ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
পবিত্র বাইবেল পরিচিতি ও পর্যালোচনা ষষ্ঠ অধ্যায় - ঈশ্বর ও নবীগণ বিষয়ক অশোভনীয়তা ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.)
৬. ১. মহান স্রষ্টা বিষয়ক অশোভনীয়তা

আধুনিক বাইবেল গবেষকরা বাইবেলের মধ্যে বিদ্যমান অযৌক্তিক বা অশোভন অনেক তথ্য উপস্থাপন করেন। ‘Bible Absurdities’: বাইবেলীয় অযৌক্তিকতা, ‘Bible Vulgarities & Obscenities’: বাইবেলীয় অশিষ্টতা ও অশ্লীলতা, ‘Bible Atrocities’: বাইবেলীয় নৃশংসতা ইত্যাদি শিরোনামে তারা বিষয়গুলো আলোচনা করেন। পাঠক এ তিনটা শিরোনাম লেখে ইন্টারনেটে অনুসন্ধান করলে অথবা তথ্যসূত্রে প্রদত্ত বিভিন্ন ওয়েবসাইটে প্রবেশ করলে এ বিষয়ে আরো অনেক তথ্য জানতে পারবেন। আমরা শুধু বাইবেলের সুনির্দিষ্ট উদ্ধৃতিসহ তথ্য নির্ভর কিছু বিষয় উল্লেখ করব, যদিও সমালোচকরা অনেক ঢালাও কথাও বলেছেন। যেমন, আমেরিকার প্রসিদ্ধ সমাজসংস্কারক রবার্ট ইনগেরসল বলেন: “If a man would follow, today, the teachings of the Old Testament, he would be a criminal. If he would strictly follow the teachings of the New, he would be insane.” ‘‘বর্তমানে যদি কোনো মানুষ পুরাতন নিয়মের শিক্ষা অনুসরণ করে তবে সে একজন অপরাধীতে পরিণত হবে। আর যদি কেউ নতুন নিয়মের শিক্ষা অনুসরণ করে তবে সে উন্মাদে পরিণত হবে।’’[1]

‘নাস্তিক প্রজনক’ (The Atheist Maker) প্রবন্ধে গ্যারি ডেভানি লেখেছেন:

“The greatest Atheist Maker on planet Earth is the Bible itself. If you are a sane, logical and reasonable Human Being, knowing these selected Bible Chapters & Verses that your Bible documents may make you an Atheist. Ask yourself how you could possibly believe in, support, promote and finance the Biblical God documented in these selected Bible C&Vs. Often, in Bible C&V debate, a believer will say: I will ask my preacher what the Bible says. I suggest that you do not check out the Bible with your preacher. I suggest that you check out your preacher with the Bible. Do not believe me or any other man. Read and learn what the Bible documents, C&V, for yourself.”

‘‘পৃথিবী নামক গ্রহের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ নাস্তিক প্রজনক স্বয়ং বাইবেল। আপনি যদি সুস্থ মস্তিষ্ক, যৌক্তিক ও দায়িত্বশীল মানুষ হন এবং এখানে উদ্ধৃত বাইবেলের বক্তব্যগুলো আপনার নিজের বাইবেলে দেখে নিশ্চিত হয়ে নেন তবে হয়ত আপনার বাইবেলটাই আপনাকে নাস্তিক বানিয়ে ফেলবে। আপনি নিজেকেই প্রশ্ন করুন, অধ্যায় ও শ্লোক নির্ধারিত এ কথাগুলো যে ঈশ্বরের কথা প্রমাণ করছে সে ঈশ্বরকে আপনি কিভাবে বিশ্বাস করবেন, সমর্থন করবেন, প্রচার করবেন এবং অর্থায়ন করবেন?

অধ্যায় ও শ্লোক নির্ধারিত উদ্ধৃতিসহ বাইবেলীয় বিতর্কে অনেক সময় বিশ্বাসী ব্যক্তি বলেন, বাইবেল কি বলে সে বিষয়ে আমি আমার ধর্মপ্রচারক বা পাদরিকে জিজ্ঞাসা করে জেনে নিব। আমার পরামর্শ, আপনি প্রচারককে দিয়ে বাইবেল যাচাই করবেন না। আমার পরামর্শ যে, আপনি বাইবেল দিয়ে প্রচারককে যাচাই করুন। আপনি আমাকে বা অন্য কোনো মানুষকে বিশ্বাস করবেন না। আপনি নিজেই পড়ুন ও শিখুন, অধ্যায় ও শ্লোক নির্ধারিত বক্তব্যগুলো দ্বারা বাইবেল কি প্রমাণ করছে।’’[2]

বাইবেলীয় অশোভনীয়তা বিষয়ক আলোচনা আমরা তিনটা অধ্যায়ে বিভক্ত করেছি: (১) ঈশ্বর ও নবীগণ (২) যীশু ও প্রেরিতগণ (৩) অযৌক্তিকতা ও অশালীনতা। এ অধ্যায়ে আমরা ঈশ্বর ও নবীগণ প্রসঙ্গ পর্যালোচনা করছি।

