নতুন নিয়মের অবস্থা পুরাতন নিয়মের চেয়ে মোটেও ভাল নয়। নতুন নিয়মের কোনো পুস্তকের লেখকের স্বহস্তে লেখা পাণ্ডুলিপি পাওয়া যায় না। এমনকি প্রথম প্রায় দেড় শত বছরের মধ্যে লেখা একটা পাণ্ডুলিপিও পাওয়া যায় না। দু-একটা পুস্তকের অল্প কয়েক পৃষ্ঠার প্রাচীন পাণ্ডুলিপির ভগ্নাংশ বা খণ্ডতে টুকরো (fragment) পাওয়া গেছে, যেগুলোকে খ্রিষ্টান গবেষকরা দ্বিতীয় বা তৃতীয় শতকের বলে দাবি করেন, যদিও কয়েক পৃষ্ঠার এ খণ্ডতে পাণ্ডুলিপির বয়স নির্ধারণের বিষয়টা পুরোপুরিই অনুমান নির্ভর হওয়ার কারণে গবেষকরা একমত হতে পারেন না।[1]
নতুন নিয়মের হাজার হাজার পাণ্ডুলিপি বিদ্যমান। কিন্তু সবই পরবর্তী সময়ের। নতুন ও পুরাতন নিয়মের সমন্বিত বাইবেলের প্রাচীনতম পাণ্ডুলিপির বয়স খ্রিষ্টান ধর্মগুরুদের দাবি অনুসারেই ৪র্থ শতাব্দী। অর্থাৎ যীশু ও তাঁর শিষ্যদের থেকে পরবর্তী প্রায় ৪০০ বছরের মধ্যে লেখা ‘নতুন নিয়মের’ বা ‘বাইবেলের’ কোনো পূর্ণাঙ্গ পাণ্ডুলিপি পাওয়া যায় না।[2] নতুন নিয়মের পাণ্ডুলিপি প্রসঙ্গে উইকিপিডিয়ায় বলা আছে:
“The vast majority of these manuscripts date after the 10th century. Although there are more manuscripts that preserve the New Testament than there are for any other ancient writing, the exact form of the text preserved in these later, numerous manuscripts may not be identical to the form of the text as it existed in antiquity. Textual scholar Bart Ehrman writes: "It is true, of course, that the New Testament is abundantly attested in the manuscripts produced through the ages, but most of these manuscripts are many centuries removed from the originals, and none of them perfectly accurate. They all contain mistakes - altogether many thousands of mistakes. It is not an easy task to reconstruct the original words of the New Testament.”
‘‘এ সকল পাণ্ডুলিপির অধিকাংশই দশম শতাব্দীর পরের। অন্য যে কোনো প্রাচীন পুস্তকের তুলনায় নতুন নিয়মের অনেক বেশি পাণ্ডুলিপি সংরক্ষিত রয়েছে, তবে পরবর্তীকালে লেখা এ সকল অগণিত পাণ্ডুলিপির মধ্যে যে বক্তব্য সংরক্ষিত হয়েছে তা মূল প্রাচীন বক্তব্যের সাথে এক নয় বলেই প্রতীয়মান। বাইবেলের গবেষক বার্ট ইহরম্যান লেখেছেন: এ কথা সত্য যে, যুগে যুগে লেখা অগণিত পাণ্ডুলিপির মধ্যে নতুন নিয়ম লিপিবদ্ধ। কিন্তু এ সকল পাণ্ডুলিপির অধিকাংশই মূল থেকে কয়েক শতাব্দী পরের এবং এগুলোর মধ্যে একটাও পুরোপুরি বিশুদ্ধ নয়। সকল পাণ্ডুলিপির মধ্যেই ভুল রয়েছে এবং সব মিলিয়ে হাজার হাজার ভুল। নতুন নিয়মের মূল বক্তব্য পুনরুদ্ধার করা মোটেও সহজ কাজ নয়।’’[3]
এরপর মূলপাঠ বিষয়ক সমালোচনা (Textual Criticism) প্রসঙ্গে উইকিপিডিয়া লেখেছে: “None of the original documents of the New Testament is extant and the existing copies differ from one another. ...” ‘‘নতুন নিয়মের মূল পাণ্ডুলিপিগুলোর কিছুই বিদ্যমান নেই এবং বর্তমানে বিদ্যমান কপিগুলো একটা থেকে অন্যটা ভিন্ন।... ’’[4]
