বাইবেলে বলা হয়েছে যে, স্রষ্টাকে সরাসরি ডাকলেই তিনি সাড়া দেন; কারণ তিনি তো বান্দার সকল প্রয়োজন জানেন: ‘‘তোমাদের পিতার কাছে চাইবার আগেই তিনি জানেন তোমাদের কি দরকার’’ (মথি ৬/৮)। ‘‘চাও, তোমাদের দেওয়া হবে, খোঁজ কর, পাবে, দরজায় আঘাত দাও, তোমাদের জন্য খোলা হবে।’’ (মথি ৭/৭)
এছাড়া বাইবেলে বলা হয়েছে যে, ঈশ্বরই একমাত্র ত্রাণকর্তা (saviour) এবং প্রায়শ্চিত্ত বা মুক্তিপণ দাতা (Redeemer)। কারণ মানুষের ইহলৌকিক বা পারলৌকিক সকল বিপদ বা শাস্তি তো তিনিই দেন। ত্রাণ করার অর্থ ঈশ্বরের ক্রোধ বা শাস্তি থেকে ত্রাণ করা। আর এ কথাতো সুস্পষ্ট যে, তিনি ত্রাণ না দিলে অন্য কেউ মধ্যস্থতা করে ত্রাণ বা মুক্তি দিতে পারে না। শুধু জাগতিক রাজ্য উদ্ধার বা শত্রুদের নির্যাতন থেকে মুক্তির মাধ্যম অর্থে কোনো কোনো নবী বা রাজাকে ত্রাণকর্তা (saviour) বলা হয়েছে। (২ রাজাবলি ১৩/৫; যিশাইয় ১৯/২০)। এছাড়া মানুষের ইহলৌকিক বা পারলৌকিক মুক্তির জন্য ঈশ্বর ছাড়া কোনোই ত্রাণকর্তা নেই বলে বাইবেল বারবার ঘোষণা করেছে। ঈশ্বর বলেন: ‘‘আমিই.. তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু; আমা ব্যতিরেকে আর কোন ঈশ্বরকে তুমি জানিবে না, এবং আমি ভিন্ন ত্রাণকর্তা আর কেহ নাই (there is no saviour beside me)।’’ (হোশেয় ১৩/৪) অন্যত্র ঈশ্বর বলেন: ‘‘আমি, আমিই সদাপ্রভু, আমি ভিন্ন আর ত্রাণকর্তা নাই (beside me there is no saviour)।’’ (যিশাইয় ৪৩/১১)
এভাবে বারবার বাইবেলে ঈশ্বরকেই জগতের একমাত্র ত্রাণকর্তা (saviour) ও প্রায়শ্চিত্ত ও মুক্তি প্রদানকারী (Redeemer) বলা হয়েছে। (২ শমূয়েল ২২/৩; ইয়োব ১৯/২৫; গীতসংহিতা ১৯/১৪; ৭৮/৩৫; ১০৬/২১; হিতোপদেশ ২৩/১১; যিশাইয় ৪১/১৪; ৪৩/৩; ৪৩/১১; ৪৩/১৪; ৪৪/৬; ৪৪/২৪; ৪৫/১৫; ৪৭/৪; ৪৮/১৭; ৪৯/৭; ৪৯/২৬; ৫৪/৫; ৫৪/৮; ৬০/১৬; ৬৩/৮; ৬৩/১৬; যিরমিয় ১৪/৮; ৫০/৩৪; লূক ১/৪৭; ১ তীমথিয় ১/১; ২/৩; ৪/১০; তীত ১/৩; ২/১০; তীত ৩/৪; যিহূদা ১/২৫)
এর বিপরীতে পল বলছেন, ঈশ্বরের সাড়া পেতে যীশুর মধ্যস্থতা প্রয়োজন: ‘‘কারণ আল্লাহ মাত্র এক জনই আছেন আর আল্লাহর ও মানবজাতির মধ্যে মধ্যস্থও মাত্র এক জন আছেন- তিনি মানুষ মসীহ ঈসা (there is one God, and one mediator between God and men, the man Christ Jesus)।’’ (১ তিমথীয় ২/৫-৬ মো.-১৩)
এখানে সাধু পল বললেন যে ঈশ্বর এবং তাঁর সৃষ্টির মধ্যে মধ্যস্থ প্রয়োজন এবং যীশুই সেই মধ্যস্থ। আরো বিভিন্ন স্থানে পল মধ্যস্থ (mediator)-এর প্রয়োজনীয়তা এবং যীশুই মধ্যস্থ বলে উল্লেখ করেছেন। (গালাতীয় ৩/১৯, ২০; ইব্রীয় ৮/৬, ৯/১৫, ১২/২৪) পাশাপাশি নতুন নিয়মে নতুন নিয়মে বারবার যীশুকে ত্রাণকর্তা (saviour) বলা হয়েছে। (লূক ২/১১; যোহন ৪/৪২; প্রেরিত ৫/৩১; ১৩/২৩; ইফিষীয় ৫/২৩; ফিলিপীয় ৩/২০; ২ তীমথিয় ১/১০; তীত ১/৪; ২/১৩; ৩/৬; ২ পিতর ১/১; ১/১১; ২/২০; ৩/২; ৩/১৮; ১ যোহন ৪/১৪)। অনুরূপভাবে যীশুকে প্রায়শ্চিত্তদাতা বা মুক্তিপণ দিয়ে মুক্তিদাতা (Redeemer) বলা হয়েছে (গালাতীয় ৪/৫; তীমথিয় ২/১৪)।
খ্রিষ্টান প্রচারকরা বলেন, যীশুই যেহেতু ঈশ্বর, কাজেই ঈশ্বর ছাড়া কোনো ত্রাণকর্তা নেই এবং যীশু ত্রাণকর্তা উভয় কথার মধ্যে বৈপরীত্য নেই। কিন্তু প্রশ্ন হল, যদি যীশু ঈশ্বর হন তবে তিনি কার কাছে মধ্যস্থতা করবেন? এবং কার হাত থেকে ত্রাণ করবেন? একই ব্যক্তি কি নিজেই নিজের কাছে মধ্যস্থ হতে পারে? সর্বোপরি যীশুই যদি ঈশ্বর হন তবে তাঁকে ঈশ্বর না বলে যীশু বলার অর্থ কী? আর ঈশ্বরকেই একমাত্র ত্রাণকর্তা না বলে যীশুকে ত্রাণকর্তা বলার অর্থই বা কী? যীশুকে ঈশ্বর ও মানুষের মধ্যে মধ্যস্থ বলার প্রয়োজনই বা কী?