নারী একা হলে পুরুষদের পিছনে একাই কাতার করবে। কারণ, আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নিয়ে সালাত পড়লেন, তিনি বলেন: আমি এবং এক ইয়াতীম তার পিছনে দাঁড়ালাম, আর বৃদ্ধা আমাদের পিছনে দাঁড়িয়েছে”।[1]
তার থেকে আরো বর্ণিত, আমাদের বাড়িতে আমি ও ইয়াতীম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পিছনে সালাত পড়েছি, আর আমার মা উম্মে সুলাইম আমাদের পিছনে ছিল”।[2]
যদি উপস্থিত নারীদের সংখ্যা বেশি হয়, তাহলে তারা পুরুষদের পিছনে এক বা একাধিক কাতার করে দাঁড়াবে। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাচ্চাদের সম্মুখে পুরুষদের দাঁড় করাতেন, বাচ্চারা পুরুষদের পিছনে দাঁড়াত, আর নারীরা দাঁড়াত বাচ্চাদের পিছনে। এ জাতীয় হাদীস ইমাম আহমদ বর্ণনা করেছেন। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
»خير صفوف الرجال أولها، وشرها آخرها، وخير صفوف النساء آخرها، وشرها أولها«
“পুরুষদের সর্বোত্তম কাতার প্রথম কাতার, নিম্নমানের কাতার শেষেরটা, আর নারীদের সর্বোত্তম কাতার শেষেরটা, নিম্নমানের কাতার শুরুরটা”।[3]
এ দু’টি হাদীস প্রমাণ করে নারীরা পুরুষদের পিছনে কাতারবদ্ধ দাঁড়াবে, তাদের পিছনে বিচ্ছিন্নভাবে সালাত পড়বে না, হোক সেটা ফরয সালাত অথবা তারাবীহের সালাত।
ইমাম সালাতে ভুল করলে নারীরা তাকে সতর্ক করবে ডান হাতের কব্জি দিয়ে বাম হাতের পৃষ্ঠদেশে থাপ্পড় মেরে বা আঘাত করে। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
»إذا نابكم في الصلاة شيء فليسبح الرجال، وليصفق النساء«
“যখন সালাতে তোমাদের কোনো সমস্যা হয়, তখন পুরুষরা যেন তাসবীহ বলে এবং নারীরা যেন তাসফীক করে (হাতকে হাতের উপর মারে)”। সালাতে কোনো সমস্যা হলে নারীদের জন্য তাসফীক করা বৈধ। সমস্যার এক উদাহরণ: ইমামের ভুল করা, কারণ নারীর শব্দ পুরুষের জন্য ফিতনার কারণ হয়, তাই তাকে হাতে তাসফীক করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কথা বলার নয়।
ইমাম সালাম ফিরালে নারীরা দ্রুত মসজিদ ত্যাগ করবে, পুরুষরা বসে থাকবে, যেন পুরুষরা তাদের সাক্ষাত না পায়। কারণ, উম্মে সালামাহ বর্ণনা করেন,
«أَنَّ النِّسَاءَ فِي عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كُنَّ إِذَا سَلَّمْنَ مِنَ المَكْتُوبَةِ، قُمْنَ وَثَبَتَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَنْ صَلَّى مِنَ الرِّجَالِ مَا شَاءَ اللَّهُ، فَإِذَا قَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَامَ الرِّجَالُ».
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে ফরযের সালাম শেষে নারীরা দাঁড়িয়ে যেত আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও যেসব পুরুষ তার সাথে সালাত পড়েছে বসে থাকত, যতক্ষণ আল্লাহ চাইতেন। যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠতেন তারাও উঠত।”[4]
ইমাম যুহরী রহ. বলেন: “আল্লাহ ভালো জানেন, তবে আমরা তার কারণ হিসেবে মনে করি নারীরা যাতে বাড়ি চলে যেতে সক্ষম হয়”।[5]
আর ইমাম শাওকানী তাঁর নাইলুল আওত্বার গ্রন্থে (২/৩২৬) বলেন, এ হাদীস থেকে বুঝা যায়, ইমামের জন্য মুস্তাহাব হচ্ছে মুক্তাদীদের অবস্থা খেয়াল রাখা, অন্যায় বা হারামে পতিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে তা থেকে সাবধানতা অবলম্বন করা, সন্দেহমূলক কিছু ঘটার সম্ভাবনা থাকলে তা থেকে দূরে থাকা, ঘর তো দূরের কথা রাস্তা-ঘাটেও নারী-পুরুষের মধ্যে মেলামেশা হওয়ার বিষয়টি অপছন্দনীয় হিসেবে বিবেচনা করা।
ইমাম নাওয়াওয়ী তাঁর আল-মাজমূ‘ গ্রন্থে (৩/৪৫৫) বলেন, আর মহিলারা জামাতে সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয়ে পুরুষদের থেকে ভিন্ন:
এক. পুরুষদের মত জামাতে সালাত আদায় করা তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়।
দুই. তাদের মহিলা ইমাম তাদের মাঝ বরাবর দাঁড়াবে (সামনে নয়)
তিন. মহিলা যদি একজন হয় তবে সে পুরুষের পিছনে দাঁড়াবে, পুরুষের পাশে নয়, যা পুরুষের বিধান থেকে ভিন্নতর।
চার. যখন মহিলারা পুরুষদের সাথে সালাত আদায় করবে তখন তাদের শেষ কাতার প্রথম কাতার থেকে উত্তম।’... শেষ।
এ সব কিছু থেকে জানা গেল যে, নারী-পুরুষদের মেলামেশা হারাম।
[2] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৯৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৬০; তিরমিযী, হাদীস নং ২৩৪; নাসাঈ, হাদীস নং ৮০১; আবু দাউদ, হাদীস নং ৬১২; মালিক, হাদীস নং ৩৬২; দারেমী, হাদীস নং ১২৮৭
[3] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৪০; তিরমিযী, হাদীস নং ২২৪; নাসাঈ, হাদীস নং৮২০’ আবু দাউদ, হাদীস নং ৬৭৮; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১০০০; আহমদ: (২/৪৮৫); দারেমী, হাদীস নং ১২৬৮
[4] বুখারী, হাদীস নং ৮৬৬
[5] সহীহ বুখারী, দেখুন: আশ-শারহুল কাবীর আলাল মুকনি‘: (১/৪২২)