ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
নাজাত প্রাপ্ত দলের আকীদাহ প্রশ্ন এবং তাঁর উত্তরসমুহ হাফেয বিন আহমাদ আল-হাকামী (রহঃ)
(৪৭) শির্কে আসগার বা ছোট শির্ক কাকে বলে?

আল্লাহ তা’আলার উদ্দেশ্যে বাস্তবায়ন কৃত আমল মানুষকে দেখানোর জন্য সুন্দর করার নাম শির্কে আসগার[1]। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

فَمَنْ كَانَ يَرْجُوا لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلاً صَالِحًا وَلاَ يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا

‘‘সুতরাং যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তার পালনকর্তার এবাদতে কাউকে শরীক না করে’’। (সূরা কাহ্ফঃ ১১০)

ছোট শির্কের কতিপয় উদাহরণঃ

ক) রিয়া তথা লোক দেখানো আমলঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

(إِنَّ أَخْوَفَ مَا أَخَافُ عَلَيْكُمُ الشِّرْكُ الأَصْغَرُ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَا الشِّرْكُ الأَصْغَرُ قَالَ الرِّيَاءُ )

‘‘আমি তোমাদের উপর সব চাইতে বেশী ভয় করছি ছোট শির্কের। তারা বললেনঃ ছোট শির্ক কি? উত্তরে তিনি বললেনঃ তা হল রিয়া তথা লোক দেখানো আমল। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার ব্যাখ্যায় বলেনঃ কোন মানুষ নামায আদায়ের জন্যে দাঁড়াল। যখন দেখল যে, লোকজন তার নামাযকে দেখছে, তখন সালাতকে আরো সুন্দরভাবে আদায় করে’’।[2]

খ) আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে শপথ করাঃ আল্লাহ্ ছাড়া অন্যের নামে শপথ করা ছোট শির্ক। যেমন পিতার নামে, মূর্তির নামে, কাবার নামে, আমানতের নামে বা আরো অন্যান্য বস্ত্তর নামে শপথ করা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

(لاَ تَحْلِفُوا بِآبَائِكُمْ وَلاَ بِأُمَّهَاتِكُمْ وَلاَ بِالأَنْدَادِ)

‘‘তোমরা তোমাদের পিতা-মাতা ও বাতিল মাবুদদের নামে শপথ করো না’’।[3] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ

(لاتقولوا والكعبة ولكن قولوا ورب الكعبة)

‘‘তোমরা এ কথা বল না যে, কাবার শপথ; বরং তোমরা বল কাবার প্রভুর শপথ’’।[4] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ

( وَلاَ تَحْلِفُوا إِلاَّ بِاللَّهِ)

‘‘তোমরা আল্লাহ্ ছাড়া অন্যের নামে শপথ করো না’’।[5] তিনি আরো বলেনঃ

( مَنْ حَلَفَ بِالأَمَانَةِ فَلَيْسَ مِنَّا )

‘‘যে ব্যক্তি আমানতের শপথ করল সে আমাদের অন্তর্ভূক্ত নয়’’।[6] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ

(مَنْ حَلَفَ بِغَيْرِ اللَّهِ فَقَدْ كَفَرَ أَوْ أَشْرَكَ )

‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ছাড়া অন্যের নামে শপথ করল, সে কুফরী করল অথবা শির্ক করল’’।[7]

গ) ছোট শির্কের আরেকটি উদাহরণ হলঃ যেমন এ কথা বলা, যা আল্লাহ্ চেয়েছেন এবং আপনি চেয়েছেন। যে ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলেছিলঃ আল্লাহ্ যা চান এবং আপনি যা চান, তাকে তিনি বললেনঃ তুমি কি আমাকে আল্লাহর শরীক স্থাপন করলে? বরং তিনি একাই যা চান, তাই করেন’’।[8]

ঘ) ছোট শির্কের আরেকটি উদাহরণ হলঃ এভাবে বলা যে, যদি আল্লাহ্ এবং আপনি না থাকতেন! তাহলে আমার বিপদ হত। আমার তো শুধু আল্লাহ্ এবং আপনি ছাড়া আর কেউ নেই কিংবা এ কথা বলা যে, আমি আল্লাহ এবং আপনার আশ্রয় গ্রহণ করছি, ইত্যাদি। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) আরো বলেনঃ

(لاَ تَقُولُوا مَا شَاءَ اللَّهُ وَشَاءَ فُلاَنٌ وَلَكِنْ قُولُوا مَا شَاءَ اللَّهُ ثُمَّ شَاءَ فُلاَنٌ)

‘‘তোমরা এ কথা বল না যে, আল্লাহ যা চান এবং অমুক যা চায়; বরং তোমরা বল আল্লাহ যা চান অতঃপর অমুক যা চায়’’।[9]

[1] - শির্কে আসগার মানুষকে ইসলাম থেকে বের করে দেয় না। তবে এটি আমলকে নষ্ট করে দেয়। কেননা উক্ত রিয়াকারী মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করাই তার উদ্দেশ্যে পরিণত করেছে। কখনও এমন কাজ বড় শির্কের পর্যায়ে পৌঁছতে পারে।

[2] - ইবনে মাজাহ, অধ্যায়ঃ কিতাবুয্ যুহ্দ। ইমাম আলবানী (রঃ) হাদীছটিকে সহীহ বলেছেনঃ হাদীছ নং- ৩২।

[3] - আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ আইমান, নাসাঈ, অধ্যায়ঃ কিতাবুল আইমান। ইমাম আলবানী সহীহ বলেছেনঃ দেখুন সহীহুল জামে, হাদীছ নং- ৭২৪৯

[4]- নাসাঈ, অধ্যায়ঃ কিতাবুল আইমান। ইমাম আলবানী সহীহ বলেছেন, সহীহুত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব, হাদীছ নং- ২৯৫২।

[5] - এটি পূর্বে বর্ণিত হাদীছেরই অংশ বিশেষ।

[6] - আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ কিতাবুল আইমান, ইমাম আলবানী সহীহ বলেছেন, সিলসিলায়ে সহীহা, হাদীছ নং- ৯৪।

[7] - আবু দাউদ, তিরমিযী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল আইমান।

[8] - আল-আদাবুল মুফরাদ, ইমাম আলবানী সহীহ বলেছেন, সিলসিলায়ে সহীহা, হাদীছ নং- ১৩৯।

[9] - আবু দাউদ ও মুসনাদে ইমাম আহমাদ। ইমাম আলবানী সহীহ বলেছেন, সিলসিলায়ে সহীহা, হাদীছ নং- ১৩৭।