ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
যিলহজ মাসের প্রথম দশ দিন, ঈদ, কুরবানি ও আইয়ামে তাশরীকের দিনসমূহ করনীয়, বর্জনীয় ও সুন্নাহ সমূহ জাকেরুল্লাহ আবুল খায়ের
ভূমিকা

إِنَّ الْحَمْدُ للهِ ، نَحْمَدُهُ وَنَسْتَعِيْنُهُ وَنَسْتَغْفِرُهُ ، وَنَعُـوْذُ بِاللهِ مِنْ شُرُوْرِ أَنْفُسِنَا ، وَمِنْ سَيِّئَاتِ أَعْمَالِنَا ، مَنْ يَّهْدِهِ اللهُ فَلاَ مُضِلَّ لَهُ ، وَمَنْ يُّضْلِلِ اللهُ فَلاَ هَادِيَ لَهُ ، وَأَشْهَدُ أَنْ لاَّ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ

নিশ্চয়ই যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য। আমরা তাঁরই প্রশংসা করি, তার কাছেই সাহায্য চাই, তার নিকটই ক্ষমা প্রার্থনা করি। আল্লাহর নিকট আমরা আমাদের প্রবৃত্তির অনিষ্টতা ও আমাদের কর্মসমূহের ক্ষতি থেকে আশ্রয় কামনা করি। আল্লাহ যাকে হেদায়াত দেন, তাকে গোমরাহ করার কেউ নেই। আর যাকে গোমরাহ করেন তাকে হেদায়াত দেওয়ার কেউ নেই। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্যিকার ইলাহ নেই, তিনি একক, তার কোনো শরিক নাই। আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। সালাত ও সালাম নাযিল হোক তার উপর, তার পরিবার-পরিজন ও তার সাহাবীদের উপর এবং যারা কিয়ামত অবধি কল্যাণের সাথে তাদের অনুসরণ করেন তাদের উপর।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন স্বীয় বান্দাদের প্রতি অধিক দয়ালু ও ক্ষমাশীল। তিনি তার বান্দাদের যে কোনো উপায়ে ক্ষমা করতে ও তাদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করতে পছন্দ করেন। এ কারণেই আল্লাহ বান্দাদের জন্য বিভিন্ন আমলের বিনিময় অগণিত অসংখ্য পুরস্কার ঘোষণা করেন। বিভিন্ন সময়ে আল্লাহ তাদের আমল করার সুযোগ দিয়ে তাদের নাজাতের ব্যবস্থা করেন। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা রমজান মাসকে স্বীয় বান্দাদের জন্য রহমত ও মাগফিরাতের মাস হিসেবে নির্বাচন করেছেন। আবার রমজান মাসের শেষ দশ দিনকে আরও বেশি গুরুত্ব দেন। আবার শেষ দশ দিনের মধ্যে এমন একটি রাত রেখেছেন যে রাতের ইবাদত হাজার রাতের ইবাদতের চেয়ে উত্তম বলে ঘোষণা দেন। রমজান মাসের রোজা রাখাকে জাহান্নাম থেকে বাচার ডাল স্বরূপ বলা হয়েছে এবং আশুরার রোজা রাখলে এক বছরের গুনাহ মাপের ঘোষণা দিয়েছেন এবং আরাফার দিবসের রোজা রাখাতে পূর্বের ও পরবর্তী এক বছরের গুনাহ মাফের ঘোষণা দিয়েছেন। এভাবেই আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় বান্দাদের প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ দেখিয়ে তাদের কোনো না কোনো উপায়ে জান্নাত লাভের পথকে সহজ করেছেন। যাতে বান্দাগণ আল্লাহর নৈকট্য লাভে ধন্য হন। এ ধরনের একটি মৌসুম হল, যিলহজ মাসের প্রথম দশ দিন ও তার পরবর্তী তাশরীকের দিনসমূহ। আল্লাহ তা‘আলার অশেষ মেহেরবানী যে, তিনি নেককার বান্দাদের জন্য এ মৌসুমে স্বীয় বান্দাদের জন্য নেক আমল করার সুযোগ করে দিয়েছেন এবং দিনগুলোতে যে কোনো ধরনের নেক আমল করা আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় বলে আখ্যায়িত করেছেন। এ সুযোগটি একজন বান্দার দীর্ঘ জীবনে বারবার আসে আর যায়। সৌভাগ্যবান সে ব্যক্তি যে আল্লাহর দেওয়া সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ধন্য হতে পারে। আর দুর্ভোগ ও হতাশা তাদের জন্য এ সুযোগ পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারেনি। নিজের ইহকাল ও পরকালের জীবনের জন্য কোনো কিছুই উপার্জন করতে পারে নি।

ইবাদতের মৌসুমগুলো আমরা কিভাবে গ্রহণ করব?