প্রসিদ্ধ আমেরিকান গবেষক লেখিকা ডরোথি মারডক (Dorothy M. Murdock) যিনি ‘আচারিয়া এস (Acharya S) ছদ্মনাম বা কলম নামে বেশি প্রসিদ্ধ। বাইবেল, যীশু খ্রিষ্ট ও প্রাচীন ধর্ম বিষয়ে তার গবেষণা ও গ্রন্থাবলি সুপরিচিত যদিও তার গ্রন্থাবলির পক্ষে-বিপক্ষে বিতর্ক আছে। তিনি truthbeknown.com নামে একটা ওয়েবসাইট পরিচালনা করেন। এই ওয়েবসাইটে তার Sons of God: Krishna, Buddha and Christ Unveiled বইয়ের ‘ঐতিহাসিক যীশু?’ (The Historical Jesus?) প্রবন্ধে লেখেছেন:
“It would be impossible to date the appearance of the gospels based on the extant manuscripts, since the autographs or originals were destroyed long ago, an act that would appear to be the epitome of blasphemy, were these texts truly the precious testimonials by the Lord's very disciples themselves. Although a miniscule bit of papyrus (Rylands P52) dating to the middle of the second century has been identified speculatively as part of "John's Gospel" (18:31-33), the oldest fragments conclusively demonstrated as coming from the canonical gospels date to the 3rd century. The two verses of "John's Gospel," comprising only about 60 words, could easily be part of another, non-canonical gospel, of which there were numerous in the first centuries of the Christian era.”
‘‘বর্তমানে বিদ্যমান পাণ্ডুলিপিগুলোর উপর নির্ভর করে ইঞ্জিলগুলোর আবির্ভাব বা রচনাকাল নির্ণয় করা অসম্ভব। কারণ, লেখকের স্বহস্তলিখিত পাণ্ডুলিপি বা মূল পাণ্ডুলিপিগুলো সবই অনেক আগে বিনষ্ট হয়ে গিয়েছে। যদি যীশুর শিষ্যদের নিকট এ পু্স্তকগুলো সত্যই মূল্যবান কিছু বলে গণ্য হয়ে থাকত তবে এগুলো বিনষ্ট হওয়া ধর্মদ্রোহিতা বলে বিবেচিত হত। দ্বিতীয় শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ের বলে গণ্য ছোট্ট একটুকরা প্যাপিরাস পাণ্ডুলিপি পাওয়া গিয়েছে। এ টুকরাটাকে আনুমানিকভাবে যোহনের ইঞ্জিলের (১৮/৩১-৩৩ শ্লোক) বলে ধারণা করা হয়। এ টুকরোটা বাদে নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত স্বীকৃত ইঞ্জিলগুলোর পাণ্ডুলিপির খণ্ডতে টুকরোগুলো তৃতীয় শতাব্দীর। দ্বিতীয় শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ের যে টুকরোটাকে যোহনের ইঞ্জিলের অংশ বলে দাবি করা হয় তাতে ৬০টা শব্দ বিদ্যমান। এ শব্দগুলো সহজেই অন্য একটা ইঞ্জিলের শ্লোকের সাথে মিলে যায়, যে ইঞ্জিলটা খ্রিষ্টীয় প্রথম শতাব্দীগুলোতে বহুল প্রচলিত ছিল, কিন্তু পরবর্তীতে জাল ও বাতিল বলে গণ্য হয়েছে।’’[5]
[2] উইকিপিডিয়া, Biblical manuscript, New Testament manuscripts.
[3] উইকিপিডিয়া, Biblical manuscript, New Testament manuscripts.
[4] উইকিপিডিয়া, Biblical manuscript, New Testament manuscripts, Textual Criticism.
[5] http://www.truthbeknown.com/historicaljc.htm