ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে ইসলামী ফিকাহ প্রথম পর্ব - তাওহীদ ও ঈমান মুহাম্মাদ ইবনে ইবরাহীম আত্তুওয়াইজিরী
৯. ঈমানের কিছু শাখা-প্রশাখা

ঈমানের শাখা-প্রশাখা অনেক রয়েছে যা উত্তম কথা, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ও অন্তরের কাজসমূহকে বুঝায়।


عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:্র الْإِيمَانُ بِضْعٌ وَسَبْعُونَ أَوْ بِضْعٌ وَسِتُّونَ شُعْبَةً، فَأَفْضَلُهَا قَوْلُ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ ،وَأَدْنَاهَا إِمَاطَةُ الْأَذَى عَنْ الطَّرِيقِ ، وَالْحَيَاءُ شُعْبَةٌ مِنْ الْإِيمَانِ أخرجه مسلم.


আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: ‘‘ঈমানের তেহাত্তর বা তেষট্টির অধিক শাখা-প্রশাখা রয়েছে। এর মধ্যে সর্বোত্তম হলো ‘‘লাা ইলাাহা ইল্লাল্লাাহ’’ আর সর্বনিম্ন হচ্ছে রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস দূর করা। আর লজ্জাও ঈমানের একটি শাখা।’’[1]


রসূলুল্লাহ (সা.)-এর ভালোবাসা:

عَنْ أَنَسٍ  قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:্র لاَ يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهِ ،وَوَلَدِهِ ،وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ متفق عليه.


আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী (সা.) বলেছেন: ‘‘তোমাদের কেউ ততক্ষণ পূর্ণ মু‘মিন হতে পারবে না যতক্ষণ আমি তার নিকট তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি ও সকল মানুষের চেয়ে বেশি প্রিয় না হব।’’[2]


আনসার সাহাবীগণকে ভালোবাসা:


عَنْ أَنَسِ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ:্র آيَةُ الْإِيمَانِ حُبُّ الْأَنْصَارِ ، وَآيَةُ النِّفَاقِ بُغْضُ الْأَنْصَارِ متفق عليه.


আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি নবী (সা.) থেকে বর্ণনা করেন তিনি (সা.) বলেছেন: ‘‘ঈমানের পরিচয় হলো আনসারী সাহাবাগণকে ভালোবাসা। আর আনসারগণকে ঘৃণা করা মুনাফেকের আলামত।’’[3]


মু‘মিনগণকে ভালোবাসা:


عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:্র لاَ تَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ حَتَّى تُؤْمِنُوا، وَلَا تُؤْمِنُوا حَتَّى تَحَابُّوا، أَوَلَا أَدُلُّكُمْ عَلَى شَيْءٍ إِذَا فَعَلْتُمُوهُ تَحَابَبْتُمْ ،أَفْشُوا السَّلَامَ بَيْنَكُمْ أخرجه مسلم.


আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: ‘‘তোমরা জান্নাতে ততক্ষণ প্রবেশ করতে পারবে না যতক্ষণ মু‘মিন না হবে। আর তোমরা মু‘মিন হতে পারবে না যতক্ষণ আপোসে একে অপরকে ভাল না বাসবে। আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি কাজের কথা বলে দিব না যা করলে আপোসের মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি হবে? নিজেদের মধ্যে বেশি বেশি সালাম লেনদেন ও প্রচার করবে।’’[4]


মুসলিম ভাইকে ভালোবাসা:


عَنْ أَنَسٍ  عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ:্র لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى يُحِبَّ لِأَخِيهِ أَوْ لِجَارِهِ مَا يُحِبُّ لِنَفْسِهِ  متفق عليه.


আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি নবী (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি (সা.) বলেছেন: ‘‘তোমাদের কেউ ততক্ষণ পূর্ণ মু‘মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ সে তার মুসলিম ভাই অথবা প্রতিবেশীর জন্য ঐ জিনিস পছন্দ না করবে যা তার নিজের জন্য পছন্দ করে।’’[5]

 

প্রতিবেশী ও মেহমানের সঙ্গে সদ্ব্যবহার ও সম্মান করা এবং কল্যাণকর কথা ব্যতীত চুপ থাকা:


عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ:্র مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَصْمُتْ ،وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيُكْرِمْ جَارَهُ ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ  متفق عليه.

 

আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি রসূলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি (সা.) বলেছেন: ‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের উপর বিশ্বাস রাখে সে যেন কল্যাণকর কথা বলে আর না হয় চুপ থাকে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের উপর বিশ্বাস রাখে সে যেন তার প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের উপর বিশ্বাস রাখে সে যেন তার মেহমানকে সম্মান করে।’’[6]


সৎকর্মের আদেশ ও অসৎকর্মের নিষেধ:


عن أَبِي سَعِيدٍ الخدري  قال: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ:্র مَنْ رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ، فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ، فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ، وَذَلِكَ أَضْعَفُ الْإِيمَانِ أخرجه مسلم.


আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি:‘‘তোমাদের যে কেউ যে কোন গর্হিত কাজ দেখবে সে যেন তার হাত দ্বারা তা প্রতিহত  করে। যদি তার শক্তি না রাখে তবে তার জবান দ্বারা তার প্রতিবাদ করে। তাও যদি না পারে তবে তার অন্তর দ্বারা যেন তা ঘৃণা করে। আর ইহাই হলো দুর্বল ঈমানের পরিচয়।’’[7]


অন্যের জন্য কল্যাণ কামনা করা:

عَنْ تَمِيمٍ الدَّارِيِّ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ:্র الدِّينُ النَّصِيحَةُ، قُلْنَا لِمَنْ ؟ قَالَ لِلَّهِ، وَلِكِتَابِهِ ، وَلِرَسُولِهِ، وَلِأَئِمَّةِ الْمُسْلِمِينَ، وَعَامَّتِهِمْ  أخرجه مسلم.


তামীম দারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন: ‘‘দ্বীন ইসলাম হলো অন্যের কল্যাণ কামনা করা। আমরা (সাহাবায়ে কেরাম) বললাম কার জন্যে? তিনি বললেন: আল্লাহর জন্যে, তাঁর কিতাবের (কুরআনের) জন্যে, তাঁর রসূলের জন্যে, মুসলিমদের নেতাদের জন্যে ও সাধারণ মুসলিমদের জন্যে।’’[8]

[1]. মুসলিম হাঃ নং ৩৫
[2]. বুখারী হাঃ নং ১৫ ও মুসলিম হাঃ নং ৪৪
[3]. বুখারী হাঃ নং ১৭ ও মুসলিম হাঃ নং ৭৪
[4]. মুসলিম হাঃ নং ৫৪
[5]. বুখারী হাঃ নং ১৩ ও মুসলিম হাঃ নং ৪৫
[6]. বুখারী হাঃ নং ৬০১৮ ও মুসলিম হাঃ নং ৪৭
[7]. মুসলিম হাঃ নং ৪৯
[8]. মুসলিম হাঃ নং ৫৫