প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য হচ্ছে, ইবাদতের মৌসুমগুলোতে বেশী বেশী তাওবা করা। গুনাহ ও অবাধ্যতা থেকে বিরত থাকা। কারণ, গুনাহ মানুষকে আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত রাখে। গুনাহ ব্যক্তির অন্তর ও আল্লাহর মাঝে বাধার সৃষ্টি করে। বান্দার আরও উচিৎ শুভদিনগুলোতে কল্যাণকর কাজ ও এমন সব আমলে নিয়োজিত থাকা, যা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে সহায়ক হয়। যে আল্লাহর পথে চেষ্টা মুজাহাদা করবে, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য হেদায়াতের সব পথ খুলে দেবেন। তিনি বলেন:

﴿ وَٱلَّذِينَ جَٰهَدُواْ فِينَا لَنَهۡدِيَنَّهُمۡ سُبُلَنَاۚ ٦٩ ﴾ [العنكبوت: ٦٩]

“আর যারা আমাদের পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়, তাদেরকে আমরা অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব”।[1]

তিনি অন্যত্র বলেন:

﴿ ۞وَسَارِعُوٓاْ إِلَىٰ مَغۡفِرَةٖ مِّن رَّبِّكُمۡ وَجَنَّةٍ عَرۡضُهَا ٱلسَّمَٰوَٰتُ وَٱلۡأَرۡضُ أُعِدَّتۡ لِلۡمُتَّقِينَ ١٣٣ ﴾ [ال عمران: ١٣٣]

“আর তোমরা দ্রুত অগ্রসর হও তোমাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও জান্নাতের দিকে, যার পরিধি আসমানসমূহ ও যমীনের সমান, যা মুত্তাকীদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে”।[2]

হে মুসলিম ভাই, এ গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলোর জন্য সজাগ থাকুন, তার প্রতি দৃষ্টি নিবন্ধ রাখুন, তা যেন কোনভাবেই আপনার থেকে অবহেলায় অতিবাহিত না হয়। অন্যথায় আপনি এমন দিন লজ্জিত হবেন, যে দিনের লজ্জা আপনার কোনো কাজে আসবে না। কারণ, দুনিয়া ছায়ার ন্যায়; এর কোনো স্থায়িত্ব নাই। আজ আমরা আমাদের স্বীয় কর্মস্থলে অবস্থান করছি আগামীকাল অবস্থান নাও করতে পারি। আমাকে সব সময় এ চিন্তা করতে হবে, প্রতিদান ও হিসাব-নিকাশের দিবসে, আমার গন্তব্য কোথায় হবে, জান্নাত নাকি জাহান্নাম। এ জন্য তোমাকে এ দুনিয়া থেকে আমলের পুঁজি সঞ্চয় করতে হবে। তাদের মত হয়ো না যারা নিজের জন্য যা কল্যাণ সে সম্পর্কে অমনোযোগী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ وَلَا تَكُونُواْ كَٱلَّذِينَ نَسُواْ ٱللَّهَ فَأَنسَىٰهُمۡ أَنفُسَهُمۡۚ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡفَٰسِقُونَ ١٩ ﴾ [الحشر: ١٩]

“তোমরা তাদের মত হয়ো না যারা আল্লাহকে ভুলে গিয়েছিল ফলে আল্লাহও তাদেরকে আত্মবিস্মৃত করে দিয়েছিলেন; আর তারাই হল ফাসিক”।[3]

তুমি তাদের মত হও, যাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,

﴿إِنَّهُمۡ كَانُواْ يُسَٰرِعُونَ فِي ٱلۡخَيۡرَٰتِ وَيَدۡعُونَنَا رَغَبٗا وَرَهَبٗاۖ وَكَانُواْ لَنَا خَٰشِعِينَ ٩٠﴾ [الانبياء: ٩٠]

“তারা সৎ কাজে প্রতিযোগিতা করত। আর আমাকে আশা ও ভীতিসহ ডাকত। আর তারা ছিল আমার নিকট বিনয়ী”।[4]

[1] আনকাবূত, আয়াত: ৬৯

[2] আলে-ইমরান, আয়াত: ১৩৩

[3] সূরা হাসর, আয়াত: ১৯

[4] সূরা আম্বিয়া, আয়াত: ৯০