ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
ফাতাওয়া ও প্রশ্নোত্তর দল, সংগঠন, ফিরকা ইত্যাদি সম্পর্কে আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
আমাদের গ্রামে একটা আহলে হাদিস মসজিদ আছে। এখানে এখন যারা মসজিদ কমিটিতে আছে তারা বলছে যে, সংগঠন করা বা না করা ব্যক্তিগত বিষয়। কেউ চাইলে সংগঠন করবে আর কেউ না চাইলে করবে না, এর জন্য বিভেদ করা যাবে না। মসজিদের ইমাম সংগঠন করেন কিন্তু তিনিও খুতবায় একই কথা বলেছেন। কিন্তু এক পক্ষ আছে, যারা আমির মানা ও সংগঠন করাকে ‘ফরজ’ বলছেন। তারা সংগঠনের কেন্দ্র থেকে নেতাদেরকে এনে নিজেদের মত করে দশ জনকে নিজেদের ইচ্ছে মত সাংগঠনিক পদ দিয়ে দিয়েছে-যাদের ভিতর এমন লোকও রয়েছে যারা আদতে নামাজই পড়ে না। এখন তারা বর্তমান মসজিদ কমিটিকে বাতিল করতে চাচ্ছে এবং বলছে, যারা সংগঠন করে না তারা যেন মসজিদে না আসে। কেউ সংগঠন না করলে সে মসজিদের কোনও দায়িত্বেও থাকতে পারবে না। এখন করণীয় কী? এ নিয়ে হয়তো বিশাল এক মারামারি হতে পারে। (আল্লাহ হেফাজত করুন। আমিন)

ব্যবস্থাপনার ভাষায়, বিশেষ কোনও লক্ষ্য অর্জনের জন্য যখন কিছু ব্যক্তি একত্রিত হয় এবং ধারাবাহিকভাবে সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত থাকে তাকে সংগঠন (organisation) বলে।”
সংগঠনের উদ্দেশ্য হল, সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সংঘবদ্ধভাবে কোন লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য কাজ করা। সংগঠনের ফলে অনেক বড় বড় জটিল ও ব্যয়বহুল কাজ খুব সহজে এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়। কারণ এখানে দক্ষ ও উপযুক্ত জনশক্তির মধ্যে দায়িত্ব বণ্টন করে দেওয়া হয় এবং উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সম্মিলিত শ্রম, দক্ষতা, জ্ঞান-বুদ্ধি, অভিজ্ঞতা, কলাকৌশল, অর্থ ইত্যাদি কাজে লাগানো হয়।

সুতরাং পরিবেশ ও প্রেক্ষাপট অনুযায়ী দাওয়াতি কাজের ক্ষেত্রে কতিপয় শর্ত সাপেক্ষে সাংগঠনিক প্রক্রিয়া অবলম্বন করা জায়েজ। বিজ্ঞ আলেমদের মতে, আল্লাহ ভীতি ও সৎ কর্মে পারস্পারিক সাহায্য-সহযোগিতা, মানুষের কল্যাণ সাধনের উদ্দেশ্যে কতিপয় শর্ত সাপেক্ষে সংগঠন করা কল্যাণকর এবং এর পর্যাপ্ত উপকারিতা রয়েছে।
কিন্তু যারা সংগঠন করাকে ‘ফরজ’ বলেছেন তারা ভুলের উপরে প্রতিষ্ঠিত। তারা মুসলিমদের জামাআত এবং আমিরের আনুগত্য সংক্রান্ত হাদিসগুলোকে স্পষ্টই অপব্যাখ্যা করছে। কেননা হাদিসে বর্ণিত জামাআত দ্বারা উদ্দেশ্য, আল্লাহর কিতাব ও রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অনুসরণকারী এবং শরিয়তের পাবন্দ মুসলিমগণ। তারা পৃথিবীর যে প্রান্তেই অবস্থান করুক না কেন। তাদের সংখ্যা কম বা বেশি যাই হোক না কেন। এমনকি চতুর্দিকে ফিতনা-ফ্যাসাদের সময় একজন ব্যক্তিও যদি আল্লাহর দীনকে আঁকড়ে থাকে তাকেও ‘জামাআত’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

আর আমির দ্বারা উদ্দেশ্য মুসলিম শাসক এবং তার প্রতিনিধি; তথাকথিত সংগঠনের আমির নয়।
"যারা সংগঠন করবে না তারা মসজিদে যেন না আসে" এমন বক্তব্য মানুষকে আল্লাহর ঘর থেকে বাধা দেওয়ার নামান্তর-যা স্পষ্টতই জুলুম এবং হারাম। আল্লাহ বলেন,


وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّن مَّنَعَ مَسَاجِدَ اللَّهِ أَن يُذْكَرَ فِيهَا اسْمُهُ وَسَعَىٰ فِي خَرَابِهَا

“আর তার চাইতে কে বড় জালিম (অত্যাচারী) আর কে আছে যে, আল্লাহর মসজিদ সমূহে আল্লাহর নামের জিকির করতে বাধা প্রদান করে আর সেগুলোর ক্ষতি সাধনের চেষ্টা করে?” [সূরা: বাকারা: ১১৪]

আল্লাহ তাআলা মুসলিম সমাজে জাহেলদেরকে 'সাংগঠনিক জাহেলিয়াত' থেকে হেফাজত করুন। আমিন।