৬. ১. মহান স্রষ্টা বিষয়ক অশোভনীয়তা

সকল ধর্মের মূল বিষয় মহান স্রষ্টার সাথে তাঁর সৃষ্টির গভীরতম ভালবাসার সম্পর্ক তৈরি করা। বিশ্বাস ও ইবাদতের মাধ্যমে এ ভালবাসা গভীর থেকে গভীরতম হয়। আর এজন্য সকল ধর্মগ্রন্থে মহান স্রষ্টার মহত্ত্ব, মর্যাদা, করুণা, সেণহ, ক্ষমা, উদারতা ও তাঁর মহান গুণাবলি বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। যেন এ সকল বিষয় পাঠ ও অনুধাবনের মাধ্যমে ধার্মিকের বিশ্বাস ও ভালবাসা গভীর হয়। বাইবেলেও মহান স্রষ্টার গুণাবলি, মর্যাদা, প্রেম, উদারতা ইত্যাদি বিষয়ে অনেক সুন্দর কথা বিদ্যমান। কিন্তু এগুলোর পাশাপাশি মহান স্রষ্টার বিষয়ে অনেক অশোভন, অশালীন ও বিবেক বিরোধী বক্তব্য বিদ্যমান। এ সকল অশোভন বক্তব্য পাঠককে ক্ষুব্ধ ও অবিশ্বাসী করে তোলে।

এ প্রসঙ্গে liberalslikechrist.org ওয়েবসাইটের একটা প্রবন্ধের শিরোনাম ‘খ্রিষ্টানরা কিভাবে এ ঈশ্বরকে ভালবাসে?’ (How can Christians love this god)? ‘আপনার ঈশ্বর কি আপনার ইবাদতের যোগ্য’ (Does your God deserve your worship)?[3] এছাড়া আগ্রহী পাঠক ইন্টারনেটে নিম্নের পৃষ্ঠাগুলো দেখতে পারেন:

http://www.slideshare.net/dralamin/vulgarities-in-the-bible-proves-its-distortion.

http://callingchristians.com/2011/12/23/29-sexually-explicit-profane-and-dirty-stories-and-verses-in-the-bible/

ঈশ্বর বিষয়ে বাইবেলের মধ্যে বিদ্যমান অশোভন তথ্যের আধিক্যের কারণে বাইবেল সমালোচক গ্যারি ডেভানি একটা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন যে, বাইবেলের ঈশ্বর কোনো ভাল কাজ করেছেন বলে কেউ প্রমাণ করতে পারবে না। তিনি লেখেছেন:

“The DeVaney Challenge. Other than the myth of creation, what ‘good’ did the Biblical God do for someone without hurting someone else? Get out a notepad and see if you can put down 5 good things that the Biblical God did, C&V, for people without hurting some one else. Bet you can't. If that be the case, how do you claim the Biblical God to be a ‘good’ God?”

‘‘ডেভানির চ্যালেঞ্জ। সৃষ্টির কাহিনী ছাড়া বাইবেলীয় ঈশ্বর আর কী ভাল কাজ করেছেন? অন্য কারো ক্ষতি না করে কারো জন্য তিনি কী ভাল কাজ করেছেন? একটা নোটপ্যাড হাতে নিন এবং নিজেই চেষ্টা করে দেখুন! বাইবেলীয় ঈশ্বর কোনো মানুষের ক্ষতি না করে অন্য মানুষদের জন্য কোনো  ভাল কাজ করেছেন বলে আপনি বাইবেলের অধ্যায় ও শ্লোক নির্ধারণ করে ৫টা ঘটনা প্রমাণ করুন। আমি বাজি ধরে বলছি, আপনি পারবেন না। এটাই যদি হয় বাস্তবতা, তবে আপনি কিভাবে দাবি করবেন যে, বাইবেলীয় ঈশ্বর একজন ‘ভাল’ ঈশ্বর?’’[4]

এক ব্যক্তি যীশুকে ‘সৎ গুরু’/ ওস্তাদ (Good Master) বলে সম্বোধন করে। যীশু তাকে বলেন: ‘‘তুমি আমাকে ‘ভাল’ বা সৎ বলছ কেন? একজন ছাড়া কেউ ভাল নেই; তিনি ঈশ্বর (Why callest thou me good? there is none good but one, that is, God) (মথি ১৯/১৬-১৭ এবং মার্ক ১০/১৬-১৭) যীশুর এ বক্তব্য প্রসঙ্গে ডেভানি বলেন:

“Did Jesus tell the truth? Or, did Jesus lie about Himself not being good? Who do you know, by name, did the Biblical God prove to be good for? Other than the myth of creation, can you provide an evidence list whereby the Old Testament Biblical God did something good for someone without hurting someone else? Does your list prove to be short and weak? If so, why is that?”

‘‘যীশু কি এখানে সত্য বললেন? অথবা তিনি ‘ভাল’ নন বলে তিনি কি মিথ্যা বললেন? আপনি কি এমন কারো নাম জানেন যার জন্য বাইবেলের ঈশ্বর ‘ভাল’ বলে প্রমাণিত হয়েছেন? সৃষ্টির কাহিনী ছাড়া আপনি কি কোনো প্রমাণের তালিকা পেশ করতে পারেন? পুরাতন নিয়মের বাইবেলীয় ঈশ্বর কারো ক্ষতি না করে অন্য কারো ভালো করেছেন বলে কোনো তালিকা কি আপনি পেশ করতে পারেন? আপনার তালিকাটা কি সংক্ষিপ্ত ও দুর্বল? যদি তা হয় তবে কেন?’’[5]

এখানে আমরা বাইবেলের মধ্যে বিদ্যমান মহান স্রষ্টা বিষয়ক কিছু অশোভন বিষয় উল্লেখ করছি:

[1] http://www.thegodmurders.com/id119.html, http://en.wikipedia.org/wiki/Robert_G._Ingersoll
[2] http://www.thegodmurders.com/id58.html
[3] http://liberalslikechrist.org/LLC_MasterMenu.php
[4] http://www.thegodmurders.com/id58.html
[5] Did Jesus Christ Lie? http://www.thegodmurders.com/id188.html