আমরা দেখেছি যে, যীশুর বিষয়ে ইঞ্জিলগুলোতে এমন অনেক কথা লেখা যেগুলোকে সত্য বলে বিশ্বাস করলে যীশুর প্রতি কুধারণা পোষণ করতে হয়। যীশুর মাতা ও পরিবারের বিষয়েও এরূপ কিছু তথ্য ইঞ্জিলগুলোতে বিদ্যমান। মথি, মার্ক ও লূক তিনজনই উল্লেখ করেছেন যে, যীশুর মা তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতে চাইলে তিনি সাক্ষাৎ দিতে অস্বীকার করেন। উপরন্তু তার মাতৃত্বের প্রতি কটাক্ষ করে বলেন: যারা ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে তারাই আমার মা ও ভাই-বোন।
‘‘এর পরে যীশুর মা ও ভাইয়েরা সেখানে আসলেন এবং বাইরে দাঁড়িয়ে থেকে যীশুকে ডেকে পাঠালেন। যীশুর চারিদিকে তখন অনেক লোক বসেছিল। তারা যীশুকে বলল, ‘আপনার মা ও ভাইয়েরা বাইরে আপনার খোঁজ করছেন।’ যীশু বললেন: কে আমার মা, আর কারা আমার ভাই? (Who is my mother, or my brethren?) যারা তাঁকে ঘিরে বসে ছিল তিনি তাদের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘এই তো আমার মা ও ভাইয়েরা! ঈশ্বরের ইচ্ছা যারা পালন করে তারাই আমার ভাই, বোন ও মা।’’ (মার্ক ৩/৩১-৩৫, মো.-১৩। পুনশ্চ: মথি ১২/৪৬-৫০, লূক ৮/১৯-২১)
যীশুর এ কথা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, তাঁর মা ও ভাইরা ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করতেন না। এজন্য তিনি তাদের প্রতি কটাক্ষ করে বলেন: কে আমার মা? কে আমার ভাই? এরপর ব্যাখ্যা করে বুঝালেন যে, তার মা বা ভাই-বোন হতে হলে ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করতে হবে।
ইউহোন্না ৭/৫, মো.-১৩: ‘‘আসলে ঈসার ভাইয়েরাও তাঁর উপর ঈমান আনেননি।’’ মার্ক (৩/২১) লেখেছেন যে, তাঁর পরিবার তাঁকে পাগল মনে করতেন: ‘‘ইহা শুনিয়া তাঁহার আত্মীয়েরা (family) তাঁহাকে ধরিয়া লইতে বাহির হইল, কেননা তাহারা বলিল, সে হতজ্ঞান হইয়াছে (মো.-০৬: তাঁরা বললেন, ‘ও পাগল হয়ে গেছে’)’’
যীশুর প্রতি শ্রদ্ধাশীলদের দৃষ্টিতে এ সকল তথ্য ভুল ও অবিশ্বাস্য। মথির প্রথম ও দ্বিতীয় অধ্যায়ে এবং লূকের দ্বিতীয় অধ্যায়ে বর্ণিত যীশুর অলৌকিক জন্ম, জন্মের পূর্বে ও পরে মরিয়ম ও যোষেফকে ফেরেশতাদের সুসংবাদ, ইলিশাবেথের ঘরে পবিত্র আত্মায় পূর্ণ হয়ে পরিচয় লাভ, জন্মের পরে জেরুজালেমের উপাসনা ঘরে যীশুকে খ্রিষ্ট হিসেবে উল্লেখ করে ধার্মিক ব্যক্তিদের প্রশংসা ইত্যাদি বিষয়ের সাথে এ সকল বক্তব্য সাংঘর্ষিক। এগুলো সব দেখার ও জানার পরে এবং যীশুর অন্যান্য অলৌকিক কার্য দেখার পরেও তাঁর পরিবার বা তাঁর মা ও ভাইরা কিভাবে তাঁর প্রতি অবিশ্বাস করলেন? তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধাশীলদের জন্য এ কথা বিশ্বাস করাই সহজ যে, এগুলো কুসংস্কারাচ্ছন্ন অতিভক্তদের জাল গল্প যা ইঞ্জিল লেখকরা সংকলন করেছেন।