স্থান অথবা কালের সীমারেখাকে মীকাত বলে। অর্থাৎ এহরাম ব্যতীত যে স্থান অতিক্রম করা যায় না, অথবা যে সময়ের পূর্বে হজ্জের এহরাম বাঁধা যায় না সেটাই হল মীকাত।
স্থান বিষয়ক মীকাত (মীকাতে মাকানি)
বেশ দূর থেকে এহরাম বেঁধে রওয়ানা হওয়া আল্লাহর পানে ছুটে যাওয়ার ইচ্ছা-আগ্রহকে আরো মজবুত, আরো পরিপক্ব করে তোলে। নিজের ঈমানি জোশ-জযবাকে শতগুণ বাড়িয়ে ধীরে ধীরে বায়তুল্লাহ শরীফের দিকে এগিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্ককে বহুগুণে দৃঢ় করে দেয় এ ধরনের প্রস্ত্ততি। এ জন্যই, হয়তো, হজে মীকাতের নিয়ম রাখা হয়েছে। মীকাত সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, ‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ)সীমানা বেঁধে দিয়েছেন—মদিনাবাসীদের জন্য যুল হুলায়ফা, শামবাসীদের জন্য জুহফাহ, নাজদবাসীদের জন্য কারনুল মানাযিল, ইয়েমেনবাসীদের জন্য য়ালামলাম, এগুলো তাদের জন্য এবং যারা অন্যত্র থেকে ওই পথে আসে হজ্জ ও উমরা আদায়ের ইচ্ছা নিয়ে তাদের জন্য। আর যারা এ সীমার অভ্যন্তরে বসবাস করবে তাদের স্বস্থানই তাদের এহরামের জায়গা। তদ্রূপভাবে মক্কাবাসী মক্কা থেকে।[1] অন্য এক হাদিসে ইরাকবাসীদের মীকাত যাতু ইর্ক নির্ধারণ করা হয়েছে।[2]
মক্কা থেকে মীকাতসমূহের দূরত্ব
যুল হুলায়ফা: মক্কা থেকে ৪২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বর্তমানে আবয়ারে আলী বলে জায়গাটি পরিচিত। মদিনাবাসী এবং ওই পথ হয়ে যারা আসেন যুল হুলায়ফা তাদের মীকাত।
জুহফাহ: এই জায়গাটি বর্তমানে পরিত্যক্ত হওয়ায় রাবেগ থেকে মানুষেরা এহরাম বাঁধে। মক্কা থেকে রাবেগের দূরত্ব ১৮৬ কিলোমিটার। সৌদি আরবের উত্তরাঞ্চলীয় এলাকার লোকজন, পশ্চিম ও উত্তর আফ্রিকার লোকজন, লেবানন, সিরিয়া, জর্ডান ও ফিলিস্তিনবাসীরা এই জায়গা হতে এহরাম বাঁধেন।
কারনুল মানাযেল: এই জায়গার অন্য নাম আস্সাইলুল কাবির। মক্কা থেকে এর দূরত্ব ৭৮ কিলোমিটার। ইরাক ইরান ও অন্যান্য উপসাগরীয় অঞ্চলের লোকদের মীকাত হল এই কারনুল মানাযেল।
য়ালামলাম: মক্কা থেকে এর দূরত্ব ১২০ কিলোমিটার। ইয়েমেনবাসী ও পাক-ভারত-বাংলাসহ প্রাচ্য ও দূর প্রাচ্য হতে আগমনকারীদের জন্য মীকাত হল এই য়ালামলাম।
যাতু ইরক: মক্কা থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বর্তমানে এই মীকাতটি পরিত্যক্ত। কেননা ওই পথ হয়ে বর্তমানে কোনো রাস্তা নেই। স্থল পথে আসা পূর্বাঞ্চলীয় হাজিরা বর্তমানে সাইল অথবা যুল-হুলায়ফা থেকে এহরাম বাঁধেন।
হাদিস অনুযায়ী মীকাতের বাইরে থেকে আসা হাজিদের জন্য মীকাত থেকে এহরাম বাঁধা ওয়াজিব। তবে যারা মীকাতের সীমানার অভ্যন্তরে বসবাস করেন তাদের অবস্থানের জায়গাটাই হল তাদের মীকাত। অর্থাৎ যে যেখানে আছে সেখান থেকেই হজ্জের এহরাম বাঁধবে। তবে মক্কার হারাম এরিয়ার ভেতরে বসবাসকারী ব্যক্তি যদি উমরা করতে চায় তা হলে তাকে হারাম এরিয়ার বাইরে- যেমন তানয়ীম তথা আয়শা মসজিদে গিয়ে এহরাম বাঁধতে হবে।
মীকাতে মাকানি বিষয়ে কিছু সমস্যার সমাধান
যদি কারও পথে দুটি মীকাত পড়ে তাহলে প্রথম মীকাত থেকেই এহরাম বাঁধা উত্তম। তবে দ্বিতীয় মীকাত থেকেও এহরাম বাঁধা চলে। বাংলাদেশ থেকে মদিনা হয়ে মক্কায় গমনকারী হাজিগণ এই মাসআলার আওতায় পড়েন। অতঃপর তারা জেদ্দা বিমান বন্দরের পূর্বে যে মীকাত আসে সেখান থেকে এহরাম না বেঁধে মদিনা থেকে মক্কা যাওয়ার পথে যে মীকাত পড়ে—যুল হুলায়ফা—সেখান থেকে এহরাম বাঁধেন।
যদি কোনো ব্যক্তি এহরাম না বেঁধে মীকাত অতিক্রম করত: ভেতরে চলে আসে তার উচিৎ হবে মীকাতে ফিরে গিয়ে এহরাম বাঁধা। এমতাবস্থায় তার ওপর ক্ষতিপূরণ হিসেবে ‘দম’ দেয়া ওয়াজিব হবে না। মীকাতে ফিরে না গিয়ে যেখানে আছে সেখান থেকে এহরাম বাঁধলে হজ্জ-উমরা হয়ে যাবে বটে তবে ‘দম’ দেয়া ওয়াজিব হবে। স্মরণ করিয়ে দেওয়া ভাল যে, এহরাম না বেঁধে মীকাত অতিক্রম করে ফেললে ভেতরে ঢুকে মসজিদে আয়শায় গিয়ে হজ্জের এহরাম বাঁধলে চলবে না, কেননা মসজিদে আয়শা হেরেম এলাকার অভ্যন্তরে বসবাসকারীদের উমরার মীকাত।
কাল বিষয়ক মীকাত (মীকাতে যামানি)
পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘হজ্জ হয় নির্দিষ্ট কয়েকটি মাসে’।[3]
এ নির্দিষ্ট মাসগুলো হল—শাওয়াল, যিলকদ ও জিলহজ্জ মাসের ১০ তারিখ পর্যন্ত। কারও কারও মতে জিলহজ্জ মাসের পুরোটাই হজ্জের মাস।
শাওয়াল মাস থেকে যেহেতু হজ্জের মাস শুরু হয় তাই শাওয়াল মাসের পূর্বে হজ্জের এহরাম বাঁধা উচিৎ হবে না। তা বরং খেলাফে সুন্নত ও মাকরুহে তাহরীমি হবে।
[2] - أن رسول الله وقت لأهل العراق ذات عرق (মুসলিম : ২/৮৪১)
[3] - الْحَجُّ أَشْهُرٌ مَعْلُومَاتٌ (সূরা বাকারা : ১৯৭)