দ্বিতীয় আরেকটা কারণে প্রথম যুগের খ্রিষ্টানরা ধর্মগ্রন্থ সংকলন বা লেখা থেকে বিরত ছিলেন। উপরন্তু তারা ধর্মগ্রন্থ বা সুসমাচার লেখে রাখা বা সংরক্ষণ করার বিরোধিতা করতেন। কারণ, তারা সুনিশ্চিতরূপে বিশ্বাস করতেন যে, অচিরেই, তাদের জীবদ্দশাতেই কিয়ামত বা পুনরুত্থান ও মহাবিচার সংঘটিত হবে। জীবিতরা রূপান্তরিত হবে এবং মৃতরা উত্থিত হবে। যীশু স্বর্গ থেকে নেমে আসবেন এবং খ্রিষ্টানদেরকে স্বর্গে নিয়ে যাবেন। তাদের মধ্যে প্রচলিত যীশু ও প্রেরিতদের বিভিন্ন বাণী ও বক্তব্য থেকেই তারা এ বিশ্বাস পোষণ করতেন। যীশুর এ সকল বাণী ও বক্তব্য বিভিন্ন সুসমাচার ও পত্রে এখনো বিদ্যমান।
যেমন যীশু এক জমায়েতে বলেন, সেখানে উপস্থিত কয়েকজন মানুষ বেঁচে থাকতেই কিয়ামত হবে। মথি ১৬/২৭-২৮: ‘‘কেননা ইবনুল-ইনসান (মানুষের সন্তান) তাঁর ফেরেশতাদের সঙ্গে তাঁর পিতার প্রতাপে আসবেন, আর তখন প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার কাজ অনুসারে প্রতিফল দেবেন। আমি তোমাদেরকে সত্যি বলছি, যারা এখানে দাঁড়িয়ে রয়েছে, তাদের মধ্যে এমন কয়েক জন আছে, যারা কোন মতে মৃত্যুর আস্বাদ পাবে না, যে পর্যন্ত ইবনুল-ইনসানকে তাঁর রাজ্যে আসতে না দেখবে।’’ (মো.-১৩)
যীশু যোহনের বিষয়ে পিতরকে বলেন: ‘‘আমি যদি ইচ্ছা করি, এ আমার আগমন পর্যন্ত থাকে, তাহাতে তোমার কি?’’ (যোহন ২১/২২) এ কথা থেকে শিষ্যরা বুঝেন যে, যোহনের মৃত্যুর পূর্বেই যীশুর পুনরাগমন হবে। আর ঘটনাক্রমে যোহন দীর্ঘ আয়ু লাভ করেন। অথবা যোহনের দীর্ঘায়ুর কারণেই এ কথাটা যীশুর নামে জালিয়াতি করে প্রচার করা হয়েছিল। যীশুর পরেও তিনি প্রায় ৭০ বছর বেঁচে ছিলেন। ফলে তাঁদের বিশ্বাস আরো জোরালো হয়। প্রতিদিনই তাঁরা কিয়ামতের অপেক্ষা করতেন।
বাইবেলের শেষ পুস্তকের ভাষায় স্বয়ং যীশুই তাদেরকে ধর্মপুস্তক মুদ্রাঙ্কিত করতে বা লেখতে নিষেধ করে বলেন: ‘‘আর দেখ, আমি শীঘ্রই আসিতেছি।... তুমি এই গ্রন্থের ভাববাণীর বচন সকল মুদ্রাঙ্কিত করিও না; কেননা সময় সন্নিকট।... আমি শীঘ্র আসিতেছি।’’ (প্রকাশিত বাক্য ২২/৭, ১০, ২০)
শিষ্যদের এ নিশ্চিত বিশ্বাসের কথা আমরা নতুন নিয়মের বিভিন্ন পত্রে দেখি। যেমন, পল লেখেছেন: ‘‘কেননা আমরা প্রভুর কালাম দ্বারা তোমাদেরকে এই কথা ঘোষণা করছি যে, আমরা যারা জীবিত আছি, যারা প্রভুর আগমন পর্যন্ত অবশিষ্ট থাকব, আমরা কোনক্রমে সেই মৃত লোকদের আগে যাব না। কারণ প্রভু স্বয়ং আনন্দধ্বনিসহ, প্রধান ফেরেশতার স্বরসহ এবং আল্লাহ্র তূরীবাদ্যসহ বেহেশত থেকে নেমে আসবেন, আর যারা মসীহে মৃত্যুবরণ করেছে, তারা প্রথমে জীবিত হয়ে উঠবে। পরে আমরা যারা জীবিত আছি, যারা অবশিষ্ট থাকব, আসমানে প্রভুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য তাদের সঙ্গে একত্রে আমাদেরও মেঘযোগে তুলে নেওয়া হবে। আর আমরা এভাবে সব সময় প্রভুর সঙ্গে থাকব।’’ (১ থিষলনীকীয় ৪/১৫-১৭, মো.-১৩)
অন্যত্র লেখেছেন: ‘‘দেখ, আমি তোমাদের এক নিগূঢ়তত্ত্ব বলি; আমরা সকলে যে মারা যাব তা নয়, কিন্তু সকলে রূপান্তরিকৃত হব; এক মুহূর্তের মধ্যে, চোখের পলকে, শেষ তূরীধ্বনির সংগে সংগে রূপান্তরিকৃত হব; কেননা সেই তূরী যখন বাজবে, তখন মৃতেরা ধ্বংসহীন জীবন নিয়ে পুরুত্থিত হবে এবং আমরা রূপান্তরিত হব।’’ (১ করিন্থীয় ১৫/৫১-৫২, মো.-১৩)
এভাবে তারা বিশ্বাস করতেন যে, অচিরেই কিয়ামত হবে। তাদের অনেকেই মরবেন না, বরং তাদের জীবদ্দশাতেই কিয়ামত শুরু হবে এবং তারা শুধু রূপান্তরিত হয়ে স্বর্গে যাবেন। কাজেই ইঞ্জিল লেখে সংরক্ষণের কথা তারা চিন্তাও করেননি।