لا شَرِيْكَ لَكْ
—পড়ে নিন। মাথায় টুপি থাকলে নিয়ত করার পূর্বেই তা সরিয়ে নিন।
সালাতের পর এহরাম বাধা মুস্তাহাব। যদি ফরজ সালাতের পর এহরাম বাধা হয়, তাহলে স্বতন্ত্র নামাজের প্রয়োজন নেই। অন্য সময় এহরাম বাধলে দু রাকাত সালাত আদায় করে নিবে। এ আদায়কৃত নামাজ কি এহরামের নামাজ না তাহিয়্যাতুল ওজুর—এ ব্যাপারে উলামাদের মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ একে এহরামের নামাজ বলেছেন। তবে বিশুদ্ধতম মত হল, এটি তাহিয়্যাতুল ওজু হিসেবে আদায় করা হবে। বিমানের ভেতরে এহরামের নিয়ত করা যদি ঝামেলা মনে করেন তাহলে বিমানে ওঠার পূর্বেই ফরজ সালাত অথবা দু’রাকাত তাহিয়াতুল ওজুর সালাত আদায় করে সালাম ফেরানোর পর মাথায় টুপি থাকলে তা খুলে উপরে যেভাবে বলা হয়েছে সেভাবে উমরার নিয়ত করুন ও তালবিয়া পাঠ করুন। এহরামের আলাদা কোনো সালাত নেই। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)ফরজ সালাতের পর এহরামের নিয়ত করেছিলেন।
এহরামে প্রবেশের পর বেশি বেশি তালবিয়া পড়ুন ও জিকির আযকারে ব্যস্ত থাকুন। এহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ সকল জিনিস থেকে বিরত থাকুন যার বিস্তারিত বর্ণনা একটু পরে আসছে।
[2] - আয়েশা (র) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে, তিনি বলেন,‘ রাসূলুল্লাহ (স) কে আমার এই দু’হাত দিয়ে সুগন্ধিত করেছি, যখন তিনি ইহরাম বেঁধেছেন ও যখন তিনি হালাল হয়েছেন - طيبت رسول الله صلى الله عليه وسلم بيدي هاتين حين أحرم و لحله حين أحل (বোখারি : হাদিস নং ১৬৩৫)