ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
পবিত্র বাইবেল পরিচিতি ও পর্যালোচনা চতুর্থ অধ্যায় - ভুলভ্রান্তি ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.)
৪. ২. ২৯. কায়াফার ভাববাদিত্ব ও ভাববাণী

যোহন/ ইউহোন্না (১১/৪৯-৫২) লেখেছেন: ‘‘কিন্তু তাদের মধ্যে এক জন, কাইয়াফা (Caiaphas), সেই বছরের মহা-ইমাম, তাদেরকে বললেন, তোমরা কিছুই বোঝ না! তোমরা বিবেচনাও কর না যে, তোমাদের পক্ষে এটা ভাল, যেন লোকদের জন্য এক ব্যক্তি মরে, আর সমস্ত জাতি বিনষ্ট না হয়। এই কথা যে তিনি নিজের থেকে বললেন, তা নয়, কিন্তু সেই বছরের মহা-ইমাম হওয়াতে তিনি এই ভবিষ্যদ্বাণী বললেন  (prophesied কেরি: তিনি এই ভাববাণী বলিলেন) যে, সেই জাতির (কি. মো.-২০০৬: ‘‘ইহুদী জাতির) জন্য ঈসা মরবেন। আর কেবল সেই জাতির জন্য নয়, কিন্তু আল্লাহর যেসব সন্তান চারদিকে ছড়িয়ে রয়েছে সেই সকলকে একত্র করার জন্যও মরবেন।

বিভিন্ন কারণে যোহনের এ কথাটা ভুল:

(ক) যোহনের কথা থেকে জানা যায় যে, মহাযাজক পদটা বাৎসরিক ছিল। কথাটা ভুল। ইহুদিদের মহাযাজক পদটা আমৃত্যু। তবে রোমানদের অধীনে থাকার সময় রোমান শাসকরা মহাযাজক নিয়োগ ও অপসারণে হস্তক্ষেপ করতেন। কায়াফা ১৮ থেকে ৩৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ইহুদিদের মহাযাজক ও প্রধান ধর্মগুরু ছিলেন।[1]

(খ) যোহনের কথা থেকে বুঝা যায় যে, ইহুদিদের মহাযাজক হলেই তিনি ভাববাদী বা নবী হবেন। এ ধারণা বাতিল।

(গ) যদি কায়াফার এ কথাটা ভাববাণী হয় তাহলে বুঝা যাবে যে, যীশুর মৃত্যু হয়েছিল শুধুমাত্র ইহুদিদের পাপ মোচনের জন্য, সমগ্র বিশ্বের পাপ মোচনের জন্য নয়। বাইবেলের পরিভাষায় ইহুদিদেরকে ‘প্রজাগণ’ (the people/ nation) এবং অ-ইহূদদিদেরকে ‘পরজাতি’ (Gentile) বলা হয়। এখানে কায়াফা বলেছেন ‘প্রজাগণের জন্য’ অর্থাৎ ইহুদি জাতির জন্য। খ্রিষ্টানদের বিশ্বাস এর বিপরীত। এজন্যই ইঞ্জিল লেখক কায়াফার কথার সাথে সংযোজন করে বলেছেন: ‘‘আর কেবল সেই জাতির জন্য নয়’’। তবে তাঁর এ ব্যাখ্যাটা ভাববাণীর সাথে সাংঘর্ষিক।

(ঘ) যোহন স্বীকার করে নিলেন যে, কায়াফা একজন নবী বা ভাববাদী ছিলেন। যে কারণে তিনি যীশুকে মুক্তিদাতা খ্রিষ্ট হিসেবে চিনতে পারেন এবং তাঁর মৃত্যুর মাধ্যমে মানব জাতির পারলৌকিক মুক্তির ভাববাণী করেন। আমরা ইতোপূর্বে বৈপরীত্য আলোচনা প্রসঙ্গে দেখেছি যে, এ ভাববাদী মহাযাজকই যীশুকে হত্যা করার নির্দেশ প্রদান করেন। তার সামনে যীশু নিজেকে ঈশ্বরের পুত্র ও খ্রিষ্ট বলে দাবি করাতে তিনি প্রচণ্ড ক্রুদ্ধ হয়ে নিজের কাপড় ছিড়ে ফেলেন এবং তাঁর মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেন। তারই সামনে যীশুকে থুথু দেওয়া হয় ও মারধর করা হয়।

যদি কায়াফার এ কথাটা ভাববাণী হয় এবং যোহন এ কথার যে অর্থ বুঝেছেন তা যদি ঠিক হয়, তবে কিভাবে কায়াফা যীশুকে ঈশ্বর নিন্দাকারী বলে ঘোষণা করলেন? তাঁর মুখে থুথু দেওয়া, তাঁকে প্রহার করার বিষয়ে তিনি কিভাবে সন্তুষ্ট থাকলেন?

আমরা ইতোপূর্বে দেখেছি যে, যোহনের এ ব্যাখ্যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমরা দেখেছি, কায়াফা ও ইহুদি ধর্মগুরুরা যীশুকে হত্যার মাধ্যমে ইহুদি জাতিকে রোমানদের অত্যাচার থেকে বাঁচাতে চেয়েছিলেন। ইহুদিরা আদিপাপ থেকে মুক্তি বা পরকালের মুক্তির জন্য যীশুকে হত্যার পরিকল্পনা করেননি। ইহুদিরা কখনোই বিশ্বাস করতেন না যে, কোনো একজন মানুষের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে অন্য কোনো মানুষ পাপমুক্তি বা মুক্তি পেতে পারে। উল্লেখ্য যে, এ মহাযাজক কায়াফাই পরবর্তী কালে যীশুর শিষ্য যোহন ও পিতরের বিচার করেছিলেন এবং শাস্তি প্রদান করেছিলেন।

[1] “Caiaphas”. Microsoft® Student 2008 [DVD]. Redmond, WA: Microsoft Corporation, 2007.